Samakal:
2025-06-15@12:31:18 GMT

‘ক্যান্সার মানেই জীবন শেষ নয়’

Published: 30th, April 2025 GMT

‘ক্যান্সার মানেই জীবন শেষ নয়’

‘লিভারে পানি জমেছিল। পরীক্ষার পর জানা গেল আমার ক্যান্সার হয়েছে। ১৩ বছর ভুগেছি। ঢাকা ও রাজশাহীর চিকিৎসকরা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। মৃত্যুভয় কাজ করছিল ভীষণভাবে। শেষ চেষ্টা হিসেবে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসি। চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়ম মেনে চলায় আল্লাহর কৃপায় ভালো আছি। বুঝতে পেরেছি ক্যান্সার মানেই জীবন শেষ নয়, এটি একটি যুদ্ধ। এ যুদ্ধে আমি জয়ী হয়েছি।’

দৃপ্ত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন রংপুরের উত্তম এলাকার লাইলি বেগম। সম্প্রতি রংপুরে আয়োজিত ক্যান্সার যোদ্ধাদের মিলনমেলা ও সচেতনতা কর্মসূচিতে নিজের অভিজ্ঞতার কথা শোনান তিনি। কর্মসূচিতে বিভাগের আট জেলার পাঁচ শতাধিক ক্যান্সার যোদ্ধা অংশ নেন। রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকার গল্প শোনান তারা। দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা যোদ্ধাদের নিয়ে ব্যতিক্রমী এ আয়োজন করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগ।

আয়োজনে অংশ নেওয়া আরেক যোদ্ধা গাইবান্ধার তহমিদা বেগম। পাঁচ বছর আগে তাঁর ক্যান্সার ধরা পড়ে। সময়মতো চিকিৎসা নিয়ে তিনি এখন সুস্থ। তহমিদা বলেন, ক্যান্সার এমন একটি ব্যাধি, আক্রান্ত হলে গোটা পরিবারকে তছনছ করে দেয়। নিজেকে দিয়ে প্রমাণ পেয়েছি, ক্যান্সার মানেই মৃত্যু নয়। এই সফলতার গল্প চারদিকে ছড়িয়ে দিতে হবে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের প্রধান ডা.

জাহান আফরোজ লাকী বলেন, গ্রামের অনেকেই ক্যান্সারে আক্রান্ত হলেই মনে করেন মৃত্যু নিশ্চিত। তাদের মনোবল ভেঙে যায়। অথচ সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব। এ তথ্য জানাতেই এ মিলনমেলার আয়োজন। তিনি আরও বলেন, নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে আমরা রোগীদের যথাসাধ্য সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করছি। হাসপাতালে রেডিওথেরাপির যন্ত্র নেই। রোগীর দুর্ভোগ এ ধরনের আধুনিক যন্ত্র ও ওষুধ সরবরাহ করা দরকার। এটি করা সম্ভব হলেই এ হাসপাতাল থেকেই ক্যান্সারের সব চিকিৎসা সম্ভব। এ সময় এ রোগ প্রতিরোধে তিনি রংপুর অঞ্চলের মানুষকে খৈনি, গুল, জর্দা, বিড়ি-সিগারেটসহ তামাকজাতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান জানান।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ক্যান্সারে আক্রান্ত ছয় হাজারের বেশি রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। রোগীদের বেশির ভাগই স্তন ও জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত। এ ছাড়া ফুসফুস ও কোলন ক্যান্সারের রোগীও আছে। বছরে ৪০ হাজার রোগী চিকিৎসা নেন। এর মধ্যে স্তন ক্যান্সার ১৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ, ওভারি বা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার ১২ দশমিক ১৪ শতাংশ, খাদ্যনালির ক্যান্সার ৩১ দশমিক ৯৪ শতাংশ ও শ্বাসতন্ত্রের ক্যান্সারের ২৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ রোগী। 

সূত্র আরও জানায়, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৯৯৭ সালে রেডিওথেরাপি কোবাল্ট-৬৬ স্থাপন করা হয়। ২০০১ সালে চালু করা হয় এটি। ২০১৫ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত মেশিনটি সচল ছিল। এর পর মেশিনটি নষ্ট হলে রংপুর বিভাগের আক্রান্ত রোগীরা রেডিওথেরাপির সুযোগ থেকে বঞ্চিত। এখানে শুধু কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। এতে বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি।

ক্যান্সার বিভাগের চিকিৎসক মনি রানী জানান, হাসপাতালে প্রতিদিন ৯০ জন রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন। কেমোথেরাপি নেন ৪০ জন। ভর্তি থাকেন ১০ থেকে ১৫ জন। এ হিসাবে বছরে অন্তত ৪০ হাজার ক্যান্সার রোগী চিকিৎসা নেন। বেশির ভাগ রোগীর রেডিওথেরাপির প্রয়োজন হয়, যা আমরা দিতে পারি না। 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচন যখনই হোক, প্রস্তুত থাকতে হবে: সিইসি

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে, তা নিয়ে সরকারের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের এখনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন। তিনি বলেছেন, সরকারের সঙ্গে আলোচনা হলে ইসি সরকারের ‘ভাব’ বুঝতে পারবে। তখন নির্বাচনের তারিখের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে তিনি বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হোক বা এপ্রিলে—যখনই হোক নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুত থাকতে হবে।

আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন সিইসি। গত শুক্রবার যুক্তরাজ্যের লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠকের পর একটি যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালে রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।

এ বিষয়ে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, আগে বলা হয়েছিল ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। সেই সময়সীমা মাথায় রেখে ইসি প্রস্তুতি শুরু করেছিল। সেভাবে এগিয়েছিল। এখন আবার নতুন ‘ডাইমেনশন’ এসেছে। যৌথ বিবৃতির বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘যে ঘোষণাটা লন্ডনে বসে হয়েছে, এটা আপনারা যেটুকু জানেন, আমি এর বাইরে বেশি কিছু জানি না। আপনারা যেটুকু দেখেছেন মিডিয়াতে, আমিও সেটুকু দেখেছি।’

আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে পারে—এ সংক্রান্ত যৌথ বিবৃতির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘আমি এটা টেলিভিশনে দেখেছি, এটাকে আমি ফরমাল, অফিশিয়াল ভাবতে পারতেছি না। সরকারের সঙ্গে আমাদের এখনো কথাবার্তা হয় নাই, কী ধরনের সিদ্ধান্ত আসে। আমরা এখন আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে ভাবতেছি। যখনই হবে, যখনই হয় যাতে আমরা ইলেকশনটা “ডেলিভার” করতে পারি।’

সিইসি আরও বলেন, ‘এখন আমরা প্রস্তুতির বাইরে কিছু চিন্তা করছি না। যখন সরকারের সঙ্গে কথা হবে যে ওনারা কী আলোচনা করেছেন, আমরা তো নিশ্চয় ওনাদের ভাব বুঝতে পারব, বুঝে তখন একটা তারিখ, তখন সেটা করব। এখন আমাদের চিন্তা–ভাবনা, ধ্যান–ধারণা, শয়নে–স্বপনে নিজেদের প্রস্তুতি।’

এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন—এটা এখনো তাঁদের কাছে পরিষ্কার নয়। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, গেজেটের মাধ্যমে ভোটের তারিখ ঘোষণা করা হয়। ছয় মাস–আট মাস আগে ভোটের তারিখ বলার বিধান আইনে নেই।

সিইসি বলেন, যৌথ বিবৃতিতে তিনি যেটা দেখেছেন যে রমজানের আগেও নির্বাচন হতে পারে। সেখানে ‘যদি’ আছে।

নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে সিইসি বলেন, নির্বাচনের জন্য বড় প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো অনেকটা শেষ হয়েছে। সবচেয়ে বড় কাজ ভোটার নিবন্ধন, এটি মোটামুটি শেষ।

চলতি বছরের হালনাগাদে যাঁদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে, সে তালিকা চূড়ান্ত হবে আগামী বছরের ২ মার্চ। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে তাঁরা ভোট দিতে পারবেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, তফসিল ঘোষণার আগে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত থাকতে হয়। সাধারণত ভোটের তারিখের মাস দুয়েক আগে তফসিল ঘোষণা করা হয়। যেদিন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে, তার আগে যাঁদের ১৮ বছর পূর্ণ হবে তাঁদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে ইসি চেষ্টা করবে। এ জন্য আইনে কিছুটা পরিবর্তন আনার চিন্তা করছে ইসি। সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে—এই ওয়াদা তিনি দিতে পারবেন না। তাঁরা যথাসম্ভব চেষ্টা করবেন, যাতে তরুণ প্রজন্মকে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।

কোনো কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। তাদের আস্থায় আনতে ইসি কী করবে—এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও দেশের ভালো চায়। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে তাদের অনেক ধরনের কথাবার্তা বলতে হয়। এগুলো তিনি রাজনৈতিকভাবে দেখেন।

সিইসি আরও বলেন, কেউ বিপক্ষে না থাকলে বুঝতে হবে কোনো ‘কোয়ালিটি’ নেই। বিপক্ষে কেউ বললে তখন শোধরানোর সুযোগ থাকে। এ জন্য কেউ বিরুদ্ধে বললে তিনি আহত হন না। তিনি এ ধরনের সমালোচনাকে স্বাগত জানান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ