ইসরায়েল–যুক্তরাষ্ট্রের গাজা নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার কে এই আলবানিজ
Published: 11th, July 2025 GMT
গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের অভিযানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে প্রতিবেদন দেওয়ায় জাতিসংঘের বিশেষ দূত ফ্রানচেসকা আলবানিজের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন।
এ নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে আলবানিজের যদি কোনো সম্পদ থেকে থাকে, তা জব্দ করা হবে। এ ছাড়া তাঁর যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণও সীমিত হয়ে পড়বে।
গত বুধবার এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, এই ইতালীয় আইনজীবী (আলবানিজ) যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক যুদ্ধ চালাচ্ছেন।
ফ্রানচেসকা আলবানিজের জন্ম ইতালির আরিয়ানো ইরপিনো শহরে, ১৯৭৭ সালে। তিনি একজন মানবাধিকার আইনজীবী। আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে তাঁর অভিজ্ঞতা দুই দশকের বেশি। তিনি পিসা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক এবং লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ (এসওএএস) থেকে মানবাধিকার আইনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
৪৮ বছর বয়সী এই আইনজীবী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ওয়াশিংটনের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ইন্টারন্যাশনাল মাইগ্রেশনের অ্যাফিলিয়েট স্কলার হিসেবে কাজ করছেন।
আলবানিজ নিজস্ব নকশায় তৈরি একটি কোর্স বেথলেহেম, বিরজেইত ও সালেন্তোর মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনাবাসিক অধ্যাপক হিসেবে পড়ান। তাঁর এ কোর্সের বিষয়বস্তু হলো‘ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির প্রতি মানবিক, আইনি ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া’।
আলবানিজ তাঁর কর্মজীবনে জাতিসংঘের বেশ কয়েকটি পদে কাজ করেছেন। এর মধ্যে মরক্কোতে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচিতে দুই বছর ও জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের কার্যালয়ে মানবাধিকার কর্মকর্তা হিসেবে চার বছর কাজ করেছেন। এ ছাড়া জেরুজালেমে তিনি ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থায় (ইউএনআরডব্লিউএ) আইন কর্মকর্তা হিসেবেও কাজ করেছেন।
আলবানিজ ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের আইনি পরিস্থিতি নিয়ে অনেক লেখা লিখেছেন। তিনি ‘প্যালেস্টাইনিয়ান রিফিউজিস ইন ইন্টারন্যাশনাল ল’ (২০২০) ও ‘জে’অ্যাকিউজ’ (২০২৪) নামের দুটি বইয়ের সহলেখক।
জাতিসংঘের বাইরে তিনি থিঙ্কট্যাংক আরব রেনেসাঁস ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টে অভিবাসন ও আশ্রয়প্রার্থীদের বিষয়ে গবেষণা ও আইনি সহায়তা দেন। তিনি গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের সংগঠন ‘গ্লোবাল নেটওয়ার্ক অন দ্য কোয়েশ্চেন অব প্যালেস্টাইন’–এর সহপ্রতিষ্ঠাতা।
২০২২ সালের মে মাস থেকে আলবানিজ অধিকৃত ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে জাতিসংঘের বিশেষ দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ দায়িত্ব পালনকালে তিনি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইনি মতামত ও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। ইসরায়েলের মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে কয়েকজন জোরালো দাবি জানিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে তিনি অন্যতম।
আলবানিজের প্রকাশিত প্রতিবেদনের মধ্যে আছে ফিলিস্তিনে আত্মনিয়ন্ত্রণ আইনের লঙ্ঘন; ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার ব্যাপক বঞ্চনা; ফিলিস্তিনি শিশুদের অধিকার লঙ্ঘন ও ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের গণহত্যার অভিযোগসংক্রান্ত দুটি প্রতিবেদন।
গত বছরের মার্চে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে উপস্থাপিত এক প্রতিবেদনে আলবানিজ বলেন, গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড গণহত্যার পর্যায়ে পৌঁছেছে—এমন বিশ্বাস করার যৌক্তিক ভিত্তি আছে।
আলবানিজ সেখানে গণহত্যার প্রমাণ হিসেবে গণহারে হত্যা, বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংস এবং এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি, যেগুলো ফিলিস্তিনিদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে—এসব বিষয় তুলে ধরেন।
আরও পড়ুনইসরায়েলের সমালোচনা করায় জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা০৯ জুলাই ২০২৫‘গণহত্যার অর্থনীতি’ নিয়ে প্রতিবেদন
ফ্রানচেসকা আলবানিজের সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনই যুক্তরাষ্ট্রের এ নিষেধাজ্ঞার অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেছেন মার্কো রুবিও।
গত ৩০ জুন প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে আলবানিজ ৬০টির বেশি কোম্পানির নাম প্রকাশ করেন। যার মধ্যে আছে মার্কিন টেক জায়ান্ট গুগল, অ্যামাজন ও মাইক্রোসফট। আলবানিজ বলেন, এসব কোম্পানি ‘ইসরায়েলের দখলদার অর্থনীতিকে একধরনের গণহত্যার অর্থনীতিতে রূপান্তর’ করতে ভূমিকা রাখছে।
প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ও জাতীয় বিচারব্যবস্থাকে এসব কোম্পানির নির্বাহী ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত ও বিচার করার আহ্বান জানানো হয়। জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলোকে তিনি এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও সম্পদ জব্দ করারও সুপারিশ করেন।
রুবিও অভিযোগ করেন, আলবানিজ প্রধান প্রধান মার্কিন সংস্থাসহ বিশ্বজুড়ে কোম্পানিগুলোকে ‘হুমকি দিয়ে চিঠি’ পাঠিয়েছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে চরম ও ভিত্তিহীন অভিযোগ এনেছেন। এ ছাড়া তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করেছেন।
রুবিও বলেন, ‘আমাদের জাতীয় স্বার্থ ও সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলে এমন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক যুদ্ধ আমরা বরদাশত করব না।’
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আলবানিজ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তাঁর তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির সুপারিশ করেছেন। এ অভিযোগপত্র গত নভেম্বরে দাখিল করা হয়।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা ও আফগানিস্তানে মার্কিন অপরাধ তদন্তে যুক্ত থাকায় গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের চারজন বিচারকের ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
এ ছাড়া গত মাসে ট্রাম্প প্রশাসন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে একটি চিঠি পাঠিয়ে আলবানিজকে তাঁর পদ থেকে অপসারণের আহ্বান জানিয়েছে।
রুবিও অভিযোগ করেন, আলবানিজ প্রকাশ্যে ইহুদিবিদ্বেষ, সন্ত্রাসবাদের প্রতি সমর্থন এবং যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও পশ্চিমা বিশ্বকে ঘৃণা করেন। তবে আলবানিজ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
আরও পড়ুনইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করুন: জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ০৪ জুলাই ২০২৫চলতি সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডলইস্ট আইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে (নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার আগেই নেওয়া হয়) তিনি গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ থেকে লাভবান হওয়ার জন্য বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর তীব্র সমালোচনা করেন।
আলবানিজ বলেন, ‘ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রতিরক্ষাশিল্পের সঙ্গে একটি অভিজাত জোট জড়িত, যারা এ গণহত্যা থেকে ধনী হচ্ছে। আজ.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ম নব ধ ক র আলব ন জ র ইসর য় ল র গণহত য র প রক শ কর ছ ন ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই গণহত্যার দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হলেন চৌধুরী মামুন
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করেছেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। ট্রাইব্যুনালে তিনি বলেছেন, ‘আমি জুলাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।’
জুলাই গণহত্যা চলাকালীন পুলিশ প্রধানের দায়িত্ব পালন করা চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘এই মামলায় আমি রাজসাক্ষী হতে চাই।’
আজ বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ বক্তব্য দেন তিনি।
এর আগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল। বিচারপতি মো গোলাম মোর্তোজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইবুনাল আজ এ অভিযোগ গঠন করেন।
অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম কোনো মামলার বিচার শুরু হল। পাশাপাশি এ মামলার সব সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ৩ আগস্ট দিন ধার্য করেন ট্রাইবুনাল।
মামলার অপর দুই আসামি হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও কারাগারে থাকা সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। অভিযোগ গঠনের সময় মামুন ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন।
ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।