বছরের প্রথম তিন মাসে আমদানি বেড়ে যাওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি অপ্রত্যাশিতভাবে সংকুচিত হয়েছে। এই আমদানি বৃদ্ধির পেছনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক পরিকল্পনার প্রভাব রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। এপ্রিল মাসের শুরুতে কার্যকর ট্রাম্পের ব্যাপক বাণিজ্য শুল্কনীতি কার্যকর হওয়ার আগে, মার্কিন ভোক্তাদের বিদেশি পণ্য মজুত করার প্রবণতা ও আমদানির তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে।

তবে এ পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দেশবাসীকে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়ে এর জন্য পূর্ববর্তী বাইডেন প্রশাসনের ওপর দায় চাপিয়েছেন। এদিকে আমদানি পণ্যে ব্যাপকভাবে শুল্ক আরোপ করায় ট্রাম্পের জনপ্রিয়তাও হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু এতে না দমে শিগগিরই অর্থনীতি ও জনপ্রিয়তার ‘পুনরুত্থান’ ঘটবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

দ্য ইকোনমিক নিউজ-এর বরাত দিয়ে এএফপি জানায়, ওয়াল স্ট্রিট-এর তিনটি প্রধান সূচকই পড়ে গেছে, নাসডাক ২ শতাংশের বেশি কমেছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ পরিস্থিতির জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নীতিকে দায়ী করে বলেন, ‘এটাই বাইডেন, এটি ট্রাম্প নয়।’ তবে তিনি প্রথম প্রান্তিকে মোট স্থায়ী বিনিয়োগ ২২ শতাংশ বৃদ্ধির বিষয়টিকে বিস্ময়কর ও লক্ষণীয় বলে উল্লেখ করেছেন। জো বাইডেনের সময় যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ছিল ২ শতাংশের ওপরে। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ছিল ২ দশমিক ৮ শতাংশ। কিন্তু চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে জিডিপি শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যা ২০২২ সালের পর প্রথম সংকোচন। গত বুধবার মার্কিন বাণিজ্য পরিদপ্তর জানিয়েছে, বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রথম ত্রৈমাসিকে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ বার্ষিক হারে হ্রাস পেয়েছে, যা ২০২৪ সালের শেষ মাসগুলোতে ছিল ২ দশমিক ৪ শতাংশ। বাণিজ্য নীতিতে হঠাৎ পরিবর্তনের কারণে আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানায় বাণিজ্য পরিদপ্তর।

রয়টার্স জানায়, মার্কিন মন্ত্রিসভার দীর্ঘ দুই ঘণ্টার এক বৈঠক চলাকালে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা হস্তান্তর করে দেওয়া সত্ত্বেও কিছু সংখ্যা ছিল, যেগুলো আমরা ঘুরিয়ে দিয়েছিলাম আর আমরা সত্যিই সেগুলো ঘুরিয়ে দিচ্ছিলাম।’ মন্ত্রিসভার এই বৈঠক টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। এর আগে ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো অর্থনীতির সংকোচন নিয়ে বলেন, এটি হ্রাস পেয়েছে কারণ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে বিদেশ থেকে পণ্য কিনছে। তার এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানানো ট্রাম্পের আরেক দাবির সঙ্গে বিরোধপূর্ণ। ট্রাম্প বলেছিলেন, শেয়ারবাজারের দরপতনের ক্ষেত্রে শুল্কের কোনো ভূমিকা নেই। ট্রাম্প ইতিমধ্যে তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম ১০০ দিন পার করেছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র প রথম আমদ ন দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এই মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।

আরো পড়ুন:

নাফিসা কামালসহ ৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলা

সাজিদ হত্যার তদন্তে সিআইডিকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমোদন 

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পাওয়ায় নোয়াখালীর চাটখিল থানায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দায়িত্বই তাকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছে মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

জসীম উদ্দিন খান জানান, ২০১০ সালে জাহাঙ্গীর ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা নেন। কিন্তু এর আড়ালে তিনি অসংখ্য সন্দেহজনক ব্যাংকিং কার্যক্রম করেন। কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক অঙ্কের টাকা জমা হয়, যার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি ও ব্যবসার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টগুলোতে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৫৬৫ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নগদে জমা হয়েছে দেশের নানা স্থান থেকে। এসব অর্থের উৎস অজানা এবং হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক প্রমাণ মেলে।

বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দীন জানান, জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও ভাই মনির হোসেনের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অর্থ লেনদেন করতেন। জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী ২০২৪ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন। বিদেশে তাদের বিনিয়োগ বা সম্পদ ক্রয়ের কোনো সরকারি অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ মেলে।

অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার, ভাই মনির হোসেন এবং প্রতিষ্ঠান স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড যৌথভাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
  • ১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা