‘লিভারে পানি জমেছিল। পরীক্ষার পর জানা গেল আমার ক্যান্সার হয়েছে। ১৩ বছর ভুগেছি। ঢাকা ও রাজশাহীর চিকিৎসকরা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। মৃত্যুভয় কাজ করছিল ভীষণভাবে। শেষ চেষ্টা হিসেবে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসি। চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়ম মেনে চলায় আল্লাহর কৃপায় ভালো আছি। বুঝতে পেরেছি ক্যান্সার মানেই জীবন শেষ নয়, এটি একটি যুদ্ধ। এ যুদ্ধে আমি জয়ী হয়েছি।’
দৃপ্ত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন রংপুরের উত্তম এলাকার লাইলি বেগম। সম্প্রতি রংপুরে আয়োজিত ক্যান্সার যোদ্ধাদের মিলনমেলা ও সচেতনতা কর্মসূচিতে নিজের অভিজ্ঞতার কথা শোনান তিনি। কর্মসূচিতে বিভাগের আট জেলার পাঁচ শতাধিক ক্যান্সার যোদ্ধা অংশ নেন। রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকার গল্প শোনান তারা। দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা যোদ্ধাদের নিয়ে ব্যতিক্রমী এ আয়োজন করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগ।
আয়োজনে অংশ নেওয়া আরেক যোদ্ধা গাইবান্ধার তহমিদা বেগম। পাঁচ বছর আগে তাঁর ক্যান্সার ধরা পড়ে। সময়মতো চিকিৎসা নিয়ে তিনি এখন সুস্থ। তহমিদা বলেন, ক্যান্সার এমন একটি ব্যাধি, আক্রান্ত হলে গোটা পরিবারকে তছনছ করে দেয়। নিজেকে দিয়ে প্রমাণ পেয়েছি, ক্যান্সার মানেই মৃত্যু নয়। এই সফলতার গল্প চারদিকে ছড়িয়ে দিতে হবে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের প্রধান ডা.
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ক্যান্সারে আক্রান্ত ছয় হাজারের বেশি রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। রোগীদের বেশির ভাগই স্তন ও জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত। এ ছাড়া ফুসফুস ও কোলন ক্যান্সারের রোগীও আছে। বছরে ৪০ হাজার রোগী চিকিৎসা নেন। এর মধ্যে স্তন ক্যান্সার ১৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ, ওভারি বা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার ১২ দশমিক ১৪ শতাংশ, খাদ্যনালির ক্যান্সার ৩১ দশমিক ৯৪ শতাংশ ও শ্বাসতন্ত্রের ক্যান্সারের ২৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ রোগী।
সূত্র আরও জানায়, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৯৯৭ সালে রেডিওথেরাপি কোবাল্ট-৬৬ স্থাপন করা হয়। ২০০১ সালে চালু করা হয় এটি। ২০১৫ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত মেশিনটি সচল ছিল। এর পর মেশিনটি নষ্ট হলে রংপুর বিভাগের আক্রান্ত রোগীরা রেডিওথেরাপির সুযোগ থেকে বঞ্চিত। এখানে শুধু কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। এতে বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি।
ক্যান্সার বিভাগের চিকিৎসক মনি রানী জানান, হাসপাতালে প্রতিদিন ৯০ জন রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন। কেমোথেরাপি নেন ৪০ জন। ভর্তি থাকেন ১০ থেকে ১৫ জন। এ হিসাবে বছরে অন্তত ৪০ হাজার ক্যান্সার রোগী চিকিৎসা নেন। বেশির ভাগ রোগীর রেডিওথেরাপির প্রয়োজন হয়, যা আমরা দিতে পারি না।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
মাঝরাতে সরকারি কর্মকাণ্ড কতটা স্বাভাবিক
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের রাতের কর্মকাণ্ড নিয়ে বোধকরি একটা মহাকাব্য লিখে ফেলা সম্ভব। তাঁরা যেভাবে গভীর কিংবা শেষ রাতে নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, ফেসবুকে বার্তা দিচ্ছেন; তাতে তো মনে হচ্ছে সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা দিনে কাজ না করে রাতেই মনে হয় বেশি কাজ করেন! কয়েকটা উদাহরণ বরং দেওয়া যাক।
মাস কয়েক আগে যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক ভাবে খারাপ হয়ে গেল, আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রাত তিনটার সময় সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন! বাংলাদেশের ইতিহাসে রাত তিনটার সময় আর কোনো মন্ত্রী এ ধরনের সম্মেলনের আয়োজন করেছেন কি না, আমার অন্তত জানা নেই। আমরা সবাই ভাবলাম, তিনি হয়তো বড় কোনো ঘোষণা দেবেন। এরপর কী দেখলাম?
তিনি খুব সাধারণভাবে বললেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার নিজেদের উদ্যোগকে কঠিন ও শক্তিশালী করার চেষ্টা করবে।
সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎ আকাশ থেকে একটি যুদ্ধবিমান ঢাকা শহরের উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল বিল্ডিংয়ে ভেঙে পড়ল। আগুনে দগ্ধ শিশুরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে নিজেরা উঠে এসে হাঁটছে; এমন দৃশ্যও আমাদের দেখতে হয়েছে। যে দৃশ্য দেখলে যে কেউ হয়তো ট্রমায় চলে যাবে। ওই স্কুলের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা হয়তো সরাসরি সেই দৃশ্য দেখেছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকে—এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া সময়ের দাবি ছিল। এ সিদ্ধান্ত সরকার দিনের বেলাতেই নিতে পারত। অথচ আমরা কী দেখলাম?
সরকারের পক্ষ থেকে রাত তিনটার দিকে ফেসবুকে এসে ঘোষণা করা হলো, পরের দিনের এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো হয়েছে।
যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।দিন দু-এক আগে এ সরকারকেই যাঁরা চাকরি দিয়েছেন, এ কথা বলছি কারণ, সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছিলেন, ‘ছাত্ররা আমার নিয়োগকর্তা’—সেই ছাত্রদের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা গভীর রাতে ফেসবুক এসে লাইভ করেন প্রায় আড়াই ঘণ্টা।
এই আড়াই ঘণ্টার লাইভে মূল যে বক্তব্য তিনি তুলে ধরেছেন, সারমর্ম করলে দাঁড়ায়: বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম মানি মেকিং মেশিনে পরিণত হয়েছে এবং অনেকেই এর সঙ্গে জড়িত। তিনি এটাও বলেছেন, এই সংগঠনের সব সিদ্ধান্ত হেয়ার রোড থেকে আসে। অর্থাৎ উপদেষ্টারা যেখানে থাকেন।
এদিকে সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম একটা ফেসবুক পোস্ট করেছেন। যদিও ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তিনি বেশ কয়েকবার এডিট করেছেন। তবে প্রথমে যা লিখেছেন, সেটা হচ্ছে, নতুন একটি দলের মহারথীদের কয়েকজন দুর্নীতিতে জড়িত। এ ছাড়া তিনি এটাও বলেছেন, একটা সার্কেলের সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত!
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে তাঁদের কেন প্রশ্রয় দেওয়া হলো? আপনারা যদি জানেনই কিছু মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত। তাহলে সরকারের অংশ হিসেবে আপনাদের তো দায়িত্ব তাঁদের আইনের আওতায় আনা। সেটা না করে ফেসবুকে পোস্ট করতে হচ্ছে কেন? তা–ও আবার রাত তিনটায়!
এই সরকার কি মাঝরাতের ফেসবুকীয় সরকারে পরিণত হয়েছে? পরীক্ষা পেছানোর মতো সিদ্ধান্ত যখন মাঝরাতে নিতে হয়, সংবাদ সম্মেলন যখন রাত তিনটায় করতে হয়, তখন তো প্রশ্ন জাগতেই পারে। কারণ এটা তো স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়।
যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।
রাষ্ট্র যদি ভালো না থাকে তবে তার মাত্রা কতটুকু, সেটা নির্ণয় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।
আমিনুল ইসলাম প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি
[email protected]