মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার আড়ালিয়া গ্রামে মাটির নিচ থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা মর্টার শেলটি নিষ্ক্রিয় করার সময় বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়েছে। বিস্ফোরণের তীব্রতায় আশপাশের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিস্ফোরণের শব্দে তিনটি গরুও মারা গেছে বলে অভিযোগ করেছেন গ্রামের বাসিন্দারা।

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে উপজেলার বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের আড়ালিয়া গ্রামে উদ্ধার হওয়া মর্টার শেলটি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়। এর আগে, গত সোমবার স্থানীয় হানিফের কৃষিজমিতে মাটি কেটে আইল বানানোর সময় মাটির নিচে বড় লোহাজাতীয় কিছু আঁচ করেন শ্রমিকেরা। গ্রামের লোকজন এটিকে পুরনো সীমানা পিলার মনে করলেও পুলিশ জানায়, এটি একটি অবিস্ফোরিত মর্টার শেল।

স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার বিকেল থেকে মর্টার শেলটি নিষ্ক্রিয় করতে কাজ শুরু করে পুলিশের বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা। রাত ৮টার দিকে মর্টার শেলটি বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণের তীব্রতায় গ্রামটি কেঁপে ওঠে। এতে ২০০ থেকে ৩০০ মিটার অংশের ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কিছু কিছু অংশ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কোথাও টিনের বেড়া বেঁকে যায়।

বিস্ফোরণে স্থানীয় সেলিম, হারেস, রশিদ, রফিজ, রেনু মিস্ত্রি, ফরিদ হোসেন, আবদুল হান্নান, মানিক মিয়া, জলিল, মুক্তার হোসেন, আবদুল গাফফার, সেলিম মিয়া, বারেকের বাড়িসহ অর্ধশত বাড়িঘর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা। বিস্ফোরণের শব্দে আশিক নামের এক কৃষকের তিনটি গরু মারা গেছে বলে জানান তারা।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী চা–দোকানি আবদুর রশিদ বলেন, ‘‘বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মর্টার শেলটি নিষ্ক্রিয় করা হয়। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটা বেশি ছিল যে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে আমার দোকানের প্রায় সবকিছু উড়ে গেছে।’’

ঘটনাস্থলের চার কিলোমিটার দূরে বালুয়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘মঙ্গলবার রাতে আমরা তীব্র ঝাঁকুনি অনুভব করি। প্রথমে বিষয়টিকে আমরা ভূমিকম্প ভাবলেও পরে জানতে পারি আড়ালিয়া গ্রামের উদ্ধার হওয়া মর্টার শেলটির বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।’’

এদিকে, এ ঘটনার পর জনরোষে পড়েন পুলিশ, বোমা নিষ্ক্রিয়কারী ও গণমাধ্যমকর্মীরা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত সংবাদকর্মী মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘‘মর্টার শেলটির বিস্ফোরণ ঘটানোর পর আশপাশের বাড়িঘর কেঁপে ওঠে। এ ঘটনার পর উত্তেজিত জনতা আমাদের ওপর চড়াও হয়। কেন আমরা বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যদের মর্টার শেলটি দূরে কোথাও নিয়ে বিস্ফোরণ ঘটাতে বললাম না, সে জন্য তারা আমাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।’’

গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.

আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, ‘‘ধারণা করা হচ্ছে, উদ্ধার করা মর্টার শেলটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের। মর্টার শেলটির বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করার সময় আশপাশের কিছু স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় লোকজন উত্তেজিত হয়ে পড়েন। পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক আছে।’’

ঢাকা/রতন/রাজীব

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন ষ ক র য় কর ব ড় ঘর ক র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ