Samakal:
2025-06-15@20:17:12 GMT

বজ্রপাতে ঝরে যাওয়া জীবন

Published: 30th, April 2025 GMT

বজ্রপাতে ঝরে যাওয়া জীবন

দেশে সোমবার এক দিনে বজ্রপাতে ১৮ জনের মৃত্যুর খবর বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই। এক দিনে একক কারণে এত মৃত্যু নিশ্চয়ই উদ্বেগজনক। বজ্রপাতের এই বিপদ অবশ্য অনেক আগে থেকেই আমরা দেখে আসছি। প্রতিবছর বজ্রপাতে প্রায় ৩০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। বজ্রপাতে এত প্রাণহানির পরও মানুষ এখনও কেন সচেতন হচ্ছে না, সে এক বিস্ময়। বজ্রপাতে হঠাৎ মৃত্যু হয়ে যেতে পারে বটে, তবে এ সময় কিছু পদক্ষেপ ব্যক্তির সুরক্ষায় কাজ করতে পারে। পাশাপাশি মৃত্যুর হার কমাতে সরকারি পদক্ষেপও জরুরি। বজ্রপাতে যখন মৃত্যুর সংখ্যা কমছে না, তখন স্বাভাবিকভাবেই এই দুই বিষয় নিয়েই প্রশ্ন তোলার অবকাশ থেকে যায়।  


মঙ্গলবার সমকালের প্রিন্ট সংস্করণে প্রকাশিত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন ছিল– বজ্রপাতে ঝরে গেল ১৮ প্রাণ। সেখানে দেখানো হয়েছে– বজ্রপাতে মৃত্যু কমাতে সরকারি নানা উদ্যোগ আছে। একে দুর্যোগও ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু সরকার এ লক্ষ্যে কিছু ভুল প্রকল্প নিয়েছে। অন্যদিকে বড় গাছ কাটা বন্ধ না হওয়া এবং প্রয়োজনীয় সচেতনতা তৈরির চেষ্টা না থাকায় মৃত্যু রোধ হচ্ছে না। বজ্রসহ ঝড়বৃষ্টির পেছনে নদী শুকিয়ে যাওয়া, বায়ুদূষণ, জলাভূমি ভরাট হওয়া আর গাছ ধ্বংস হওয়ার প্রভাবও অনস্বীকার্য। 


বিভিন্ন তথ্যে এটা স্পষ্ট, সারাবিশ্বে বজ্রপাতে যে সংখ্যায় মানুষ মারা যায়, তার এক-চতুর্থাংশই বাংলাদেশে।  বজ্রপাতে প্রাণহানির শিকার অধিকাংশই মাঠে থাকা কৃষক। অনেকে বাড়ি ফেরার পথে এবং বাইরে গোসল করা কিংবা মাছ শিকারের সময়ও বজ্রপাতে মারা যান। তবে শহরের ভবনগুলোতে বজ্রপাত প্রতিরোধক দণ্ড থাকায় হতাহতের সংখ্যা কম। 


বেসরকারি সংগঠন ডিজাস্টার ফোরামের হিসাবে, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বজ্রপাতে প্রাণ গেছে ৩ হাজার ৮৭০ জনের। এত প্রাণহানি দেখেই হয়তো সরকার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কিন্তু তার অধিকাংশই সে অর্থে কাজে আসেনি। ২০২৩ সালে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে সমকালের একটি প্রতিবেদন ছিল– মৃত্যু ঠেকানোর উদ্যোগ প্রকল্পেই ঘুরপাক। সরকার ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা দেয় এবং ওই বছরই বজ্রপাতে মৃত্যু প্রতিরোধে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সারাদেশে ১০ লাখ তালগাছের চারা এবং ৩৫ লাখ তালের আঁটি রোপণের উদ্যোগ গ্রহণ করে।

কিন্তু সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত প্রকল্পটির অধীনে প্রায় শতকোটি টাকা গচ্চা যায়। দায়িত্বশীলরা একটা সময় পর এসে বলেছিলেন, তালগাছ বড় হতে ৩০-৪০ বছর সময় লাগে। সেজন্য প্রকল্পটি তাদের নিকট গ্রহণযোগ্য সমাধান নয়। এরপরও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে হাওরাঞ্চলের বজ্রপাতপ্রবণ ২৩ জেলায় বজ্রনিরোধক দণ্ডসহ বজ্রপাত-নিরোধক কংক্রিটের ছাউনি নির্মাণ করে কোনো প্রকার সমীক্ষা বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই। এমনকি ২০১৭ সালে বজ্রপাতের পূর্বাভাসের জন্য ৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের আট স্থানে স্থাপন করা হয় লাইটনিং ডিটেকটিভ সেন্সর- এলডিএস; যার মাধ্যমে ১৫ মিনিট আগেই সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষকে বজ্রপাতের তথ্য জানার কথা থাকলেও বাস্তবে তা কাজ করেনি। এরপর ২০২৩ সালে সরকার ‘হাই ইমপ্যাক্ট ওয়েদার অ্যাসেসমেন্ট’ একটি প্রযুক্তি চালু করার সময়ই এর কার্যকারিতা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছিলেন। সোমবারের ১৮ জনের মৃত্যু প্রমাণ করছে সরকারের প্রকল্পগুলো ‘সকলি গরল ভেল’।


বাকি রইল মানুষের সচেতনতা। বস্তুত বজ্রপাত থেকে সুরক্ষায় এটাই সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র। আকাশে যখন কালো মেঘ জমে মাঠে বা বাড়ির বাইরে থাকা মানুষের তখনই বাড়িতে বা নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়া উচিত। এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে বজ্রপাত বেশি হয়। এ সময়ে কেউ কৃষি কাজের জন্যও বাড়ির বাইরে গেলে জুতা পরে যাওয়া উচিত। জুতা না থাকলে ভূপৃষ্ঠ দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হওয়ার সময় তা শরীরে সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। সেজন্য এ সময় জুতা ছাড়া যাওয়া যাবে না। বজ্রপাতের সময় উঁচু স্থান ও উঁচু গাছের নিচে আশ্রয় নেওয়া যাবে না। খোলা জায়গায় বা মাঠে থাকলে মাটির সঙ্গে যেন স্পর্শ কম হয়, এমনভাবে দুই হাত দিয়ে কান চেপে ধরে রাখতে হবে। এ সময় পানিতে থাকলে দ্রুত উঠে যেতে হবে।


বজ্রপাতে মৃত্যুর মিছিল থামাতে এই সচেতনতার কাজটাই আগে করা জরুরি। তাছাড়া প্রকৃতিবিনাশী সব কর্মকাণ্ড থামাতে হবে। আমাদের পরিবেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিশোধ শেষ বিচারে যে কতভাবে হতে পারে, বজ্রপাতে মৃত্যু তার অন্যতম উদাহরণ।


মাহফুজুর রহমান মানিক: জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদ, সমকাল
mahfuz.

manik@gmail.com 


 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রকল প র সময় সরক র এ সময়

এছাড়াও পড়ুন:

পাল্টাপাল্টি হামলার তীব্রতা বাড়ল

ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা ঘিরে আরও অশান্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে হামলার তীব্রতা বাড়াচ্ছে দুই দেশ। ইসরায়েলে গত শনিবার রাতভর ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। একই রাতে ইরানের গ্যাসক্ষেত্র ও তেল শোধনাগারে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এ হামলায় ইরানের কতজন নিহত হয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।

গতকাল রোববার ছিল দুই দেশের পাল্টাপাল্টি হামলার তৃতীয় দিন। শনিবার রাতের পর রোববার দিনের বেলায়ও পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল ও ইরান। এদিন ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা জানিয়েছে ইয়েমেনের সশস্ত্র

গোষ্ঠী হুতি। চলমান সংঘাতে এই প্রথম ইরানপন্থী কোনো গোষ্ঠী যোগ দিল। এমন পরিস্থিতিতে দুই দেশকে শান্ত করার জন্য প্রচেষ্টা শুরু করেছে বিভিন্ন দেশ।

গতকাল রাত একটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছিল। এ রাতেও তেহরানের নিয়াভারান, ভালিয়াসর ও হাফতে তির স্কয়ার এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ইরানের পূর্বাঞ্চলে মাশহাদ বিমানবন্দরে একটি ‘রিফুয়েলিং’ উড়োজাহাজে আঘাত হানার কথা জানায় ইসরায়েলি বাহিনী। এই উড়োজাহাজগুলো আকাশে থাকা অবস্থায় অন্য উড়োজাহাজে জ্বালানি সরবরাহ করতে সক্ষম। ইরান থেকেও ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার খবর পাওয়া গেছে।

ইসরায়েলে ব্যাপক হামলা ইরানের

ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ঠেকানোর কথা বলে গত বৃহস্পতিবার রাতে দেশটিতে প্রথমে হামলা চালায় ইসরায়েল। ওই রাতে ইসরায়েলের দুই শতাধিক যুদ্ধবিমান ইরানের ‘পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র’ স্থাপনায় আঘাত হানে। শুক্র ও শনিবারও ইরানে হামলা চলে। পাল্টা জবাব দিচ্ছে তেহরানও। তবে ইসরায়েলে শনিবার রাতভর ইরান যে হামলা চালিয়েছে, তা ছিল সবচেয়ে ব্যাপক।

ইসরায়েলে শনিবার প্রথম দফায় ইরানের হামলা শুরু হয় রাত ১১টার পরপর। এ সময় ইসরায়েলের জেরুজালেম ও হাইফা শহরে বেজে ওঠে সাইরেন। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাইফায় অবস্থিত তেল শোধনাগার। পরে রাত আড়াইটার দিকে দ্বিতীয় দফায় হামলা শুরু করে ইরান। তখন তেল আবিব ও জেরুজালেমে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, শনিবার রাতে দুই দফায় ৭৫টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। প্রথম দফায় ছোড়া হয় ৪০টি। এতে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের তামরা শহরে চারজন নিহত হন। দ্বিতীয় দফায় ছোড়া হয় ৩৫টি ক্ষেপণাস্ত্র। এর একটি আঘাত হানে তেল আবিবের কাছে বাত ইয়াম এলাকায়। এতে অন্তত ছয়জন নিহত ও প্রায় ২০০ জন আহত হন। এ ছাড়া রেহভোত শহরে আহত হয়েছেন ৪০ জন।

ইসরায়েলি হামলায় জ্বলছে ইরানের শাহরান তেলের ডিপো। গতকাল দেশটির রাজধানী তেহরানের কাছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ