ময়মনসিংহ শহরের ব্রহ্মপুত্র তীরের কাছারিঘাট ও শিল্পাচার্য জয়নুল উদ্যান সকালে প্রাতভ্র৴মণকারীদের পদচারণে মুখর থাকে। কয়েক দিন আগে হেঁটে ফেরার পথে জেলা নির্বাচন অফিসের পেছনে গামারিগাছে ফুল ফুটতে দেখলাম। এই গাছের পাতা শীতে ঝরে গিয়েছিল। বসন্তে পত্রশূন্য গাছে ফুল ফুটেছে। ফুল ফোটার পর আবার পাতা গজাচ্ছে। কাঠের জন্য লাগানো হলেও এর হলুদ ফুলও কিন্তু সুন্দর। গামারি ফুল ভ্রমরের খুব প্রিয়; কারণ, এই ফুলে বেশ মধু আছে। তাই গামারির আরেক নাম ভ্রমরপ্রিয়া। টিয়া ও কাঠবিড়ালিরও প্রিয় এই ফুল। ফুলের নিচের দিকটা খয়েরি বাদামি।
গামারি সবুজ ও ঘন পাতাবিশিষ্ট, দ্রুত বর্ধনশীল পত্রঝরা বৃক্ষ। গামারি কাঠের জন্য লাগানো হলেও এর ফুলও কম সুন্দর নয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Gmelina arborea, এটি Lamiaceae পরিবারের বৃক্ষ। ইংরেজিতে এই গাছ কান্ধার ট্রি, কাশ্মীর ট্রি, গুমার ট্রি, মালয় বুশ-বিচ, হোয়াইট বিচ, হোয়াইট টিক ইত্যাদি নামে পরিচিত। এ ছাড়া বাংলা নাম গামার, গাম্বার, গাম্ভারি, তার কাঠ, গাম্ভারিকা ইত্যাদি নাম রয়েছে। এর সংস্কৃত নামগুলো হলো মধুমতি, গাম্ভারি, সিন্ধুপর্ণী, ভাদ্রাপর্ণী, গামহার ইত্যাদি।
আদিনিবাস ভারতবর্ষ ও মিয়ানমার। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় জন্মে। ভারতের আসাম, দক্ষিণ বিহার, ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চল–সংলগ্ন এলাকায় এ গাছ হয়। বাংলাদেশের মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলায় বেশি দেখা যায়।
এই গাছ লম্বায় ১৫ থেকে ৩৫ মিটার উঁচু হয়। গাছের প্রশাখা ও কুঁড়ি রোমশ। বাকল সাদা বা উজ্জ্বল ধূসর। পাতা পানপাতার আকৃতির, ২০ থেকে ২৪ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। পাতার ওপর দিক উজ্জ্বল সবুজ, নিচে পাণ্ডুর, বোঁটা ৬ থেকে ১০ সেন্টিমিটার লম্বা। শীতে পাতা ঝরে। এটি অত্যধিক খরা–সহনশীল। বসন্তকালে পাতাহীন ডালে ডালে দেখা যায় গাঢ় হলুদ ফুল। পাঁচটি পাপড়ি থাকলেও মাঝের পাপড়িটি অন্যগুলোর চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ লম্বা। বড় পাপড়িটির লম্বা পতাকার মতো অংশটি গাঢ় হলুদ। ফুলের গোড়ার দিকে হলুদ রঙের পাশাপাশি দেখা মেলে লালচে-বাদামি ও খয়েরি রঙের। ফুলের অনেক মিষ্টি গন্ধ, ফুল ৩ থেকে ৩ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার লম্বা, ২ ভাগে বিভক্ত। এর পুষ্পমধু ভোমরাদের খুবই প্রিয়। গামারির ফল দেখতে গোলাকার, ডিম্বাকৃতির, ফলে এক-দুটি বীজ হয়। ফল তিন সেন্টিমিটার চওড়া, শাঁসাল, পাকলে হালকা হলুদ হয়। শীতের পর ফুল এবং তাঁর দুই মাস পর ফল হয়।
কাঠ হলুদ, খানিকটা লাল অথবা সাদা। কাঠ টেকসই, সহজে কাজ করা যায়। সেগুনের পরেই গামারি কাঠের স্থান। এ জন্য ইংরেজিতে একে হোয়াইট টিক বলে। এই কাঠ আসবাব নির্মাণের জন্য বিশেষ উপযোগী। খোদাইয়ের কাজ, তক্তা, বাক্স, চিরুনি, খেলনা, গাড়ি ও নৌকা এই কাঠ দিয়ে বানানো যায়। এই কাঠের প্লাইউড বেশ ভালো।
গামারির অনেক ভেষজ গুণ রয়েছে। কটু–তিক্ত রস, গুরুপাক, উষ্ণবীর্য, কফ ও ত্রিদোষনাশক, বিষদোষ দাহ, জ্বর, তৃষ্ণা ও রক্তদোষনাশক। এর ছাল এবং কাঠে আছে অনেক তিক্ত পদার্থ ও স্টেরোল। পাতার রসে আছে জীবাণুনাশক শক্তি। কচি পাতার রস গনোরিয়া ও কাশিতে উপকারী। শিকড় কৃমিনাশক ও কুষ্ঠরোগে উপকারী। ক্ষতের পুঁজ বের করে দেয়। ফল চর্মরোগ ও চুল ওঠা বন্ধ করার মহৌষধ। শিকড় কৃমিনাশক ও কুষ্ঠরোগে উপকারী। গামারিগাছের পাতা এবং ফল গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এগুলো পুষ্টিকর এবং প্রাণীদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
চয়ন বিকাশ ভদ্র: অধ্যাপক, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি কলেজ, ময়মনসিংহ
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আরও ৩৭ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার ও নওগাঁ সীমান্ত দিয়ে নারী-শিশুসহ আরও ৩৭ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। তাদের সবাইকেই বিজিবি আটক করে পুলিশে হস্তান্তর করেছে। আটকরা সবাই নিজেদের বাংলাদেশি বলে দাবি করেছেন। বিভিন্ন সময় কাজের জন্য অবৈধভাবে তারা ভারতে গিয়েছিলেন। এ নিয়ে গত ৪০ দিনে ১ হাজার ৪৩৫ জনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দিল বিএসএফ।
শুক্রবার ভোরে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার অচিন্তপুর সীমান্তের ২৯৫ নম্বর মেইন পিলারের ১ নম্বর সাব-পিলার এলাকা দিয়ে একই পরিবারের ১৪ জনসহ ১৫ জনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে টহলরত বিজিবি সদস্যরা তাদের আটক করেন। আটকদের মধ্যে ৯ শিশু ও ৩ নারী রয়েছেন।
বিজিবি জানায়, আটকরা নিজেদের বাংলাদেশি বলে দাবি করেছেন। সবার দাবি, তারা নড়াইল জেলার কালিয়া থানা এলাকার বাসিন্দা। ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর তারা বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে কাজের জন্য মুম্বাই যান। তাদের বিরামপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
একই দিন ভোরে মৌলভীবাজারের বড়লেখা সীমান্ত দিয়ে ১৩ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়। বিজিবির নিউ পাল্লাথল বিওপির টহল দল তাদের আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। আটকদের মধ্যে তিন নারী ও ছয় শিশু রয়েছে। বিজিবি ৫২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ জানান, আটকদের পরিচয় যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
পঞ্চগড়ের গোলাবাড়ি সীমান্ত দিয়ে গতকাল ভোরে নারী, শিশুসহ সাতজনকে ঠেলে দেয় বিএসএফ। এর মধ্যে তিন নারী, দুই পুরুষ ও দু’জন শিশু। সীমান্তের মেইন পিলার ৭৪৩-এর ১ নম্বর সাব-পিলার এলাকা থেকে তাদের আটক করে নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অমরখানা ক্যাম্পের টহল দল। জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা নিজেদের বাংলাদেশি দাবি করেন। সবার দাবি, তারা নড়াইল ও যশোর এলাকার বাসিন্দা। এর আগেও চার দফায় নারী, শিশুসহ ৬০ জনকে পঞ্চগড়ের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ।
এ ছাড়া নওগাঁর ধামইরহাট সীমান্ত দিয়ে আছিয়া বেগম (৫০) নামে এক নারীকে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে বিএসএফ। গতকাল দুপুরে উপজেলার জগদ্দল মাঠের মধ্যে থেকে তাঁকে বিজিবি আটক করে পুলিশে হস্তান্তর করে। ওই নারী ১০ বছর ধরে ভারতের মুম্বাইতে একটি হাসপাতালে আয়ার কাজ করতেন। তাঁর বাড়ি যশোর জেলার ইশবপুর নামক এলাকায়।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার মুন্সিপাড়া বিওপি কড়ইগড়া সীমান্ত দিয়ে দুই শিশুসহ ৯ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ। তাদের মধ্যে আটজনের বাড়ি বাগেরহাট এবং একজনের ধোবাউড়ায়। তারা সবাই আট বছর ধরে ভারতের চেন্নাইয়ের বিভিন্ন স্থানে কাজ করতেন বলে জানিয়েছেন।
বিজিবি জানায়, চেন্নাই পুলিশের ধাওয়া খেয়ে এই ৯ জন দালালের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসার চেষ্টা করছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে ভারতের মেঘালয়ের শীবগঞ্জ পুলিশ তাদের আটক করে।
(সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি ও সংবাদদাতার পাঠানো খবর)