শুল্ক আরোপ নিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তাকে ফোন করেছিলেন বলে যে দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তা প্রত্যাখ্যান করেছে চীন। সোমবার বেইজিং জানিয়েছে, শি জিনপিং সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে কথা বলেননি। এমনকি দুই দেশের মধ্যে শুল্কযুদ্ধ মেটাতে কোনো আলোচনাও হচ্ছে না। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন সোমবার সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছে। খবর-সিএনএন

এ সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টাইম ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আমাকে ফোন করেছেন। আমি মনে করি না যে, তাঁর পক্ষ থেকে এটা কোনো দুর্বলতার ইঙ্গিত। তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে চীনের সঙ্গে শুল্ক চুক্তি সম্পন্ন হবে।’ শুক্রবার তাঁর এ সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়। শুল্ক নিয়ে দুই দেশের মধ্যে চলা উত্তেজনার মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প এ কথা জানালেও কবে-কখন শি জিনপিং তাঁকে ফোন করেছিলেন সে বিষয়টি জানাননি। ট্রাম্পের ওই বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তখন তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্যও করেনি। 

এর দু’দিন পর গুও জিয়াকুন এক নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমি যতদূর জানি, দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে সম্প্রতি ফোনে কোনো কথা হয়নি। আমি আবারও বলতে চাই, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শুল্ক ইস্যু নিয়ে কোনো আলোচনা বা দরকষাকষি চলছে না।’

কয়েকদিন ধরে চীনের ওপর শুল্ক নিয়ে সুর নরম করে আসছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, বেইজিংয়ের ওপর শুল্ক ক্রমেই উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে। তবে একেবারে শূন্য হবে না। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। 

ট্রাম্প বলেন, ‘১৪৫ শতাংশ অনেক বেশি। নতুন শুল্ক ততটা উঁচু হবে না, এমনকি এর ধারে-কাছেও হবে না। এটা উল্লেখযোগ্য হারে কমানো হবে। তবে শূন্যে পৌঁছাবে না।’  এর আগে ওই দিন সকালে দুই দেশের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে কথা বলেন মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট। তিনি বলেন, উচ্চ শুল্ক চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যকে কার্যকরভাবে বন্ধ করে দেবে।

দ্য ইকোনমিক টাইমস জানায়, বাণিজ্যযুদ্ধকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের মধ্যে ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বেইজিং। এ প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প বলেন, বর্তমানে চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক অনেকটাই বেশি। যদি বেইজিংয়ের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হয়, তবে এ শুল্ক তিনি কমিয়ে আনবেন। এ বিষয়ে বেইজিংয় বলছে, কার্যত বাণিজ্যযুদ্ধে কেউ জয়ী হয় না। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জাইকুন বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ করতে চাই না। পাশাপাশি আমরা যুদ্ধে ভীতও নই।’ 

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সতর্ক করে বলেছেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্য বিরোধের মধ্যে আরোপিত শুল্ক বিশ্বের সব দেশের স্বার্থকে হুমকির মধ্যে ফেলেছে। গতকাল বুধবার আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের সঙ্গে এক বৈঠকে শি বলেন, ‘বাণিজ্যযুদ্ধ সব দেশের বৈধ অধিকার ও স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করে, বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক শৃঙ্খলাকে প্রভাবিত করে।’

রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া জানায়, শি বলেছেন, চীন জাতিসংঘের ভিত্তিতে থাকা আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা ও আইনের ওপর নির্ভর করে শৃঙ্খলা রক্ষা, নিজ নিজ বৈধ অধিকার ও স্বার্থকে দৃঢ়ভাবে রক্ষা করা এবং আন্তর্জাতিক ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচার রক্ষায় আজারবাইজানের সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক। একে অপরের রপ্তানিতে শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপের পর বিশ্বের দুটি বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে বাণিজ্য কার্যকরভাবে স্থবির হয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে প্রেসিডেন্ট শি এ মন্তব্য করলেন। 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন চীনের বেশির ভাগ চীনা পণ্যে ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, যার প্রতিক্রিয়ায় চীন মার্কিন রপ্তানিতে ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এ অবস্থায় বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তারা ২০২৫ সালের প্রবৃদ্ধির অনুমান ৩ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ দশমিক ৮ শতাংশ করেছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র শ ল ক আর প শ ল ক আর প ফ ন কর ছ র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

সন্তানের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ বিশ্বাস

বাবা সন্তানের ওপর ছায়ার মতো স্নেহময় এক উপস্থিতি। নিঃশর্ত ভরসার প্রতীক। সন্তানের ভবিষ্যৎ গঠনের প্রয়োজনে নিজের বর্তমান, এমনকি নিজের স্বপ্নও নীরবে উৎসর্গ করে দিতে পারেন যিনি– আজ তাদের স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানানোর দিন। বাবা দিবস উপলক্ষে সমতা’র বিশেষ আয়োজন। গ্রন্থনা শাহেরীন আরাফাত

আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা বৃহত্তর বরিশালে। এখন সেই জায়গাটা পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি পৌরসভার সমুদয়কাঠি গ্রাম। তখনকার সামাজিক পরিসরে আমাদের পরিবারের অবস্থা সাধারণ মানুষের চেয়ে একটু ভালো ছিল। আমার বাবা বিজয় কুমার আইচ তখন পিরোজপুরে কাজ করতেন। তাঁর রেশনের দোকান ছিল। প্রতি শনিবার বাড়ি আসতেন। আমরা বাবার আশায় বসে থাকতাম। এটি ছিল আমাদের জন্য একরকম আশীর্বাদের মতো।
বাবার একটি ব্যবসাও ছিল। এ থেকে মূলত আমাদের পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে। গ্রামের সাধারণ মানুষের চেয়ে সম্ভবত বাবার জ্ঞান বা বোধ উন্নততর ছিল। তাঁর ব্যক্তিত্বের জন্য দশ গ্রামের লোকজন তাঁকে মানত। গ্রামে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝগড়া লেগেই থাকত। বাবার সঙ্গে কথা না বলে কেউ থানা-পুলিশ করতে যেত না। বাবা সবাইকে খুব বুঝিয়ে বলত– মামলা করলে কে জিতবে, কে হারবে– এটি অনেক পরের কথা। মামলা নিয়ে বরিশাল-পিরোজপুরে দৌড়াদৌড়ি করতে করতে দুই পক্ষই নিঃস্ব হয়ে পড়বে। তারচেয়ে বরং তোমরা নিজেরা মিটমাট করে ফেল।
গ্রামের পণ্ডিতরা তখন তালপাতায় অ-আ-ক-খ শেখাতেন হাত ধরে ধরে। আমার সেটি একদম পছন্দ হতো না। বাবা কী করলেন, তিনি একটা স্লেট ও পেন্সিল দিয়ে ছবি আঁকতে শুরু করলেন। অ-আ-ক-খ দিয়ে যত ছবি আঁকা হয়, তা শেখাতেন। এর মধ্যে আমার যে ছবিটা পছন্দ হতো, সেটি আমি মনের মধ্যে গেঁথে নিতাম। যার ফলে বাবার মাধ্যমে অত্যন্ত আনন্দদায়ক এক শিক্ষা পেয়েছি আমি। 
আমার বাবারা ছিলেন ৪ ভাই। এর মধ্যে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় দু’জন পশ্চিমবঙ্গে চলে যান। আমার বাবা ও এক কাকা বাড়ি ছেড়ে যাননি। আমরা ছিলাম ৬ ভাই ৩ বোন। কাকাতো ভাই ৪ জন, বোন একজন। মোট ১৪ ভাইবোন। কাকা কম বয়সেই গত হন। বিলাসী জীবন আমাদের ছিল না। তবে গ্রামের মানুষের কাছে আমরা ছিলাম বড়লোক। পরিবারে অনেক সদস্য থাকলেও খাবারের অভাব হতো না কখনোই। এমনকি দুর্ভিক্ষের মতো অবস্থায়ও খাবারের কষ্ট করতে হয়নি। আমাদের একটা গুদামঘর ছিল। সেখানে বাবা পাশের বন্দর কাউখালী থেকে সারা বছরের চাল, ডাল, পাউডার দুধ, চিনি, লবণ, গুড় এনে ড্রামে ভরে রাখতেন। বাইরে যত সংকটই থাকুক না কেন, বছরজুড়ে খাবারের অভাব হতো না। সমস্যা হতো ঝড়ের সময়। উপকূলীয় অঞ্চলে এমন ঝড় মাঝে মাঝেই আসত। কখনও ঘরের চাল উড়ে গেলে আমরা সমস্যায় পড়ে যেতাম। 
অন্যদের সামনে বাবা নিজের অবস্থানের জন্যই বেশি হাসি-তামাশা করতেন না। যখন আমাদের সঙ্গে থাকতেন, তখন তিনি একজন সাধারণ মানুষের মতো হাসি-খুশি থাকতেন। তখনকার বাবাদের আমরা মারধর করতে দেখেছি, এমনকি খড়ম দিয়ে পেটাতে দেখেছি। বাবা আমার গালে জীবনেও একটা চড় মারেনি। কোনো ভাইবোনকেও মারধর করতে দেখিনি। তখন হয়তো আরও এমন বাবা ছিলেন। তবে গ্রামে আমি এমন বাবা আর দেখিনি। সন্তানের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ বিশ্বাস। সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরলেও তিনি কখনও জিজ্ঞেস করতেন না, কেন দেরি করে ঘরে ফিরেছি। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চাকরির প্রস্তুতির জন্য সোশ্যাল মিডিয়া যেভাবে ব্যবহার করবেন
  • ইসরায়েলি যুদ্ধযন্ত্রকে থামাইতেই হইবে
  • বন্ধু হওয়ার সুযোগ দিন, শত্রু নয়
  • ৬ কোটির ক্লাবে শাকিব খানের ‘তাণ্ডব’
  • একদিনে আয় ৮১ লাখ, ৬ কোটির ক্লাবে শাকিব খানের তাণ্ডব!
  • ফুসফুসের সুরক্ষায় যা করণীয়
  • লন্ডন বৈঠকের পর এখন বিএনপির দৃষ্টি নির্বাচনে , কী ভাবছে অন্য দলগুলো
  • সন্তানের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ বিশ্বাস
  • হামলার আগে ইরানে গোপন অভিযান চালায় মোসাদ