গণঅভ্যুত্থানের প্রায় ৯ মাস পর করা একটি হত্যা মামলা লইয়া জনপরিসরে যেই আলোচনা-সমালোচনা চলিতেছে, উহা সংগত। সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট দুপুরে রাজধানীর মিরপুরে গুলিতে প্রাণ হারান মাহফুজ আলম শ্রাবণ। ঐ ঘটনায় তাঁহার ভাই মোস্তাফিজুর রহমান বাপ্পী গত ২০ এপ্রিল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. হাসিবুজ্জামানের আদালতে ৪০৮ জনের নামে মামলার আবেদন করেন, যথায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহিত সাংবাদিক, অভিনেতা ও ব্যবসায়ীকেও আসামি করা হইয়াছে। তবে মঙ্গলবার প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার সন্ধ্যায় বাপ্পী সমকালকে জানাইয়াছেন, উক্ত মামলার অধিকাংশ আসামিকে তিনি চিনেন না। মামলাটির বাদী সমকালকে আরও বলিয়াছেন, তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। তাই মামলায় কে কীভাবে যুক্ত হইল, তাহা নির্দিষ্ট করিয়া বলা তাঁহার পক্ষে কঠিন। তিনি মনে করেন, পুলিশ কিছু নাম যুক্ত করিয়াছে; আইনজীবীরাও কিছু নাম দিয়াছেন। তিনি নিজেও পত্রিকা হইতে তথ্য লইয়া আওয়ামী লীগ-সংশ্লিষ্টদের নাম দিবার চেষ্টা করিয়াছেন। এমনকি ঐ মামলায় জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী একজন অভিনেতাকে আসামি করিবার ঘটনাকে খোদ সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ‘খুবই বিরক্তিকর ও উদ্বেগজনক’ আখ্যা দিয়াছেন। মোদ্দাকথা, আলোচ্য মামলাটি শুরুতেই প্রশ্নবিদ্ধ। ইহার উদ্দেশ্য যে নিরপরাধ কিছু ব্যক্তিকে হয়রানি করা, উহাতেও সন্দেহ নাই।
দুর্ভাগ্যবশত এহেন মামলা ঢাকাসহ সমগ্র দেশে ইতোমধ্যে কয়েকশত হইয়াছে। এই বিষয়ে সমকালসহ কোনো কোনো সংবাদমাধ্যমে ইতোপূর্বে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনও ছাপা হইয়াছে, তথাপি তাহা বন্ধে অদ্যাবধি কার্যকর কোনো পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয় নাই। গত ২৭ এপ্রিল প্রথম আলো জুলাই আন্দোলনের সহিত সম্পর্কযুক্ত বলিয়া কথিত ৪০টি মামলা লইয়া একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যথায় ২১টি মামলার ক্ষেত্রে কোনো কোনো আসামির নিকট অর্থ দাবি ও অর্থ লেনদেনের অভিযোগ পাওয়া গিয়াছে। বাকি ১৯ মামলায় রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক, পেশাগত ও পারিবারিক দ্বন্দ্বের অংশ হিসাবে অনেককে আসামি করা হইয়াছে বলিয়া অভিযোগ করিয়াছেন ভুক্তভোগী ব্যক্তি ও তাহাদের স্বজন। এই সকল ঘটনার মধ্যে যদি কেহ বিগত আমলের বহুল আলোচিত গায়েবি মামলা ও মামলা বাণিজ্যের ভূত দেখেন, তাঁহাকে নিশ্চয় কোনো দোষ দেওয়া যাইবে না। আইন উপদেষ্টা বলিয়াছেন, মামলা করা যেই কাহারও অধিকার। তাই তাহারা ইহাতে বাধা প্রদান করিতে চাহেন না। কিন্তু মামলার নামে অন্যকে হয়রানি করিবার অধিকার কাহারও থাকিতে পারে না। সর্বোপরি, জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করিতে হইলে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার ও নিরীহ মানুষকে হয়রানি বন্ধ করাই জরুরি। কারণ এই সকল মামলা ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনের পরিপন্থি।
স্মরণ করা যাইতে পারে, গত বৎসরই এহেন বায়বীয় মামলা লইয়া বিভিন্ন মহল হইতে আপত্তি উঠিয়াছিল। তাহার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৪ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হইতে পুলিশের মাঠ প্রশাসনকে উক্ত বিষয়ে সতর্ক করা হইয়াছিল। এমনকি এই সকল অপকর্মের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করিবার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে বলিয়াও জানানো হইয়াছিল। কিন্তু পরিস্থিতির যে ইতরবিশেষ ঘটে নাই, আলোচ্য মামলাটিই তাহার প্রমাণ।
যাহাই হউক, সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুলিশের মহাপরিদর্শক ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর য় ছ সমক ল হইয় ছ ব যবস হয়র ন
এছাড়াও পড়ুন:
জকসুসহ তিন দফা দাবি মেনে নিল প্রশাসন, ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ও সম্পূরক বৃত্তিসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি মেনে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের আশ্বাসে ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভেঙে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বুধবার রাত দশটার দিকে প্রশাসনের পক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় অনশনরত শিক্ষার্থীদের ফলের রস খাইয়ে অনশন ভাঙানো হয়। শিক্ষার্থীদের অনশন ভঙ্গ করান করান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক ও সিন্ডিকেট সদস্য বিলাল হোসাইন।
এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শেখ গিয়াসউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ২৭ নভেম্বর জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই মোতাবেক নির্বাচনের রূপরেখাও ঘোষণা করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আগামী জানুয়ারি থেকে আবাসন ভাতা পাবেন শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে বৃত্তির জন্য উপযুক্ত শিক্ষার্থীদের নভেম্বরের মধ্যে যাচাই-বাছাই করার কাজ শেষ করা হবে।
অনশনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ২৭ নভেম্বরের আগেই কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপন করা হবে। ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মানোন্নয়নে প্রশাসন কাজ করবে।
আরও পড়ুনতিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে ৪ শিক্ষার্থীর অনশন, দুজন অসুস্থ১২ ঘণ্টা আগেএ সময় অনশনে বসা উদ্ভিদ বিজ্ঞানের বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। আবাসন ভাতার জন্য প্রতিশ্রুত সময়ও দিয়েছে প্রশাসন। কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আমরা অনশন ভেঙে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি।
সতর্ক করে দিয়ে এ কে এম রাকিব আরও বলেন, যদি প্রশাসন ঘোষিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবিগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সমস্ত দায় মাথায় নিয়ে সম্পূর্ণ প্রশাসনকে পদত্যাগ করতে হবে।
এর আগে তিন দফা দাবি আদায়ে গত মঙ্গলবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে অনশন শুরু করেন চারজন শিক্ষার্থী। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) পক্ষ থেকে অনশন কর্মসূচি শুরুর কথা জানানো হয়। অনশনে বসা চার শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজন বাগছাসের নেতা।
আরও পড়ুনজকসু নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা, ভোট ২৭ নভেম্বর২ ঘণ্টা আগে