বিশালাকার জাহাজের গায়ে হাতুড়ি দিয়ে একের পর এক আঘাত করছেন ৬৫ বছর বয়সী শ্রমিক শাহাজান। উদ্দেশ্য জাহাজের গায়ে জমা মরিচাগুলো তুলে ফেলা। প্রতিদিন সকাল সাতটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ১০ ঘণ্টা ধরে এ কাজ করেন শ্রমিক শাহজাহান। এর বিনিময়ে দিনে মজুরি পান মাত্র ৪৫০ টাকা। যেদিন কাজ করেন না বা করতে পারেন না, সেদিন হাত শূন্য। কেবল কাজের বিনিময়ে মজুরি মেলে।

দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে রাজধানীর সদরঘাটের ডকইয়ার্ডে এ কাজ করে যাওয়া শাহজাহান জানেন না আজ শ্রমিক দিবস। শুধু এটুকু জানেন, আজ তাঁকে বিকেল পাঁচটার বদলে তিনটা পর্যন্ত কাজ করতে হবে। আজ শ্রমিক দিবস জানেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে শ্রমিক শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘না, জানি না, আজকে একটানা তিনটা পর্যন্ত কাজ করতে হবে, এটি জানি।’

শ্রমিক শাহজাহানের বাড়ি পিরোজপুরের সদর উপজেলার কলাখালী ইউনিয়নে। সেখানে পরিবারে স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক ছেলে। তাঁর এই আয়ের ওপর ভর করেই চলে সংসার। শাহজাহান এখন থাকেন ডকইয়ার্ডের পাশে একটি মেসে। তিনি বলেন, ছয়–সাত বছর ধরে একই মজুরি (৪৫০ টাকা) পেয়ে আসছেন। সবকিছুর দাম বাড়লেও বাড়েনি শাহজাহানের মতো শ্রমিকদের মজুরি।

‘আমরা চাই সরকারি ছুটিগুলো অন্তত আমাদের দেওয়া হোক। আমাদের হাজিরাটা (প্রতিদিনের কাজের মজুরি) বাড়ানো হোক।’শ্রমিক শাহীন

শাহজাহান জানান, ডকইয়ার্ডে কেবল প্রতিদিন হাজিরার ওপর বেতন দেওয়া হয়। শ্রমিক দিবস কিংবা সরকারি কোনো ছুটি তাঁরা পান না। কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে গেলেও মজুরি কেটে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ তাঁদের মজুরি। বলেন, ‘এইবার একবার রোজা রইয়া কাজ করতে গিয়া হুইয়া পড়ছি, অসুস্থ অইছি। কইলাম একটু মোরে ডাক্তারে ধারে নাও, হেইয়া কেউ নেলো না। জেরে আধা ঘণ্টা ধরে হুইয়া রইছি, পরে আস্তে আস্তে উইড্ডা বাসায় গেছি, জেরে ডাক্তারের ধারে গিয়া স্যালাইন আইনা খাইয়া হের পরে সুস্থ অইছি।’

শুধু শ্রমিক শাহজাহান নয়, রাজধানীর সদরঘাটের বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ের এ ডকইয়ার্ডে আজ কাজ করেছেন অসংখ্য শ্রমিক। ভরদুপুরে কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে বসে পড়া আরও দুই শ্রমিকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁদের মধ্যে একজন ৭৬ বছর বয়সী ইউনুস হাওলাদার। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে এই ডকইয়ার্ডে কাজ করছেন তিনি। তাঁর গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নে। সুন্দরবনের বাঘ-হরিণে ডাক দিলে তাঁর বাড়ি থেকে শোনা যায় বলে তিনি জানান। কাজের জন্য ঢাকার হাবিব নগরে থাকেন। পরিবারে ৫ ছেলে ১ মেয়ে।

প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা কাজ করতে হয় ডকইয়ার্ড শ্রমিকদের.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ডকইয় র ড ক জ করত ক জ কর

এছাড়াও পড়ুন:

‘আজ যদি কাজ না করি, আমাগোরে আর কাজে লইবো না’

বিশালাকার জাহাজের গায়ে হাতুড়ি দিয়ে একের পর এক আঘাত করছেন ৬৫ বছর বয়সী শ্রমিক শাহাজান। উদ্দেশ্য জাহাজের গায়ে জমা মরিচাগুলো তুলে ফেলা। প্রতিদিন সকাল সাতটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ১০ ঘণ্টা ধরে এ কাজ করেন শ্রমিক শাহজাহান। এর বিনিময়ে দিনে মজুরি পান মাত্র ৪৫০ টাকা। যেদিন কাজ করেন না বা করতে পারেন না, সেদিন হাত শূন্য। কেবল কাজের বিনিময়ে মজুরি মেলে।

দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে রাজধানীর সদরঘাটের ডকইয়ার্ডে এ কাজ করে যাওয়া শাহজাহান জানেন না আজ শ্রমিক দিবস। শুধু এটুকু জানেন, আজ তাঁকে বিকেল পাঁচটার বদলে তিনটা পর্যন্ত কাজ করতে হবে। আজ শ্রমিক দিবস জানেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে শ্রমিক শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘না, জানি না, আজকে একটানা তিনটা পর্যন্ত কাজ করতে হবে, এটি জানি।’

শ্রমিক শাহজাহানের বাড়ি পিরোজপুরের সদর উপজেলার কলাখালী ইউনিয়নে। সেখানে পরিবারে স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক ছেলে। তাঁর এই আয়ের ওপর ভর করেই চলে সংসার। শাহজাহান এখন থাকেন ডকইয়ার্ডের পাশে একটি মেসে। তিনি বলেন, ছয়–সাত বছর ধরে একই মজুরি (৪৫০ টাকা) পেয়ে আসছেন। সবকিছুর দাম বাড়লেও বাড়েনি শাহজাহানের মতো শ্রমিকদের মজুরি।

‘আমরা চাই সরকারি ছুটিগুলো অন্তত আমাদের দেওয়া হোক। আমাদের হাজিরাটা (প্রতিদিনের কাজের মজুরি) বাড়ানো হোক।’শ্রমিক শাহীন

শাহজাহান জানান, ডকইয়ার্ডে কেবল প্রতিদিন হাজিরার ওপর বেতন দেওয়া হয়। শ্রমিক দিবস কিংবা সরকারি কোনো ছুটি তাঁরা পান না। কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে গেলেও মজুরি কেটে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ তাঁদের মজুরি। বলেন, ‘এইবার একবার রোজা রইয়া কাজ করতে গিয়া হুইয়া পড়ছি, অসুস্থ অইছি। কইলাম একটু মোরে ডাক্তারে ধারে নাও, হেইয়া কেউ নেলো না। জেরে আধা ঘণ্টা ধরে হুইয়া রইছি, পরে আস্তে আস্তে উইড্ডা বাসায় গেছি, জেরে ডাক্তারের ধারে গিয়া স্যালাইন আইনা খাইয়া হের পরে সুস্থ অইছি।’

শুধু শ্রমিক শাহজাহান নয়, রাজধানীর সদরঘাটের বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ের এ ডকইয়ার্ডে আজ কাজ করেছেন অসংখ্য শ্রমিক। ভরদুপুরে কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে বসে পড়া আরও দুই শ্রমিকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁদের মধ্যে একজন ৭৬ বছর বয়সী ইউনুস হাওলাদার। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে এই ডকইয়ার্ডে কাজ করছেন তিনি। তাঁর গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নে। সুন্দরবনের বাঘ-হরিণে ডাক দিলে তাঁর বাড়ি থেকে শোনা যায় বলে তিনি জানান। কাজের জন্য ঢাকার হাবিব নগরে থাকেন। পরিবারে ৫ ছেলে ১ মেয়ে।

প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা কাজ করতে হয় ডকইয়ার্ড শ্রমিকদের

সম্পর্কিত নিবন্ধ