নৌকায় জন্ম, নৌকায় মৃত্যু, মাঝে ভাসমান জীবন
Published: 5th, May 2025 GMT
দুপুর গড়িয়ে সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়েছে। বরিশালের লাহারহাট বন্দরে বুখাইনগর নদের পাড়ে শুরু হয়েছে মাছের পাইকারদের ব্যস্ততা। ছোট ছোট কোষা নৌকা নিয়ে আড়িয়ালখাঁ নদের শাখা ডাকাতিয়া-কালাবদর নদী থেকে মাছ ধরে ফিরছেন জেলেরা। নৌকার খোলে তপসি, পোয়া, বায়লা, টেংরাসহ হরেক রকমের মাছ। আছে মৌ কাঁঠালি চিংড়ি, গলদাও। প্রতিটি নৌকায় নারী-পুরুষ-শিশু-সম্পূর্ণ পরিবার। নদীই তাঁদের জীবিকা, নদীই সংসার।
দুপুরের পর থেকে বিকেল পর্যন্ত বসে লাহারহাটের এই পাইকারি মাছের হাট। এখানকার মাছ শুধু বরিশাল নয়, পাঠানো হয় ঢাকার বড় আড়তেও। মাছ ধরে ফেরা নৌকাগুলো ঘাটে বেঁধে জাল ছাড়াচ্ছেন জেলেরা। জালের সঙ্গে উঠে আসা আবর্জনা ঝেড়ে ফেলছেন। দক্ষিণ পারে লাহারহাট বাজার, উত্তর পারে সারিবাঁধা বড় নৌকায় এই জেলেদের বসতি—তাঁরা মান্তা জনগোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত।
এই সম্প্রদায়ের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না মিলেমিশে আছে নদী ও নৌকায়। যুগের পর যুগ তাঁরা বাস করছেন এই জলঘেরা জীবনে। এই জেলেদের মধ্যে আগেভাগে ঘাটে ফিরেছেন মো.
ঘাটের পাশে নদীভাঙন রোধে ফেলা জিও ব্যাগের ওপরে বসে পরিবারের সবাইকে নিয়ে জাল ছাড়াচ্ছেন আয়নাল। ছোট ছেলে ইছা নৌকার গলুইয়ে বসে খেলছে। কোমরে প্লাস্টিকের ভাসা বাঁধা, নদীতে পড়ে গেলেও যেন ভেসে থাকে। অতল নদী, তবু শিশুটি নৌকার গলুইয়ে বসে পানি ধরছে, যেন ডরভয়হীন জলবীর! মা–বাবাও নির্ভার। কী মাছ পেলেন, জিজ্ঞেস করতেই আয়নাল বলেন, ‘অল্প কয়ডা পোমা, রামসোস (তপসি) পাইছি। এহন আর গাঙ্গে হেই রহম মাছ নাই।’
মান্তা সম্প্রদায়ের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না মিলেমিশে আছে নদী ও নৌকায়উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আয়ন ল
এছাড়াও পড়ুন:
কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য আহরণ শুরু হচ্ছে শনিবার মধ্যরাতে
তিন মাস দুই দিন পর কাপ্তাই হ্রদে শুরু হচ্ছে মৎস্য আহরণ। শনিবার (২ আগস্ট) মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরতে পারবেন জেলেরা।
কাপ্তাই হ্রদে পর্যাপ্ত পানি থাকায় কয়েক বছরের মধ্যে এবার নির্দিষ্ট সময়ে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে জেলা প্রশাসন। অন্যান্য বছর ২-৩ দফা সময় বাড়িয়ে প্রায় চার মাস পর মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হতো। কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের বংশবৃদ্ধি, প্রজনন এবং অবমুক্ত করা মাছের বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছর তিন মাস কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দেয় জেলা প্রশাসন।
এদিকে, মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর শুধু জেলে পাড়া নয়, কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে জেলার সবচেয়ে বড় মৎস্য অবতরণকেন্দ্র বিএফডিসি ঘাট। মাছ পরিবহন ও সংরক্ষণের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে ড্রাম, বরফ ভাঙার মেশিন। দীর্ঘ ৯২ দিনের কর্মহীন জীবনের অবসান ঘটাতে প্রহর গুনছেন জেলেরা। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সেরে রেখেছেন ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি)।
বিএফডিসি সূত্র বলছে, কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন, অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য ১ মে থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে তিন মাস মাছ শিকার বন্ধ রাখা হয়। এ সময়ে হ্রদে প্রায় ৬০ মেট্রিক টন কার্প জাতীয় মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়। কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন প্রায় ২৬ হাজার জেলে।
রাঙামাটির শহরের পুরান পাড়া জেলা পল্লীর বাসিন্দা নেপাল দাশ জানিয়েছেন, মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞাকালে যে সরকারি সহায়তা পাওয়া যায়, তাতে পরিবার নিয়ে চলা কঠিন। দীর্ঘ তিন মাস পর মাছ ধরতে নামতে পারব, এতে খুশি আমরা।
নতুন পাড়ার জেলে অমর কান্তি দাশ বলেছেন, হ্রদে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মাছগুলো বড় হওয়ার সুযোগ পাবে। তবে, পানিতে ঢেউ থাকায় শুরুতে বেশি মাছ পাওয়া যাবে না। পানি কিছু কমে আসলে ও স্থির হলে ভালো মাছ পাব, আশা করি। হ্রদে নামার জন্য যা যা প্রস্তুতি, সবকিছু শেষ করেছি। জাল ও নৌকা মেরামত করা হয়েছে। এখন শুধু লেকে নামার অপেক্ষা।
রাঙামাটি মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি উদয়ন বড়ুয়া বলেছেন, এবার নিষেধাজ্ঞার শুরু থেকে পর্যাপ্ত বৃষ্টির ফলে কাপ্তাই হ্রদে যথেষ্ট পানি থাকায় মাছ প্রথম থেকেই প্রজনন এবং বড় হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। আশা করছি, এবার পর্যাপ্ত মাছ পাওয়া যাবে। ব্যবসায়ীরা সব প্রস্ততি নিয়েছেন। রবিবার সকাল থেকে বিএফডিসি ঘাটে মাছ আসবে।
বিএফডিসির রাঙামাটি অঞ্চলের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. ফয়েজ আল করিম বলেছেন, নিষেধাজ্ঞাকালীন আমাদের উপকেন্দ্রগুলোর যেসব অবকাঠামো সংস্কারের প্রয়োজন ছিল, সেসব আমরা শেষ করেছি। অন্যান্য যেসব প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন, সেসবও শেষ হয়েছে। আশা করছি, গত বছরের মতো এবছরও ভালো মাছ পাওয়া যাবে।
ঢাকা/শংকর/রফিক