চ্যাটজিপিটির নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান ওপেনএআই সম্প্রতি জিপিটি ৪ও এআই মডেলে ইমেজ জেনারেশন টুল উন্মুক্ত করেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) কাজ লাগিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছবি তৈরি করতে সক্ষম টুলটি উন্মুক্তের পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভরে উঠেছে স্টুডিও জিবলি ঘরানার ছবিতে। চ্যাটজিপিটির নতুন টুলটি কাজে লাগিয়ে শৌখিন ছবি তৈরির পাশাপাশি পেশাদার ও সৃজনশীল কাজও করা যায়। চ্যাটজিপিটির ইমেজ জেনারেশন টুল শৌখিন ছবি তৈরির পাশাপাশি আরও যেসব কাজে ব্যবহার করা যায়, সেগুলো দেখে নেওয়া যাক—

১.

কনটেন্ট নির্মাণ ও ডিজিটাল বিপণন

শুধু কৃত্রিম ছবি তৈরি নয়, ব্যবহারকারীদের নির্দেশনা অনুযায়ী কাস্টম গ্রাফিকস, ইনফোগ্রাফিক বা ফিচার ইমেজ তৈরির পাশাপাশি সেগুলো পোস্টও করতে পারে চ্যাটজিপিটির নতুন ইমেজ জেনারেশন টুল। তাই ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, এক্স (সাবেক টুইটার) ও লিংকডইনের মতো প্ল্যাটফর্মে ছবি বা স্টোরি পোস্ট করার পাশাপাশি বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্যও চ্যাটজিপিটির নতুন ইমেজ জেনারেশন টুলটি ব্যবহার করা যেতে পারে।

২. প্রচারণা উপকরণ তৈরি

বিভিন্ন পণ্য বা প্রতিষ্ঠানের প্রচারণায় আকর্ষণীয় স্লাইড ব্যবহার করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের চাহিদা অনুযায়ী দ্রুত স্লাইড ও সংক্ষিপ্ত ভিডিও ক্লিপ তৈরি করে দিতে পারে ইমেজ জেনারেশন টুলটি। ফলে ব্যবহারকারীরা চাইলেই বিভিন্ন পণ্য বা প্রতিষ্ঠানের প্রচারণায় টুলটি ব্যবহার করতে পারবেন।

৩. পণ্যের নকশা ও প্রোটোটাইপ তৈরি

ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপ বা নতুন কোনো পণ্যের প্রাথমিক নকশা তৈরিতে অনেকেই এআই ছবি ব্যবহার করেন। এমনকি ইউজার ইন্টারফেসের বাটন, আইকনসহ ছোট ছোট উপাদানের নমুনাও তৈরি করেন কেউ কেউ। তাই পণ্যের নকশা ও প্রোটোটাইপ তৈরিতে চ্যাটজিপিটির নতুন ইমেজ জেনারেশন টুলটি বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

৪. ব্যক্তিগত শিল্পকর্ম ও ঘর সাজানো

চ্যাটজিপিটির ইমেজ জেনারেশন টুল কাজে লাগিয়ে সহজেই কাস্টম অ্যাভাটার, নিজের পছন্দ অনুযায়ী প্রোফাইল ছবি বা বিভিন্ন শিল্পকর্ম তৈরি করা যায়। তাই ব্যক্তিগত শিল্পকর্ম তৈরির পাশাপাশি ঘর সাজানোর কাজেও ব্যবহার করা যেতে পারে চ্যাটজিপিটির ইমেজ জেনারেশন টুলটি।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানকে ধাক্কা দেওয়ার কৌশল যে কারণে ব্যর্থ

কয়েক দশকের মধ্যে ১৩ জুন ইরানে আগ্রাসী হামলা চালায় ইসরায়েল। লেবাননে অতীত সাফল্যের পুনরাবৃত্তি করতে হামলার ছক কষেছিল দেশটি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে চালানো ওই হামলায় হিজবুল্লাহর অভিজাত রাদওয়ান ইউনিটকে নেতৃত্বশূন্য করা হয়েছিল। অত্যন্ত দ্রুতগতির সঙ্গে পরিচালিত সেই হামলায় শেষ পর্যন্ত মহাসচিব হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যা করেছিল তেল আবিব। তবে ইরানে সেই কৌশল কাজ করেনি। 

প্রথম দিন ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ইরানজুড়ে একাধিক আক্রমণ চালায়। একটি আবাসিক টাওয়ারে ৬০ জন বেসামরিক লোক নিহত হন, বেশ কয়েকজন শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী এবং সিনিয়র সামরিক কমান্ডারকে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ বিমান প্রতিরক্ষা এবং পারমাণবিক অবকাঠামোগত স্থাপনাগুলোয় আঘাত করা হয়। 

একটি ব্যর্থ কৌশল 

অপ্রতিরোধ্য শক্তি ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে শত্রুর ওপর দ্রুত আধিপত্য অর্জনের এই কৌশল লেবাননে সাফল্য পেয়েছিল। তবে ইরানের আরও অনেক বেশি স্থিতিস্থাপক জাতির সঙ্গে এ কৌশলে সফলতা পাওয়া সম্ভব বলে মনে হচ্ছে না। তবে অন্তত কৌশলগতভাবে ইসরায়েল তার হামলার মাধ্যমে ইরানকে হতবাক করতে সক্ষম হয়েছে। যদিও এর বেশির ভাগই অভ্যন্তরীণ অনুপ্রবেশ এবং নাশকতামূলক অভিযানের কারণে হয়েছিল। 

তেহরানের জবাব 

ইসরায়েলের হামলার জবাবে ইরানের প্রতিক্রিয়া ছিল দ্রুত। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তেহরান তিনটি উল্লেখযোগ্য প্রতিশোধমূলক অভিযান শুরু করে। দেশের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার, ড্রোন ইউনিট পুনরায় সক্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কমান্ড পোস্টগুলো পূরণ করা হয়। আবার অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ইরানি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুর ছবি ও ভিডিও তেহরানের অপারেশনাল পুনরুদ্ধার এবং কৌশলগত বার্তারও ইঙ্গিত দেয়। 

সবার জন্য অথবা কারও জন্য নয় 

যুক্তরাষ্ট্র যদি আক্রমণ করে, তবে ইরান স্পষ্টভাবে তার কৌশল ঘোষণা করেছে। সবার জন্য অথবা কারও জন্য নয়– যার অর্থ সমুদ্র নিরাপত্তা, জ্বালানি নিরাপত্তা এবং পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন ঘাঁটির নিরাপত্তা। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির শীর্ষ পররাষ্ট্রনীতি উপদেষ্টা জাওয়াদ লারিজানি যেমনটা বলেন, পারস্য উপসাগরে একটি পুরোনো নিয়ম রয়েছে। যদি আমাদের (ইরানের) তেল স্থাপনাগুলো গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে আমরা এই অঞ্চলের কোনো দেশকে তাদের তেল ব্যবহার করতে দেব না। 

সংসদের জাতীয় নিরাপত্তা কমিশনের সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইসমাইল কাউসারির যুক্তি– হরমুজ প্রণালি বন্ধ করার মাধ্যমে সহজেই ইরান এ কাজ করতে পারে। 

ইরানের যুদ্ধক্ষেত্রের ভুল ব্যাখ্যা 

তেল আবিব ভুল করে ধরে নিয়েছে যে, লেবাননের কৌশলটি ব্যাপক ফলপ্রসূ। ইরানের নেতৃত্বকে সরিয়ে দিতে তাদের কপি-পেস্ট পরিকল্পনায় বেশ কিছু ভুল গণনা দুর্বল করে দিয়েছে। প্রথমত, ইরানের সামরিক কমান্ড বিশাল, অভিজ্ঞ ও দ্রুত পরিবর্তনযোগ্য। 

দ্বিতীয়ত, ইরানের বিশাল আকার গুরুত্বপূর্ণ সম্পদের কৌশলগত বিস্তৃত করার সুযোগ করে দেয়। ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো পশ্চিমাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোয় হামলা করলেও দেশটির বেশির ভাগ অবকাঠামো পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলে রাখা আছে। 

তৃতীয়ত, ইসরায়েলের গোয়েন্দা ব্যবস্থা ইরানি কমান্ড পর্যায়ে প্রবেশ করলেও এটি পূর্ণমাত্রায় আধিপত্য অর্জন করতে পারেনি। ইসলামিক প্রজাতন্ত্র কাউন্টার-ইন্টেলিজেন্স অপারেশনের ক্ষমতা ধরে রেখেছে। 

সংহতির ইরানি সংস্করণ 

তেল আবিবের সবচেয়ে বড় ভুল হিসাব ছিল, ইরানের অভ্যন্তরীণ সংহতির বিচার করায়। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিশ্বাস, হঠাৎ বহিরাগত হামলা ইরানের বিরোধী শক্তিগুলোকে সক্রিয় করবে এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী, জঙ্গি ও সরকার সমালোচকরা রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করে দেবে। কিন্তু বহিরাগত হুমকির মুখে ইরানের রাজনৈতিক ঐক্য বারবার প্রদর্শিত হয়েছে। 

তেল আবিব তিন দিনের মধ্যে ২২৪ জন ইরানি নাগরিককে হত্যা করেছে, যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক। এই ধরনের উস্কানির পরিণতি রয়েছে। এই সংঘাতে ইরানের প্রতিরোধ কেবল সামরিক নয়, এটি সামাজিক। 

যে কোনো সংঘাতের মতো এ যুদ্ধের ফলাফলও অনিশ্চিত। এটি আরও বিস্তৃত যুদ্ধে পরিণত হবে নাকি আরেকটি আঞ্চলিক অচলাবস্থার দিকে ঠেলে দেবে, তা ইসরায়েলের ওপর কম নির্ভর করছে। বরং তেল আবিবকে অনুসরণ করে যুক্তরাষ্ট্র পুরো অঞ্চলকে আগুনে পুড়িয়ে দিতে ইচ্ছুক কিনা, তার ওপর বেশি নির্ভর করে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ