ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর পাকিস্তানি ক্রীড়া তারকাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্টের ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে ভারত। ‘ডিজিটাল স্ট্রাইক’ চালিয়ে ভারতের ভেতরে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ান ও শাহিন শাহ আফ্রিদির ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, সরকারি আইনি অনুরোধের প্রেক্ষিতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে লাহোরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পাকিস্তানের উইকেটরক্ষক ব্যাটার মোহাম্মদ রিজওয়ান জানালেন, ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক উত্তেজনা সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। রিজওয়ান বলেন, ‘ক্রিকেটে রাজনীতি থাকা উচিত নয়। আমি জানি না পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে কী হচ্ছে—আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করি না।’

পিএসএলে মুলতান সুলতানসের নেতৃত্ব দেওয়া রিজওয়ান আরও বলেন, ‘আমরা যখন কোহলি বা জো রুটের মতো খেলোয়াড়দের সঙ্গে দেখা করি, তখন সবাই একটি ক্রিকেট পরিবার হিসেবেই আলাপ করি। তারা আমাদের কাছ থেকে শেখে, আমরাও তাদের কাছ থেকে শিখি।’

কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলায় পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তইয়্যেবার সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে দাবি ভারতীয় গোয়েন্দাদের। এই ঘটনার পর পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের ভারতে সামাজিক মাধ্যমে কার্যক্রম সীমিত করার পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত সরকার।

এর আগে পাকিস্তানের জ্যাভলিন থ্রো তারকা আরশাদ নাদিমের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টও ভারতে সীমিত করা হয়। প্যারিস অলিম্পিক সামনে রেখে প্রস্তুতির কারণে বেঙ্গালুরুতে ‘এনসি ক্লাসিক’ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে না পারলেও তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ভারতীয় তারকা নীরাজ চোপড়া।

এছাড়া শোয়েব আখতার, শহীদ আফ্রিদি এবং বাসিত আলীর মতো সাবেক ক্রিকেটারদের ইউটিউব চ্যানেলও ভারতে সীমিত করা হয়েছে। ভারত সরকারের বক্তব্য, এসব চ্যানেল থেকে ‘উসকানিমূলক, বিভ্রান্তিকর ও ভারতের সশস্ত্র বাহিনী সম্পর্কে অপপ্রচারমূলক’ কনটেন্ট ছড়ানো হচ্ছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জওয় ন

এছাড়াও পড়ুন:

আবারও ছোট হয়ে গেছে মাছ-মুরগির টুকরো

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর ডাইনিংয়ে খাবারের মান নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ দীর্ঘদিনের। গত বছরের অক্টোবরে নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হয়। খাবারের স্বাদ ও মানে পরিবর্তন এসেছিল। ভাতের মান ছিল তুলনামূলক ভালো, স্বাদ বাড়ে ডাল-তরকারির। সাপ্তাহিক মেন্যুতে মাছ, মুরগি ও ডিমের পদ যোগ হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিছুদিন নিয়মিত তদরকিও করে। তবে সাত মাসের মাথায় খাবারের মান আগের সেই ‘খারাপ অবস্থা’য় ফিরে গেছে। প্রতি সপ্তাহে মাছ-মুরগি মেন্যুতে থাকলেও টুকরো ছোট হয়ে গেছে। প্রশাসনও এখন আর এসব নিয়ে তেমন মাথা ঘামায় না।
বর্তমানে কিছু হলের ডাইনিং সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরা পরিচালনা করছেন। এমন হলের ডাইনিংয়ের মান কিছুটা ভালে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অধীনে যেসব হলের ডাইনিং রয়েছে, সেসবের অবস্থা খারাপ।
প্রসঙ্গত, গত বছরের অক্টোবরে নতুন প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোয় শৃঙ্খলা আনয়ন, বৈধভাবে আসন বরাদ্দ, ডাইনিংয়ের মানোন্নয়ন ও নিরাপত্তায় নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। ডাইনিং কমিটি নিয়মিত তদারকি করত। তবে এখন তদারকি শিথিল হয়ে পড়ায় খাবারের মান খারাপ।
সরেজমিন শাহজালাল, শাহ আমানত, সোহরাওয়ার্দী, এফ রহমান, শহীদ ফরহাদ ও আলাওল হল পরিদর্শন করে দেখা গেছে, বেশির ভাগ হলের শিক্ষার্থীরা খাবারের মান নিয়ে অসন্তুষ্ট। রান্নায় অতিরিক্ত তেল, দীর্ঘদিন ধরে একই মেন্যু, ভাতের মান খারাপ হওয়া, তরকারির স্বাদ কমে যাওয়া ও অপরিচ্ছন্নতার অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বর্তমানে হলের ডাইনিংয়ে প্রতিদিন দুপুর ও রাতের বেলায় ভাত, ডাল, এক পদের সবজি বা তরকারি পরিবেশন করা হয়। প্রতি সপ্তাহে  মাছ বা মুরগি মেন্যুতে থাকলেও টুকরো ছোট হয়ে গেছে। খাবারের গড় দাম প্রতি বেলা ৩০-৪০ টাকা হলেও শিক্ষার্থীরা মনে করছেন এই দামে আরও ভালো খাবার দেওয়া সম্ভব।
শাহ আমানত হলের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ফাহিম আবিদ বলেন, ‘গত অক্টোবর-নভেম্বরের দিকে খাবারের স্বাদ ও মানে পরিবর্তন এসেছিল। ডাল, ভাত, তরকারি যত্ন নিয়ে রান্না হতো, স্বাদও ভালো ছিল। মাছ-মাংসের টুকরো বড় ছিল। এখন সব তরকারিই তৈলাক্ত, এত বিস্বাদ, মুখে দেওয়া যায় না। আর ডাইনিংয়ে পরিষ্কার পরিছন্নতারও অভাব রয়েছে।’ 
শাহজালাল হলের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফুর রহমান বলেন, ‘মিল সিস্টেম না থাকায় হলে খাবারের মান খারাপ হচ্ছে। ভাতের মান খুবই খারাপ, তরকারি খেতে পারি না। তদারকি না থাকায় ইচ্ছেমতো চলছে সব।’ তিনি আরও 
বলেন, ‘আমরা ব্যবসা প্রশাসন অনুষদের শিক্ষার্থীরা টিউশনের কারণে, ক্লাস শেষে শহরে চলে যাই। আমাদের পক্ষে ডাইনিংয়ের দায়িত্ব নেওয়া সম্ভব না। প্রশাসনের উচিত তদারকির মাধ্যমে খাবারের মান উন্নত করা।
সোহরাওয়ার্দী হলের শিক্ষার্থী রোকনুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের হলের ডাইনিং আমরা নিজেরা পরিচালনা করি। বাজার করি নিজেরা, পরিচালনাও করি নিজেরা। খাবারের মান ভালো করার চেষ্টা করি, তবে অনেক সময় খাবার খারাপও হয়। প্রশাসনের সহযোগিতা থাকলে আরও ভালো করার সুযোগ ছিল।’
এ.এফ. রহমান হলের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেবার হোসাইন সমকালকে বলেন, ‘গত বছরের জুলাইয়ের আগে হলে খাবারের মান খুবই খারাপ ছিল, এখন তা সহনীয় পর্যায়ে আছে। তবে মান অনেকাংশে নির্ভর করছে বাবুর্চির ইচ্ছার ওপর। যদি পুরো দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের হাতে যায়, তাহলে মান ভাল হওয়ার সুযোগ আছে। অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য মিল সিস্টেম চালু হলে ভাল হয়।
নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম কয়েক মাস ডাইনিং নিয়মিত তদারকি করা হতো। প্রভোস্ট, সহকারী প্রভোস্ট, ডাইনিং কমিটি এবং প্রশাসনের কর্মকর্তারা নিয়মিত ডাইনিং পরিদর্শনে আসতেন, শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতেন। এখন সেই তদারকি অনিয়মিত।’
ডাইনিং পরিচালক রাকিব হাসান বলেন, ‘আমাদের হলে মিল সিস্টেম চালু লয়েছে। আমরা নিজেদের টাকায় নিজেরা বাজার করে হলের ডাইনিং পরিচালনা করি। তবে যে বাজেট তাতে খাবারের মান বজায় রাখা খুব কঠিন। বাজেট কিছুটা বাড়াতে পারলে খাবারের মানও উন্নত করা সম্ভব।’

শাহ জালাল হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ফুয়াদ হাসান বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি মিল সিস্টেম ছাড়া ডাইনিংয়ের খাবারের স্বাদ ও মান টেকসই করা যাবে না। শিক্ষার্থীদের নিজ উদ্যোগে মিল চালু করতে হবে, প্রশাসন সহযোগিতা করবে।’
শাহ আমানত হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘ডাইনিংয়ের মূল দায়িত্ব আবাসিক শিক্ষার্থীদের। প্রশাসন সহযোগিতা করে যাচ্ছে। তবে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য বিকল্প খাবার ব্যবস্থার প্রয়োজন আছে।’
সোহরাওয়ার্দী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘ডাইনিংয়ের পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। শিক্ষার্থীরা নিজেরাই দায়িত্ব পালন করছে। সমস্যা হলে আমরা সমাধানে আন্তরিক।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক কামাল উদ্দিন সমকালকে বলেন, “শিক্ষার্থীদের প্রস্তাব ও আলোচনার ভিত্তিতেই হলভিত্তিক মিল সিস্টেম চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেখানে শিক্ষার্থীরা ঐকমত্যে পৌঁছেছে, সেখানে মিল সিস্টেম চালু হয়েছে, আর যেখানে ঐকমত্য হয়নি, সেখানে আগের মতো ডাইনিং চলছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মিল সিস্টেমের কারণে হলের বাইরে থাকা অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা খাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিকল্প ব্যবস্থা চালু না করা পর্যন্ত এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ