গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলায় সম্প্রতি কিছু স্বঘোষিত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। ভুঁইফোড় সংগঠনের ব্যানারে চলা নামসর্বস্ব অনলাইন ও আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকার তথাকথিত সাংবাদিকরা স্থানীয় ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষের ওপর চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে চাঁদাবাজি ও মানহানির হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয়রা জানান, এসব ভুয়া সাংবাদিকদের অনেকেই মূলত মোটরসাইকেল মেকার, মোবাইল ফোন মেরামতকারী, ভেজাল ওষুধ বিক্রেতা কিংবা হোটেল ব্যবসায়ী। তারা হঠাৎ করেই হাতে মাইক্রোফোন, গলায় আইডি কার্ড, আর ফোনে পত্রিকার লোগো লাগিয়ে সাংবাদিক সেজে বিভিন্ন এলাকায় ‘কভারেজ’ বা ‘রিপোর্টিং’-এর নামে তদবির ও অর্থ আদায়ের চেষ্টা করেন।

এদের অধিকাংশের নেই কোনো বৈধ মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ, নেই সাংবাদিকতার প্রশিক্ষণ কিংবা অনুমোদিত প্রেস কার্ড। অথচ তারা ভয়ভীতি দেখিয়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে টাকা আদায় করছেন এবং প্রশাসন কিংবা পুলিশকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

স্থানীয় একাধিক মূলধারার সাংবাদিক বলেন, “এইসব ভুয়া সাংবাদিকদের জন্য প্রকৃত সাংবাদিকরা বিব্রত ও ক্ষুব্ধ। সাধারণ মানুষ এখন প্রকৃত সাংবাদিকদের প্রতিও সন্দেহের চোখে দেখছেন।”

তারা আরও জানান, ২০২৩ সালের জুনে পাঁচজন কথিত সাংবাদিক উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)-এর কার্যালয়ে এসে নিজেদের বিভিন্ন মিডিয়ার প্রতিনিধি দাবি করে আর্থিক সুবিধা চান। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, তারা কেউই প্রকৃত সাংবাদিক নন। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাদের জেল ও জরিমানা করেন।

সূত্র মতে, কিছু ভুঁইফোড় সংগঠনের সদস্যরাও নিজেদের বড় সাংবাদিক পরিচয়ে বিচার-সালিশের নামে টাকা-পয়সা ও জমি দাবি করে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছেন। এমনকি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক স্বাক্ষর আদায় করার অভিযোগও রয়েছে। এদের কেউ কেউ মাদক কারবারি ও কৃষিজমি দখলকারীদের পক্ষেও তদবির করছেন বলে জানা গেছে।

সচেতন মহল জানান, ভুয়া সাংবাদিক চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা আরও জোরদার করা প্রয়োজন, যাতে প্রকৃত সাংবাদিকতা সুরক্ষিত থাকে এবং সাধারণ মানুষ হয়রানি থেকে রক্ষা পান।

এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.

আলাউদ্দিন বলেন, “আমরা ভুয়া সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহ করছি। কেউ প্রতারণা বা চাঁদাবাজিতে জড়িত থাকলে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ বলেন, “আমরা ইতোমধ্যেই কিছু ভুয়া সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। সাধারণ মানুষকে সচেতন থাকতে হবে এবং প্রয়োজনে সরাসরি প্রশাসনকে জানাতে হবে। সাংবাদিকতা একটি সম্মানজনক পেশার অপব্যবহার বরদাস্ত করা হবে না।”

ঢাকা/রফিক/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ