জাকসুর তফসিল ঘোষণার দাবিতে বাগছাসের বিক্ষোভ
Published: 29th, April 2025 GMT
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) দ্রুততম সময়ে জুলাই হামলাকারীদের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন ও ৩০ এপ্রিলের মধ্যে জাকসুর তফসিল ঘোষণার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৪টায় সংগঠনটির জাবি শাখার উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন রাস্তা থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়ে বটতলা অতিক্রম করে রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করা হয়েছে।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী আহসান লাবীব বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের পরে যে প্রশাসন গঠিত হয়েছে, তার কাছে আমাদের বারবার বিভিন্ন দাবি নিয়ে আসতে হচ্ছে, এটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। প্রশাসন বারবার জাকসু ও জুলাইয়ের বিচার নিয়ে টালবাহানা শুরু করেছে।”
তিনি বলেন, “একদল মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থী চাচ্ছে না নিয়মিত শিক্ষার্থীরা দ্বারা জাকসু গঠিত হোক। তারা ভালো করেই জানে নিয়মিত শিক্ষার্থীরা ক্ষমতায় গেলে তারা টেন্ডারবাজি করতে পারবে না, চাঁদাবাজি করতে পারবে না। তাই প্রশাসনকে মনে করিয়ে দিতে চাই, আপনারা যদি শিক্ষার্থীবান্ধব না হন, আপনাদের অবস্থাও খুব বেশি ভালো হবে না।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, “প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলতে চাই, আপনারা একাধিকবার অছাত্রদের হল থেকে বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ লক্ষ্য করিনি। এতে পরিষ্কার যে, আপনারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণার পথেই হাঁটছেন।”
তিনি বলেন, “আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছি, বিগত দিনে যেমন শিক্ষার্থীরা প্রতারিত হয়েছে, এবার আর আমরা প্রতারিত হতে চাই না। আগামীকাল যদি তফসিল ঘোষণা না করা হয়, তাহলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে সর্বত্র আন্দোলন গড়ে তুলব।”
৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলাম লিমন বলেন, “জাকসুকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগকে পুনর্বাসনের একটা চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আট মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো গণ অভ্যুত্থানের বিচার করেনি প্রশাসন। যখনই জাকসুর তফসিল ঘোষণার সময় আসে, তখনই প্রশাসন একটা টালবাহানা শুরু করে দেয়।”
তিনি বলেন, “আগামীকাল জাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতেই হবে। যদি আগামীকাল তফসিল ঘোষণা না করে কোনো রকম টালবাহানা করার চেষ্টা করেন, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা দেখে নেবে আপনারা কিভাবে ওই গদিতে বসে থাকেন।”
৫১ ব্যাচের শিক্ষার্থী নাদিয়া রহমান বলেন, “প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে কোনো না কোনোভাবে জাকসু পেছানোর চেষ্টা করেছে। ক্যাম্পাসে জাকসু না থাকায় আপনারা দেখেছেন বিগত প্রশাসনগুলো কিভাবে স্বৈরাচার হয়েছিল উঠেছিল। তাই আমরা চাই না এরকম স্বৈরাচার আবারো তৈরি হোক।”
তিনি বলেন, “জুলাই হামলার নয় মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত হামলার বিচার আমরা দেখতে পাইনি। হামলাকারীরা ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে, এতে আমরা শংকিত হই। আমরা চাই প্রশাসন দ্রুত সময়ে হামলাকারীদের বিচার কার্য সম্পন্ন করবে এবং আগামীকাল তফসিল ঘোষণার যে ডেডলাইন, সেটা তারা বাস্তবায়ন করবে।”
ঢাকা/আহসান/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।