পাঠাগার থেকে লুট হওয়া বই ফেরত পেলো কর্তৃপক্ষ
Published: 28th, April 2025 GMT
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর অভয়ারণ্য পাঠাগার থেকে লুট করে নিয়ে যাওয়া পাঁচ শতাধিক বই অবশেষে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাঠাগার থেকে লুট করা এসব বইয়ের মধ্যে সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ কোনো বই পাওয়া যায়নি।
রোববার (২৭ এপ্রিল) রাতে বই লুট করা ব্যক্তিরা, পাঠাগার কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, গণমাধ্যমে এসব নিয়ে আর কোনো খবর প্রচার করা যাবে না। সোমবার থেকে পাঠাগার যথারীতি খোলা থাকবে। ভুল বোঝাবুঝি থেকেই এমন ঘটনা ঘটেছে। এরপর থেকে সবাই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখবেন।
বৈঠকের বিষয়ে অভয়ারণ্য পাঠাগারের সম্পাদক সঞ্জয় চন্দ্র ঘোষ বলেন, স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছেন। যারা বই নিয়েছিল তারা আমাদের কাছে ভুল স্বীকার করেছেন। পাঠাগার একটি পবিত্র স্থান। জ্ঞান, বিজ্ঞান ও ধর্মচর্চার জন্য পাঠাগারে সব ধরনের বইয়ের সমাহার থাকবে। তারা লুট হওয়া ৪ থেকে ৫ বস্তা বই ফেরত দিয়েছে।
বৈঠক শেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো.
ইউএনও শাহিন মাহমুদ বলেন, উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা হয়েছে। সভায় উভয়পক্ষই ভবিষ্যতে পাশাপাশি থেকে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। পরে অভয়ারণ্য পাঠাগারে গিয়ে সকলের উপস্থিতিতে বইগুলো কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হয়।
জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভার শুরুতে ইউএনও মো. শাহীন মাহমুদ উভয় পক্ষকে ভুল–বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানান। পরে পাঠাগারের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক দুর্জয় চন্দ্র ঘোষ কীভাবে বইগুলো পাঠাগার থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল, তার বর্ণনা তুলে ধরেন। পরে যেসব ব্যক্তি বই লুটে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাদের পক্ষ থেকে ধনবাড়ী উপজেলা খেলাফত যুব মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রব্বানী ওরফে রিশাদ বক্তব্য দেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ যুব খেলাফত মজলিসের ধনবাড়ী উপজেলা সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রব্বানী ওরফে রিশাদ আমীন অভয়ারণ্য পাঠাগার নিয়ে গত ২৪ এপ্রিল সকাল ১০টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন।
সেখানে তিনি লিখেছেন, ধনবাড়ীতে নাস্তিক্যবাদের কোনো জায়গা হবে না। এটাই ফাইনাল বক্তব্য আমাদের। নাস্তিক বানানোর এক কারখানার সন্ধান পেয়েছি আমরা। অতিদ্রুত আপনাদের কারখানায় তালা লাগিয়ে ধনবাড়ী ছাড়ুন। অনেকদিন অবৈধভাবে সরকারি জায়গা দখল করে ভণ্ডামি করেছেন আপনারা। আর এই সুযোগ পাচ্ছেন না। কথা ক্লিয়ার।
তার ফেসবুক পোস্ট দেওয়ার দিন রাত ৮টার দিকে খেলাফত মজলিসের যুব সংগঠনের ২০-২৫ জন নেতাকর্মীরা বাঁশহাটি এলাকায় অভয়ারণ্য পাঠাগারে হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেছে পাঠাগার কর্তৃপক্ষ।
এ সময় পাঠাগারে থাকা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, হুমায়ুন আহমেদ, হুমায়ুন আজাদ, জাফর ইকবালসহ কয়েকজন লেখকের পাঁচ শতাধিক বই বস্তায় ভরে নিয়ে যান।
এরপর খেলাফত নেতা গোলাম রব্বানী ওরফে রিশাদ আমীন ফেসবুকে আরেকটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লেখেন, জয়বাংলা কর্মসূচি। বি. দ্র. যাদের বোঝা দরকার তারা বুঝতে পারছে।
বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে খেলাফত নেতাকর্মীরা বইগুলো ইউএনও কার্যালয়ে জমা দেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ল টপ ট উপজ ল ধনব ড় বইগ ল
এছাড়াও পড়ুন:
‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি
ঠিকমতো চোখে দেখে না আট বছরের শিশু মরিয়ম। মাদ্রাসা থেকে ঘরে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় সে। নানা ঘটনাচক্রে একসময় পৌঁছায় কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার ( ইউএনও) কার্যালয়ে। পরে ইউএনওর সহায়তায় ঘরে ফিরেছে শিশুটি। ঘরে ফেরার আগে তার ‘লাল পরি’ সাজার ইচ্ছাপূরণও হয়েছে।
শিশু মরিয়মের বাড়ি কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় পূর্ব পোকখালী চরপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। সেখানেই একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। গত বুধবার মাদ্রাসা ছুটির পর মায়ের জন্য অপেক্ষায় ছিল সে। তবে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তি তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় কক্সবাজার সদরে।
ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মরিয়ম কক্সবাজার পৌরসভার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় চোখেমুখে ভয় আর আতঙ্কের ছাপ নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিল। কৌতূহলী এক পথচারী কথা বলে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। ওই পথচারী মরিয়মকে নিয়ে যান তিন কিলোমিটার দূরে উপজেলা পরিষদের কার্যালয়ে। সেখান থেকে এক আনসার সদস্য মরিয়মকে ইউএনও কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।
ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী এ সময় শিশু মরিয়মের সঙ্গে কথা বলে তার বিস্তারিত ঠিকানা জানার চেষ্টা করেন। শিশুটি কেবল তার বাড়ি ঈদগাঁওয়ের পোকখালী এতটুকুই বলতে পারছিল। পরে ঈদগাঁওয়ের ইউএনওর মাধ্যমে শিশুটির বাড়ির ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়।
কাপড় কিনে দেওয়ার সময় মরিয়ম বলল, সে লাল পরি সেজে বাড়ি ফিরবে। তাকে লাল জামা, লাল চুড়ি, লাল লিপস্টিক ও লাল ওড়না দিয়ে লাল পরি সাজানো হয়। নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী, ইউএনও, কক্সবাজার সদর উপজেলাশিশুটি প্রথমে পাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছিল বলে সন্দেহ ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিনের। তিনি বলেন, আলাপে শিশুটি জানায়, সে তার তিন-চার বছর বয়স পর্যন্ত ভালোভাবেই চোখে দেখত। এরপর থেকে ক্রমে তাঁর চোখের আলো ঝাপসা হতে শুরু করে। এখন সে তেমন দেখতে পায় না। তার বাবা মারা গেছেন। মা ও বড় ভাই অন্ধ। পরিবারে অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া একটি বোন আছে, সে–ই কেবল চোখে দেখতে পায়। ঘরের কাজ সব বোনই সামলায়। তাদের পরিবার থাকে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে।
শিশুটির কাছ থেকে চোখের বিষয়টি জেনে তাকে কক্সবাজার শহরের পানবাজার এলাকার কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান ইউএনও। তিনি বলেন, ‘শিশুটির সঙ্গে কথা বলে মনে হলো তার চোখের সমস্যা এত জটিল না। হাসপাতালে নেওয়ার পর চক্ষুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিমল চৌধুরী তার চোখের পরীক্ষা করেন। এরপর বিনা মূল্যে শিশু মরিয়মকে চশমা ও এক মাসের ওষুধ কিনে দেওয়া হয়। চশমা চোখে দিয়ে সে জানিয়েছে, আগের চেয়ে অনেক ভালো দেখতে পাচ্ছে।’
শিশুটিকে মায়ের হাতে তুলে দেন কক্সবাজার সদরের ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী