আরবি ভাষার রূপ মোট তিনটি। ধ্রুপদি আরবি, আধুনিক লেখ্য আরবি ও আধুনিক কথ্য বা চলতি আরবি। ধ্রুপদি আরবি ষষ্ঠ শতক থেকে প্রচলিত ও এটিই কোরআনের ভাষা। ইতিহাসে কোরআনের আরবি বা ধ্রুপদি আরবির কবিদের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। কবি আল-মুতানাব্বি ও ইবনে খালদুন ধ্রুপদি আরবির বিখ্যাত কবি ছিলেন। আধুনিক লেখ্য আরবিতে আধুনিক শব্দ যোগ হয়েছে ও অতি প্রাচীন শব্দগুলি বর্জন করা হয়েছে, কিন্তু এ সত্ত্বেও ধ্রুপদি আরবির সঙ্গে এর পার্থক্য খুব বেশি নয়।
সমাজে আল্লাহ্ সচেতন এমন অনেক মানুষ রয়েছেন যারা সরাসরি কোরআন পড়ে বুঝতে চান; কোরআনকে সরাসরি বুঝে বুকে ধারণ করতে চান; কোরআনের আলোয় আলোকিত হয়ে জীবন গড়তে চান। তাদের জন্য খুব সহজে কোরআন বোঝার পাঁচটি কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হলো:
১.
কোরআনের মধ্যে ব্যস্ত থাকুন
কোরআনের মধ্যে নিজেকে বেশি ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করুন। সবার আগে শুদ্ধভাবে কোরআন তিলাওয়াত করতে শিখুন। যথাসম্ভব বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করুন। কোরআন তিলাওয়াত মানুষের অশান্ত হৃদয়কে প্রশান্ত করে তোলে। আমরা যদি কোরআনের মধ্যে নিজেদের ব্যস্ত রাখতে পারি, তাহলে আমরা আল্লাহর কাছ থেকে রহমত ও করুণা পাব। তিনি কোরআন বোঝায় আমার আগ্রহ বৃদ্ধি করবেন।
আরও পড়ুনস্বজাতিকে বাঁচাতে চাইল যে কাঠমিস্ত্রি১৬ এপ্রিল ২০২৫২, শব্দার্থ জানুন
শব্দের অর্থ জানার মাধ্যমে কোরআনকে বুঝতে চেষ্টা করুন। কোরআনে কতগুলো শব্দ আছে জানেন? পুনরাবৃত্তিসহ কোরআনে মোট ৭৭,৪৩৯টি শব্দ আছে (আবদুল ফাত্তাহ মুহাম্মাদ মুহাম্মাদ সালামাহ, আদওয়াউন আ’লাল কোরআন করিম-বালাগাতুহু ওয়া ই’জাযুহূ, মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়: সৌদি আরব, ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দ, পৃ. ৪)।
তার মধ্যে ৬০টি শব্দ পুরো কোরআনের শব্দভান্ডারের অর্ধেক। ২৫০টি শব্দ যা পুরো কোরআনের ৭০ ভাগ। বাকি ৩০ ভাগ শব্দ ধীরে ধীরে সারা জীবনভর পড়তে পড়তে চলতে ফিরতে জানতে পারবেন। শুধু সুরা ফাতিহায় ব্যবহৃত শব্দগুলো কোরআনে এসেছে ৭,৫০০ বার। সুরা ফিলে আছে ৩৭টি নতুন শব্দ, কোরআনে যেগুলোর পুনরাবৃত্তি হয়েছে ২১,৬২৬ বার, যা কোরআনের মোট শব্দের ২৭.৯২ (সাতাশ দশমিক বিরানব্বই) ভাগ।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত আল্লাহ্, আদম, নবী, রাসুল, দুনিয়া, আখিরাত ও সালাত ইত্যাদি, নামাজে নিত্যদিন পঠিত ছয়টি ছোট সুরা এবং সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার ইত্যাদির মতো সাধারণত ব্যবহৃত জিকির এবং চারটি অধিকতর ব্যবহৃত দোয়ার শব্দ জানি তাহলেই আমাদের জানা হয়ে যাবে প্রায় ৪০,০০০ (চল্লিশ হাজার) শব্দ, যা পুরো কোরআনের অর্ধেকের বেশি।
আরও পড়ুনজিভের জড়তা কাটাতে মুসা (আ.) যে প্রার্থনা করেছিলেন০৮ এপ্রিল ২০২৫৩. ব্যাকরণ শিখুন
কোরআনের আরবি ব্যাকরণ জানার মাধ্যমে কোরআন বুঝুন। আরবি শেখা আর কোরআনের আরবি শেখা এক জিনিস নয়। কোরআন বুঝতে হলে মাত্র বারো থেকে পনেরটি আরবি ব্যাকরণের বিষয় জানলেই কোরআনের আরবির বেসিক জানা হয়ে যাবে আপনার।
৪. তিলাওয়াত শুনুন
বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত শুনুন। নিজের একান্ত সময়গুলো কোরআনের সঙ্গে কাটানোর চেষ্টা করুন। এতে করে কোরআন আপনার অনেক আপন হয়ে যাবে। আপনি কোরআনের অনেক কাছাকাছি চলে যাবেন। কোনো অনুবাদের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে প্রথমে নিজে নিজে কোরআনের অর্থ বোঝার চেষ্টা করুন। তারপর ভালো কোনো অনুবাদ ও ব্যাখ্যার সঙ্গে মিলিয়ে নিন। কোরআনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলুন, কোরআনই আপনাকে বাকি পথ দেখিয়ে দেবে।
আরও পড়ুনযাঁর নামে কোরআনের আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে০৮ এপ্রিল ২০২৫৫. আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করুন
কোরআন বোঝার পথে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া অন্যতম কৌশল। এটি নবী (সা.)-এর শেখানো পদ্ধতি। সকল কাজে আল্লাহ্র সাহায্য চাইতে হবে। বেশি বেশি দোয়া করুন, যেন আল্লাহ আপনার জন্য কোরআনকে আরও সহজ করে দেন।
মুহাম্মাদ মুহসিন মাশকুর: খণ্ডকালীন শিক্ষক, আরবি বিভাগ, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আরও পড়ুনকোরআনের মাধ্যমে জীবন সমৃদ্ধ করার ৭ উপায়১৭ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক রআন র আরব ক রআন র ম ক রআন ব ঝ ব যবহ ত ধ র পদ আল ল হ আরব র
এছাড়াও পড়ুন:
চুক্তি হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতি সাপেক্ষে গোপনীয়তার বিষয়টি প্রকাশ করা হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির আলোচনায় যে গোপনীয়তার বিষয়টি ছিল, চুক্তি সই হয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতি সাপেক্ষে তা প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন। তিনি বলেন, চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পর শিগগিরই হয়তো যৌথ বিবৃতি আসবে। তথ্য অধিকারের আলোকে এটা করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তোজার সঙ্গে আলাপচারিতায় বাণিজ্য উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। গোলাম মোর্তোজা ব্যক্তিগত ভেরিফায়েড পেজে ভিডিওটি প্রকাশ করেছেন। বাণিজ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, বাণিজ্য চুক্তি কাজে লাগাতে হলে নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে এ নিয়ে আত্মসন্তুষ্টির সুযোগ নেই।
গোপনীয়তার বিষয়ে শেখ বশিরউদ্দিন বলেন, বিষয়টি আন্তর্জাতিক রীতিতে নির্দিষ্ট, শুধু তা–ই নয়, স্থানীয় পর্যায়ে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক ও বিমা চুক্তিতে উপনীত হয়, তখন এই গোপনীয়তার বিষয়টি খুবই স্বাভাবিক। এমনকি দুজন ব্যক্তি সম্পদ হস্তান্তর করলেও এ ধরনের বিষয় থাকে।
শেখ বশিরউদ্দিন বলেন, ‘এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র যেখানে চুক্তির মূল নিয়ামক হিসেবে নিজস্ব নিরাপত্তার কথা বলেছে, সেখানে আলোচনায় গোপনীয়তার শর্ত থাকা অবশ্যম্ভাবী। এর মাধ্যমে দেশের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত করার কোনো উপাদান থাকলে আমরা সে চুক্তিতে করব না, সেটাই স্বভাবিক বলে মন্তব্য করেন শেখ বশিরউদ্দিন। নিজস্ব স্বার্থ বিসর্জন দেওয়ার সুযোগ নেই। নিজস্ব স্বার্থ জলাঞ্জলি দিলে সক্ষমতার ঘাটতি হবে। তাতে বাণিজ্য চুক্তি করে লাভ হবে না। স্বল্প মেয়াদে বা দীর্ঘ মেয়াদে যদি আমাদের বাণিজ্য সক্ষমতা হ্রাস পায়, কিংবা আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির কোনো ধরনের ক্ষতি হয়, সেই চুক্তি কোনোভাবেই পালনযোগ্য নয়।’
তবে আলোচনা চলাকালে দুঃখজনকভাবে চুক্তিটি ফাঁস হয়ে গিয়েছিল বলে মন্তব্য করেন শেখ বশিরউদ্দিন। সেখানে দেশের স্বার্থবিরোধী কিছু নেই। যেগুলো দেশের স্বার্থবিরোধী হতে পারত, সেখান থেকে বাংলাদেশ পরিষ্কারভাবে বের হয়ে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ২৫টি বোয়িং বিমান কেনার প্রসঙ্গে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, বাণিজ্য আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র মোটেও বিষয়টি উত্থাপন করেনি। এই বিষয়টি একমুখী। গত বছর বোয়িং ১২টি বিমান বানিয়েছে। সুতরাং এই চুক্তি অনুযায়ী তারা হয়তো ২০৩৭ সালে প্রথম বিমান সরবরাহ করতে পারবে। বরং তাদের আগ্রহ ছিল কৃষিপণ্য নিয়ে। বাংলাদেশ প্রতি ১৫ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলারের খাদ্যপণ্য আমদানি করে। যুক্তরাষ্ট্রও কৃষিপণ্যের বৃহৎ উৎপাদক। বাংলাদেশ মূলত জ্বালানি ও কৃষিপণ্যের ভিত্তিতে বাণিজ্যঘাটতি কমানোর কথা বলেছে, যেসব পণ্য এমনিতেই বাংলাদেশকে আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি ৬ বিলিয়ন বা ৬০০ কোটি ডলারের মতো। ফলে বাংলাদেশে তুলা, সয়াবিন, ভুট্টা, গমজাতীয় পণ্য আমদানি বাড়িয়ে ২০০ কোটি ডলারের বাণিজ্যঘাটতি কমানোর চেষ্টা করতে পারে।
বোয়িং বিমান খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয় উল্লেখ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, বিমানের পরিচালনা সক্ষমতা বৃদ্ধি না করে বিমান কিনে তেমন লাভ হবে না। অন্তর্বর্তী সরকার সেই চেষ্টা করছে। তবে বিমানের পক্ষে অতিরিক্ত এক কোটি যাত্রী পরিবহনের সুযোগ আছে। সেই বিবেচনায় ২৫টি বিমান খুব বেশি কিছু নয়। বিমানের পরিচালন সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি আশাবাদী।