৪৩তম বিসিএসের গেজেটে বাদ পড়া প্রার্থীরা পঞ্চম দিনের মতো অনশনে, তিনজন অসুস্থ
Published: 3rd, May 2025 GMT
৪৩তম বিসিএসে দ্বিতীয় গেজেট থেকে বাদ পড়া কয়েকজন প্রার্থী গেজেটভুক্ত করা ও ভেরিফিকেশন নীতি প্রণয়নের দাবিতে টানা পাঁচ দিন ধরে আমরণ অনশন করছেন। এর মধ্যে তিনজন অসুস্থ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
অসুস্থ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত ও গেজেট থেকে বাদ পড়া মো.
গত মঙ্গলবার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে অনশন করছেন ৪৩তম বিসিএসের গেজেটে বাদ পড়া প্রার্থীরা। সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কেউ তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।
অনশনে বসা প্রার্থীরা বলেন, ‘গেজেটের প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত আমরণ অনশন চলবে। কয়েকবার সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন ও পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেও সরকারের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাইনি। তাই এখন আমরণ অনশন শুরু করেছি।’
আমরণ অনশনে বসা প্রার্থীরা হলেন, শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ পাওয়া মো. ফয়সাল চোকদার, মো. মতিউর রহমান, এম এ হান্নান সরকার, দেবাশীষ ঘোষ ও সমরজিৎ চক্রবর্তী।
আরও পড়ুনবিটিআরসি নেবে ৩৯ জন, নবম-১০মসহ বিভিন্ন গ্রেডে চাকরি১ ঘণ্টা আগেগেজেটভুক্ত করা ও ভেরিফিকেশন নীতি প্রণয়নের দাবিতে আমরণ অনশন করছেন ৪৩তম বিসিএসে দ্বিতীয় গেজেট থেকে বাদ পড়া কয়েকজন প্রার্থীউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আমরণ অনশন আম দ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
যে পন্থীই হোন না কেন, একাত্তর আমার ইতিহাসের অংশ: ফরহাদ মজহার
ভাষা–সংস্কৃতি ও ধর্মের মধ্যে বিভাজন টিকিয়ে রাখলে দেশ আবার গৃহযুদ্ধের মধ্যে চলে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, ‘একাত্তরকে যদি আমরা মুছে দিতে চাই, এটা আমরা মারাত্মক ভুল করব। আমি একটা কথা সবাইকে বলি, আপনি যে পন্থীই হোন না কেন, একাত্তর নিয়ে কোনো দেনদরবার চলবে না, একাত্তর আমার ইতিহাসের অংশ। আমি বাংলাভাষী, বাংলা আমার সংস্কৃতি এবং একই সঙ্গে ইসলাম আমার ধর্ম। আমাকে ইসলাম থেকে যেমন আপনি বঞ্চিত করতে পারবেন না, আমার বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি থেকেও আপনি আমাকে বঞ্চিত করতে পারবেন না। এই বিভাজন যদি টিকিয়ে রাখেন, আমরা আরেকবার গৃহযুদ্ধের মধ্যে চলে যাব। যারা অতীতে ভুল করেছিল, তাদের ভুলটা যদি তারা স্বীকার করে, তাদের মধ্যে অনুশোচনা আসে, তাদের অন্তর্গত করে নিন বৃহত্তর সমাজের মধ্যে।’
গতকাল বুধবার রাতে পঞ্চগড় সরকারি অডিটরিয়ামে পঞ্চগড়ের নাট্যসংগঠন ভূমিজের আয়োজনে ‘শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক চেতনায় নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা: রাষ্ট্র ও সমাজের ভূমিকা’ শীর্ষক একক বক্তৃতা অনুষ্ঠানের মুখ্য আলোচক হিসেবে ফরহাদ মজহার এ কথাগুলো বলেন। ভূমিজের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক সরকার হায়দারের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন লেখক ও গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী।
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, একাত্তরে আমরা ভুল করিনি। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির জন্য যে লড়াই, এটা অবশ্যই সঠিক ছিল। কিন্তু ভুল কোথায় করেছিলাম? ভুল করেছি যে একাত্তরে যখন সংগ্রাম করেছি, তখন আমরা বলেছি কি মুক্তিযুদ্ধ করেছি, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য? আপনাদের মনে আছে না? মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা। তাহলে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাকে অস্বীকার করে যখন আপনি বাহাত্তরের সংবিধান চাপিয়ে দিলেন, দিল্লির প্ররোচণায়, বাঙালি জাতিবাদীদের প্ররোচণায়, আপনি ঢোকালেন বাঙালি জাতিবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। না, এটা তো আমাদের সে সময় আন্দোলনের অংশ ছিল না। এটার জন্য তো আমরা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করিনি। আপনারা চাপিয়ে দিয়েছেন, অতএব বাহাত্তর সালের সংবিধানকে অবশ্যই বাতিল করতে হবে। নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করতে হবে। আর এই নতুন গঠনতন্ত্রের সূত্র-শুরু-আরম্ভ হবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার কায়েম করার জন্য।’
গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আংশিক বিজয় হয়েছে উল্লেখ করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার কায়েম করা মানেই হলো ফ্যাসিবাদ, ফ্যাসিস্ট শক্তি ও ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে সংগ্রাম। এই সংগ্রামেই আমরা জয়ী হলাম ৫ আগস্টে। অল্প বিজয় হয়েছে, পূর্ণ বিজয় হয়নি। কেন পূর্ণ বিজয় হয়নি? কারণ, আমরা এই বিজয়কেও ঢুকিয়ে ফেলেছি আবার ফ্যাসিস্ট সংবিধানের অধীন। আমরা একটা সরকার গঠন করলাম, পুরোনো ফ্যাসিস্ট সংবিধানের অধীন। মানে, আওয়ামী লীগ কিন্তু ক্ষমতায়। আমার কথা শুনে অবাক হবেন না। আওয়ামী লীগ কিন্তু ক্ষমতায়, আমরা আওয়ামী লীগকে উৎখাত করতে পারিনি। আওয়ামী লীগের ভূত এখনো জারি রয়েছে। সেই আওয়ামী লীগের ভূতের নাম হচ্ছে সংবিধান, বাহাত্তরের সংবিধান। এটা কোত্থাও দাহ দেওয়া হয়নি। সব অটুট রয়েছে।’
নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়নের দাবি জানিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, ছাত্ররা যখন প্রোক্লেমেশন করতে চেয়েছে, একটা নুতন ঘোষণা দিতে চেয়েছে, সেই নতুন ঘোষণা দিতে দেননি। অধ্যাপক ইউনূস ঠিক করেননি। আমি তাঁকে কাতরভাবে অনুরোধ করব, দেরি হওয়ার আগে আপনি অবশ্যই যে ঘোষণা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি আমাদের দিয়েছেন, সেই ঘোষণা দিতে হবে। ৫ আগস্টের পরে গণসার্বভৌমত্বের যে নীতি, সেই নীতির অধীন নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করা হবে এবং সেই নতুন গঠনতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ তিনটা নীতি থাকবে জনগণের পক্ষে, যে নীতি বা আদর্শকে লঙ্ঘন করা যাবে না। এর মধ্যে এক নম্বর, রাষ্ট্র এমন কোনো আইন বা নীতি প্রণয়ন করতে পারবে না, যার দ্বারা ব্যক্তির অধিকার ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা হয়। দুই নম্বর, রাষ্ট্র এমন কোনো আইন বা নীতি প্রণয়ন করতে পারবে না, যার দ্বারা প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংস হয়। তিন নম্বর, জীবন ও জীবিকা ধ্বংস করে—রাষ্ট্র এমন কোনো আইন বা নীতি প্রণয়ন করতে পারবে না।’