গত সোমবার ভোরে সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েন ‘ইন্ডিয়ান আইডল’ গায়ক পবনদীপ রাজন। ভারতের উত্তর প্রদেশের আমরোহা জেলায় দিল্লি জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে গায়কের গাড়ি। তাঁর গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লাগে একটি মালবাহী ট্রাকের। পথচারীরা তাঁদের উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নেন এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য দিল্লি এনসিআরের ফরটিস হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনায় হাড় ভেঙেছে তাঁর, লেগেছে মাথায় চোট। টানা ছয় ঘণ্টা ধরে চলে অস্ত্রোপচার।

আরও পড়ুনইন্ডিয়ান আইডল হওয়ার আগেই পবনদীপের ভক্ত ছিলেন সালমান খান১৭ আগস্ট ২০২১

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকেরা পবনদীপকে তিন থেকে চার দিন পর্যবেক্ষণে রাখবেন। অবস্থার উন্নতি হলে তাঁকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে। তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে পরবর্তী চিকিৎসার বিষয়ে।
পবনদীপের অফিশিয়াল ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘পবনদীপের অবস্থা এখন স্থিতিশীল রয়েছে, তবে আরও একটি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন। তিনি এখন সাড়া দিচ্ছেন এবং ধীরে ধীরে সেরে উঠছেন।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘সোমবারটা পবনদীপ ও তাঁর পরিবারের জন্য অত্যন্ত কষ্টের। সারা দিন তিনি তীব্র যন্ত্রণা ও অজ্ঞান থাকার মধ্যে দিয়ে কাটিয়েছেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাঁকে অস্ত্রোপচারের জন্য নেওয়া হয় এবং ছয় ঘণ্টার জটিল অস্ত্রোপচারের পর তাঁর কিছু বড় আঘাতের চিকিৎসা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে তিনি আইসিইউতে আছেন। কয়েক দিন বিশ্রামের পর আবার অস্ত্রোপচার করা হবে।’

জানা গেছে, গাড়ি চালাতে চালাতে ঘুমিয়ে পড়েন পবনদীপের গাড়িচালক। তাতেই ঘটে এ দুর্ঘটনা। তাঁদের গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা দেয় ট্রাকে। কেবল পবনদীপ নন, তাঁর সঙ্গে গাড়িতে থাকা অন্যরাও আহত হয়েছেন। ‘ইন্ডিয়ান আইডল’খ্যাত এই গায়ক তাঁর বাড়ি থেকে আহমেদাবাদে একটি অনুষ্ঠানের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে ‘ইন্ডিয়ান আইডল সিজন ১২’ জিতে খ্যাতি অর্জন করেন পবনদীপ রাজন। এর আগে ২০১৫ সালে ‘দ্য ভয়েস ইন্ডিয়া’ রিয়েলিটি শোতেও বিজয়ী হয়েছিলেন তিনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর

বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!

কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।

এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)

সম্পর্কিত নিবন্ধ