জরাজীর্ণ ঘরেই স্বপ্ন বুনছে ওরা। একটি-দুটি নয়– একাধিক শ্রেণির শিক্ষার্থী গাদাগাদি করে বসে আছে একটি জীর্ণ কক্ষে। ছাদের চুন খসে পড়ছে মাথার ওপর, দেয়ালের ফাটলগুলো যেন বলে দিচ্ছে– এই বিদ্যালয় আর নিরাপদ নয় তোমাদের জন্য। শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন মৃত্যুঝুঁকি মাথায় নিয়ে স্কুলে আসছে, অভিভাবকরা থাকছেন উদ্বেগে। 
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, দীর্ঘদিন ধরে মেরামতের দাবি জানিয়ে এলেও কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অনেক অভিভাবক বাধ্য 
হয়ে সন্তানদের দূরের বিদ্যালয়ে ভর্তি করাচ্ছেন। এতে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে যেমন ভোগান্তি বাড়ছে, তেমনি ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যাও কমে যাচ্ছে।
এই চিত্র বাঞ্ছারামপুরের নগরী চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, শিক্ষক সংকট ও নিরাপত্তার অভাবে বিদ্যালয়ে আসতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে শিক্ষার্থীরা। এই অবস্থায় শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন অভিভাবক ও এলাকাবাসী। 
প্রতিদিন কাঁধে বইয়ের ব্যাগ, চোখে ভবিষ্যৎ স্বপ্ন নিয়ে স্কুলে আসে একঝাঁক শিশু। কিন্তু তাদের স্বপ্নগুলো ফিকে হয়ে যাচ্ছে জরাজীর্ণ ভবনের কারণে। বিদ্যালয়ের ছাদ ও দেয়ালের পলেস্তারা প্রতিনিয়ত খসে পড়ছে। শিশুদের মুখে হাসির বদলে ফুটে উঠছে আতঙ্ক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪০ সালে। বর্তমানে এখানে রয়েছে ১৩৯ শিক্ষার্থী। প্রধান শিক্ষকসহ পাঁচটি পদ রয়েছে শিক্ষকের। 
তবে কর্মরত রয়েছেন মাত্র তিনজন। শিক্ষক সংকট থাকলেও সেখানে শূন্যপদে শিক্ষক পদায়ন করা হয়নি।
সরেজমিন দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের একমাত্র ভবনটি দুই তলাবিশিষ্ট। নিচতলার দুটি কক্ষ ব্যবহারের অনুপযোগী। ওপরতলার দুটি কক্ষের অবস্থা ভালো নয়। তার পরও একটিতে অফিস, অন্যটিতে একযোগে একাধিক শ্রেণির শিক্ষাথীদের পাঠদান চলছে। এই বিদ্যালয়ের প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে থাকার কথা ১৫-২০ জন শিক্ষার্থী। অথচ সেখানে একটি কক্ষে বসে আছে ৯০ থেকে ১০০ জনেরও বেশি। ঘামে ভেজা গায়ে, পায়ের নিচে ধুলো আর মাথার ওপরে পলেস্তারা খসে পড়ার ঝুঁকি– এই তো তাদের প্রতিদিনের স্কুলজীবন।
অনেক অভিভাবক বুকে কষ্ট চেপে সন্তানকে দূরের স্কুলে পাঠাচ্ছেন, কেউ আবার দারিদ্র্যের কারণে পারছেন না। অভিভাবক সালেহা বেগম বলেন, ‘সকালবেলা সন্তানকে স্কুলে পাঠাই; কিন্তু সারাদিন মনে ভয়– কে জানে ও ঠিকমতো ফিরে আসবে কিনা।’
অভিভাবক শিরিনা আক্তার জানান, তাঁর মেয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তাকে স্কুলে পাঠিয়ে সারাদিন দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। মাসখানেক আগে তো এক ছাত্রের ওপর পলেস্তারা খসে পড়েছিল। তাঁর 
মেয়ে খুব ভয় পেয়েছে। তাই এখন ভাবছেন মেয়েকে অন্য স্কুলে ভর্তি করাবেন। যদিও দূরে যেতে কষ্ট হবে। কিন্তু সন্তানের জীবন তো ঝুঁকির মধ্যে ফেলে রাখা যায় না।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানজিনা আক্তার জানায়, এ বছর থেকে বৃত্তি পরীক্ষা শুরু হবে; কিন্তু শ্রেণিকক্ষের কারণে ঠিকভাবে পড়ালেখা করতে পারছে না তারা। তাদের বিদ্যালয় অনেক দিন ধরেই শ্রেণিকক্ষের সংকট। পুরোনো ভবনে ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে। মাথার ওপর ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে একজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। ভয় লাগে কখন যেন মাথার ওপর ছাদ ভেঙে পড়ে।
চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাবিকুন নাহার বলে, ‘স্কুলে ক্লাস করার সময় ভয়ে থাকি কখন মাথার ওপর ছাদ ভেঙে পড়ে। একই কক্ষে গাদাগাদি করে ক্লাস করতে হচ্ছে। আমরা নতুন একটা স্কুলভবন চাই, যেখানে ভালোভাবে পড়তে পারব।’
প্রধান শিক্ষক শাহ আলীর ভাষ্য, বিদ্যালয়টি প্রায় ৮০ বছরের পুরোনো। মাত্র তিনজন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চলছে। ভবনটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। অনেকবার লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনও কোনো সংস্কার কিংবা নতুন ভবন হয়নি। তিনি বলেন, ‘ছাদে ফাটল, দেয়ালে চিড়– সবই চোখের সামনে। প্রতিদিন ভয় নিয়ে ক্লাস নিই। শিক্ষক হিসেবে এটি আমাদের জন্য খুবই কষ্টের। আমরা চাই, দ্রুত একটি নিরাপদ ভবন তৈরি হোক, যাতে শিক্ষার্থীরা অন্তত জীবনের ঝুঁকি ছাড়া পড়াশোনা করতে পারে।’
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল আজিজ জানান, বিদ্যালয়টির সমস্যাগুলো তাদের নজরে আছে। নতুন ভবনের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। শিক্ষক সংকটের বিষয়ে ডিপিও অফিসে কথা বলে একজন শিক্ষককে প্রেষণে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম থ র ওপর জন শ ক ষ পল স ত র

এছাড়াও পড়ুন:

একা এক সমুদ্রের তীরে বসে থাকলে কী মনে হয় মিমের

২ / ৯আজ সকালে সমুদ্রসৈকতের বেশ কয়েকটি ছবি পোস্ট করেছেন মিম। অভিনেত্রীর ফেসবুক থেকে

সম্পর্কিত নিবন্ধ