অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে সহযোগীদের সঙ্গে আলোচনা করতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, আগামী ১৫ মের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা শেষ করা হবে।

আজ রোববার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে ১২-দলীয় জোটের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে আলী রীয়াজ এ কথা বলেন। ১২-দলীয় ১১ নেতা এই বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন।

আরও পড়ুনরাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার উদ্দেশ্য জাতীয় সনদ তৈরি করা: আলী রীয়াজ২৬ এপ্রিল ২০২৫

রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে আলী রীয়াজ বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য তৈরির দায়িত্ব শুধু জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের একার নয়। আপনারা যাঁরা সংগ্রামে আছেন, আপনারা যাঁরা আজ আমাদের সঙ্গে কথা বলছেন, আপনারা আপনাদের সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলুন, অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে কথা বলুন; কী করে আমরা এক জায়গায় আসতে পারি।’

ঐকমত্যে আসার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে ছাড় দেওয়ার আহ্বান জানান আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘আমাদের সবাইকে এক জায়গায় আসতে হবে। আমরা সব বিষয়ে একমত হতে পারব না, কিন্তু রাষ্ট্র গঠনের মৌলিক জায়গায় আমাদের একমত হয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’

আলী রীয়াজ বলেন, ‘শুধুমাত্র এই টেবিলে বসে, এখানে আলোচনা করে আমরা জাতীয় ঐকমত্যের চূড়ান্ত জায়গায় পৌঁছতে পারব, এটা আমরা মনে করি না।’

আরও পড়ুনআশা করি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক দলগুলো ছাড় দেবে: আলী রীয়াজ০৩ মে ২০২৫

চলমান আলোচনার সময়সীমার কথা জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ১৫ মের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা শেষ করে ঐকমত্যের বিষয়ে রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরু পরিকল্পনা রয়েছে। যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হবে, সেগুলোর ভিত্তিতে জাতীয় সনদ তৈরি হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য গঠন) মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠক উপস্থিত আছেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার ও মোহাম্মদ মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। ১২-দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (বিএলডিপি) চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম প্রমুখ বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন।

আরও পড়ুনঐকমত্য যেন প্রকৃতপক্ষেই জাতীয় হয়ে ওঠে: আলী রীয়াজ০৭ এপ্রিল ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মানবিক সহায়তা করিডরের সঙ্গে জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা জড়িত

জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে শর্ত সাপেক্ষে মিয়ানমারের বেসামরিক লোকজনের জন্য মানবিক করিডর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা ও ঐকমত্য জরুরি বলে মনে করে গণতন্ত্র মঞ্চ। মানবিক সহায়তা করিডরের সঙ্গে জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা জড়িত, এ কথা উল্লেখ করে গণতন্ত্র মঞ্চ আশা প্রকাশ করেছে, যেখানে জাতীয় নিরাপত্তা জড়িত, সেখানে অন্তর্বর্তী সরকার একক সিদ্ধান্ত না নিয়ে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।

আজ শনিবার এক যৌথ বিবৃতিতে গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতারা এসব কথা বলেছেন। মঞ্চভুক্ত দল নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু (মঞ্চের সমন্বয়ক), রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন এই বিবৃতিতে সই করেছেন।

গণতন্ত্র মঞ্চের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ইতিমধ্যে রোহিঙ্গা সংকট জটিল আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। এই সংকটের সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এ বিষয়ে আলাপ–আলোচনা ও ঐকমত্য জরুরি। মানবিক সহায়তা করিডরের সঙ্গে জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা জড়িত। দেশের স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্বের সঙ্গে জড়িত এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণকে জানায়নি। এমনকি জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও কোনো আলোচনা করার প্রয়োজন বোধ করেনি।

বিবৃতিতে বলা হয়, বিগত স্বৈরাচারী সরকার একক সিদ্ধান্তে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয় এবং বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বসবাস করছে। এ কারণে বাংলাদেশ নিরাপত্তাসহ সামাজিক নানা সমস্যায় জর্জরিত। সংবাদমাধ্যমের বরাতে আমরা জেনেছি, মিয়ানমার সরকার প্রথম দফায় ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে সম্মত হয়েছে। তবে এরপরই ইতিমধ্যে আরও ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কথা শোনা যাচ্ছে। এতে করে সমস্যা আরও বাড়বে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।

গণতন্ত্র মঞ্চ মনে করে, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে গত বছরের ৫ আগস্ট যে নতুন বাংলাদেশের সূচনা হয়েছে, সেটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিমূলক ও স্বচ্ছতার হবে। তাদের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে রাষ্ট্রের সব সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। আমরা আশা করি, যেখানে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা জড়িত, সেখানে অন্তর্বর্তী সরকার একক সিদ্ধান্ত না নিয়ে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। দেশের নিরাপত্তা সবার আগে। তাই স্পর্শকাতর এই বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে বলে গণতন্ত্র মঞ্চ বিশ্বাস করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাষ্ট্র গঠনে মৌলিক জায়গায় সবাইকে এক জায়গায় আসতে হবে: আলী রীয়াজ 
  • ১৫ মের মধ্যে শেষ হবে ঐকমত্য কমিশন-রাজনৈতিক দলের প্রাথমিক আলোচনা: আলী রীয়াজ
  • ন্যূনতম ঐকমত্যে পৌঁছে জাতীয় নির্বাচনের দাবি ১২ দলীয় জোটের
  • সংসদ নির্বাচনের পর স্থানীয় নির্বাচন চায় এনপিপি
  • রাজনৈতিক দল নির্বাচন চাইলে ট্রল অনৈতিক: ব্যারিস্টার ফুয়াদ 
  • এনসিপির নেতা আখতার হোসেনের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ে কী বললেন‌ ওঁরাও নারী
  • মানবিক সহায়তা করিডরের সঙ্গে জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা জড়িত
  • বিএনপি সমঝোতা চায়, ক্ষমা ও আওতা ঠিক হবে পরে
  • রাজনৈতিক পক্ষগুলোর ন্যূনতম ঐকমত্যে আসা দরকার: জোনায়েদ সাকি