জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় ছয়জনের লাশ পোড়ানোর ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় আরও এক মাস বাড়ানো হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নতুন তারিখ ধার্য করা হয়েছে আগামী ২৫ মে।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আজ সোমবার এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো.

শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

আজ এই মামলাটি ট্রাইব্যুনালের কার্যতালিকার দুই নম্বরে ছিল। মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের ধার্য দিন ছিল আজ। তবে আজ শুনানিতে প্রসিকিউশনের (রাষ্ট্রপক্ষ) পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালকে বলা হয়, লাশ পোড়ানোর আগে হত্যাকাণ্ডের একটি ভিডিও পাওয়া গেছে।

শুনানিতে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, এই মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। তবে এই হত্যাকাণ্ডের একটি নতুন ভিডিও পাওয়া গেছে। তাই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আরও এক মাস সময় প্রয়োজন।

পরে ট্রাইব্যুনাল সময়ের আবেদন মঞ্জুর করেন। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২৫ মে তারিখ ধার্য করেন।

মামলার আসামি হিসেবে সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী, গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন, সাবেক উপপরিদর্শক মালেক ও সাবেক কনস্টেবল মুকুল চোকদারকে আজ কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

শুনানি শেষে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম। তিনি বলেন, তদন্ত করতে গিয়ে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটনের সময়ের একটি ভিডিও পাওয়া গেছে। সেটা যাচাইবাছাই করা হচ্ছে।

মিজানুল ইসলাম আরও বলেন, আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনার মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন আজ ধার্য ছিল। তাঁরা যখন তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করছিলেন, সেই মুহূর্তে হঠাৎ করে একটা তথ্য আসে। তাঁরা একটা ভিডিও শনাক্ত করতে পেরেছেন। তাঁরা উদ্ধারও করেছেন। এতে দেখা গেছে যে, এইখানে (আশুলিয়ায়) কারা কীভাবে হত্যা করেছেন। সেই বিষয়টা তাঁদের সামনে এসেছে। এ বিষয়ে তদন্ত সমাপ্ত করার জন্য কিছুদিন সময় দরকার।

এ সময় একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সব মিলিয়ে সময়ক্ষেপণ হয়ে যাচ্ছে নাকি? একটি ভিডিও একেবারে শেষের দিকে এসে পেলেন, ৮ মাস পেলেন না। এর ব্যাখ্যা কী?

আরও পড়ুনআশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় পুলিশ পরিদর্শক আরাফাত গ্রেপ্তার১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

জবাবে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্ত একটা চলমান প্রক্রিয়া। এখন কোনো তথ্য যদি আমাদের সামনে আসে নতুন করে, সেই তথ্য ইগনোর (উপেক্ষা) করে তো আমরা তদন্ত রিপোর্ট (প্রতিবেদন) দাখিল করতে পারব না। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত রিপোর্টের জন্য এবং ন্যায়বিচারের স্বার্থে এই সময়টা প্রয়োজন। এটা বিচারকে বিলম্বিত করার জন্য না, ন্যায়বিচারকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য।’

আরও পড়ুনআশুলিয়ায় ভ্যানে লাশ পোড়ানো: সাবেক এমপি সাইফুল ও চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল ইসল ম প রস ক র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ