পূর্ব লন্ডনের কবি নজরুল সেন্টারে বিশ্ব শ্রমিক দিবস উপলক্ষে ইস্ট অ্যান্ড মে ডে র্যালি-২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত শনিবার এই কর্মসূচিটি যৌথভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশি ওয়ার্কার্স কাউন্সিল, যুক্তরাজ্য এবং বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, যুক্তরাজ্য সংসদ।
জানা যায়, যুক্তরাজ্যে বিগত ৯ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে এই মহান মে দিবসের অনুষ্ঠান করে যাচ্ছে বাংলাদেশি ওয়ার্কার্স কাউন্সিল।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশি ওয়ার্কার্স কাউন্সিল, যুক্তরাজ্যের সাধারণ সম্পাদক সলিসিটর শাহরিয়ার বিন আলী। সভায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বৃটেনের ট্রেড ইউনিয়ন আর এম টির সভাপতি অ্যালেক্স গর্ডন, প্রখ্যাত বামপন্থী ইংরেজি দৈনিক মর্নিংস্টারের প্রধান সম্পাদক বেন চাকো, জুইস সোশ্যালিস্ট গ্রুপের নেতা ও বিখ্যাত লেখক ডেভিড রোজেনবারগ এবং মাইগ্রেন্ট ভয়েসের ডিরেক্টর নাজেক রামাদান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি বামপন্থী নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন সিপিবি যুক্তরাজ্য ও ইউরোপ কমিটির সভাপতি অ্যাড.
এ সময় গণ সংগীত পরিবেশন করে ঐতিহ্যবাহী বামপন্থী সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী যুক্তরাজ্য সংসদের শিল্পীরা। প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন সত্যেন সেন স্কুল অব পারফর্মিং আর্টসের শিশুশিল্পীরা এবং আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী মোহাম্মদ দীপ।
সভায় ব্রিটেনে বসবাসরত বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ উন্নতিকরণ, ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা সহজ ও অভিবাসীবান্ধব করা, স্কিল ক্যাটাগরির আওতায় ভিসা প্রার্থীদের দালালমুক্ত ও প্রতারনামুক্ত করার লক্ষ্যে স্কিল ভিসা প্রার্থীদের স্পন্সর-ফ্রি করা, ভিসা ফিস ও ভিসা-বর্ধিতকরণ ফিস কমানো, আবাসন সমস্যার সমাধান, প্রাইভেট বাড়িওয়ালাদের জন্য ভাড়ার উচ্চতর স্তর নির্ধারণ করে দেওয়া, এনএইচএস-এর প্রাইমারি কেয়ার সহজ করা, বর্ণবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা, অভিবাসী শ্রমিকদের বিভিন্ন ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন গড়ে তোলা, যুদ্ধমুক্ত সমতার বিশ্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শ্রমিক সহ সাধারণ মানুষের জোরদার ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।
এছাড়া বাংলাদেশে কৃষি শ্রমিক, চা-শ্রমিক, গার্মেন্টস শ্রমিকসহ সব আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম ন্যায্য মজুরী, নিরাপদ কর্মক্ষেত্র নিশ্চিতকরণের আন্দোলন, ট্রেড ইউনিয়ন করার আন্দোলনের প্রতি এই সভা থেকে জোরদার সংহতি প্রকাশ করা হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বরফ গলে মেরু এলাকায় নতুন বাস্তুতন্ত্রের খোঁজ
তাপপ্রবাহ, ওজোন গ্যাসের উপস্থিতিসহ বিভিন্ন কারণে পৃথিবীর দুই মেরু এলাকার বরফ গলে যাচ্ছে। তবে উত্তর মেরুর আর্কটিক সাগরের গলিত বরফ ভিন্ন ধরনের লুকানো বাস্তুতন্ত্র প্রকাশ করছে। সেখানে ব্যাকটেরিয়া নাইট্রোজেন গ্যাসকে পুষ্টিতে রূপান্তরিত করে শৈবালের বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে দেখা গেছে। পুরু বরফের নিচে এই প্রক্রিয়া অসম্ভব বলে মনে করা হলেও এখন আর্কটিকের খাদ্যশৃঙ্খল ও বায়ুমণ্ডলীয় কার্বন শোষণের জন্য এই প্রক্রিয়াকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এখন নতুন বাস্তুতন্ত্র জলবায়ুগত সুবিধা দেবে নাকি নতুন অনিশ্চয়তা নিয়ে আসবে, তা নিয়ে গবেষণা করছেন।
আর্কটিক মহাসাগরকে দীর্ঘকাল ধরে হিমায়িত ও প্রাণহীন একটি সীমান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যখন এই অঞ্চলের সমুদ্রের বরফ গলতে শুরু করেছে, তখন পানির নিচ থেকে আশ্চর্যজনক নতুন নতুন সব তথ্য জানা যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা দেখছেন, গলিত বরফ আসলে শৈবালের বৃদ্ধি বাড়িয়ে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রকে উৎসাহিত করতে পারে। এই শৈবালই মহাসাগরের খাদ্যশৃঙ্খলের ভিত্তি তৈরি করে। সেখানকার নতুন পরিবেশ আমাদের গ্রহের সংবেদনশীল জলবায়ু ভারসাম্যের জন্য সহায়ক হবে নাকি ক্ষতিকারক হবে, তা নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
জার্মানির আলফ্রেড ওয়েগেনার ইনস্টিটিউট ও কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের গবেষণার ফলাফল আর্কটিক মহাসাগর সম্পর্কে আমাদের পূর্বের ধারণাকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করছে। কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া পুরু আর্কটিক বরফের নিচে ঘটতে পারে না। এই প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়া নাইট্রোজেন গ্যাসকে জীবনের সহায়ক রূপে রূপান্তর করে। এই রূপান্তরের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়ার জন্য সেখানকার পরিস্থিতিকে খুব চরম বলে মনে করা হতো। নতুন গবেষণা ভিন্ন তথ্য প্রকাশ করেছে। মধ্য আর্কটিক বরফের নিচে দেখা গেছে, নাইট্রোজেন ফিক্সেশন বা বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া কেবল ঘটছে তা নয়, বরং এটি প্রত্যাশার চেয়েও বেশি বিস্তৃত হতে পারে। অন্যান্য সব সমুদ্রে সাধারণত সায়ানোব্যাকটেরিয়া দেখা গেলেও, আর্কটিকে নন-সায়ানোব্যাকটেরিয়া নামে পরিচিত একটি ভিন্ন দলের উপস্থিতি দেখা যায়। ভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া দ্রবীভূত জৈব পদার্থ খেয়ে বেঁচে থাকে ও নাইট্রোজেন যৌগ মুক্ত করে যা শৈবালকে পুষ্টি জোগায়।
আর্কটিক এলাকাকে একসময় প্রাকৃতিক কার্যকলাপের জন্য খুব অনুর্বর বলে মনে করা হতো। গবেষণায় দেখা গেছে, গলে যাওয়া সমুদ্রের বরফের কিনারা বরাবর নাইট্রোজেনের বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া সবচেয়ে শক্তিশালী। এটি এমন একটি জায়গা যেখানে সূর্যের আলো, পানি ও পুষ্টির উপাদান মিশে গেছে, যা ব্যাকটেরিয়া ও শৈবাল উভয়ের জন্যই আদর্শ পরিবেশ। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সমুদ্রের বরফ কমতে থাকলে আর্কটিকের নাইট্রোজেনচক্র নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হবে। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী লিসা ডব্লিউ ভন ফ্রাইসেন বলেন, আর্কটিক মহাসাগরে সহজলভ্য নাইট্রোজেনের পরিমাণ অনুমান করা হয়নি এখনো। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের বরফ কমতে থাকলে শৈবাল উৎপাদনের সম্ভাবনা কেমন হবে তা এখনো জানা যায়নি। শৈবাল আর্কটিক খাদ্যশৃঙ্খলের জন্য অপরিহার্য। তারা আণুবীক্ষণিক ক্রাস্টেসিয়ানদের খাবার হিসেবে কাজ করে, যা পরবর্তী সময়ে ছোট মাছ এবং সিল ও তিমির মতো বড় শিকারি প্রাণীরা খায়। আরও শৈবাল এই শৃঙ্খলকে শক্তিশালী করতে পারে, যা সম্ভাব্যভাবে আর্কটিক সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে তুলবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
সাধারণভাবে শৈবাল কেবল সামুদ্রিক প্রাণীদের খাদ্য জোগায় না। তারা সালোকসংশ্লেষণের সময় বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই–অক্সাইডও শোষণ করে। যখন শৈবাল মরে যায়, তখন এই কার্বনের কিছু অংশ সমুদ্রের তলদেশে ডুবে যায়। বিজ্ঞানীরা প্রায়শই শৈবালকে প্রাকৃতিক কার্বন সিংক বা মহাসাগরের নিজস্ব ভ্যাকুয়াম ক্লিনার হিসেবে বর্ণনা করেন। নতুন তথ্য থেকে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া যদি শৈবালের বৃদ্ধিকে বাড়িয়ে তোলে, তবে আর্কটিক মহাসাগর আরও বেশি কার্বন ডাই–অক্সাইড শোষণ করতে পারবে। বিষয়টি একদিক থেকে জলবায়ুর জন্য সুসংবাদ বলে মনে করা হচ্ছে। শৈবালের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি বৈশ্বিক কার্বন মাত্রাকে সামান্য হলেও প্রশমিত করতে পারে। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ সতর্ক করে জানিয়েছেন, বিষয়টি এত সরল নয়। সামুদ্রিক সিস্টেম অত্যন্ত সংবেদনশীল। অন্যান্য পরিবেশগত পরিবর্তন এই ইতিবাচক প্রভাবকে দুর্বল করে দিতে পারে।
বিজ্ঞানী ল্যাসে রিম্যান বলেন, ফলাফল জলবায়ুর জন্য উপকারী হবে কি না, তা আমরা এখনো জানি না। তবে এটি স্পষ্ট যে সমুদ্রের বরফ কমতে থাকলে আগামী কয়েক দশকে আর্কটিক মহাসাগরের কী হবে, তা অনুমান করার সময় আমাদের নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়ার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াকে সমীকরণে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বাড়তে থাকায়, আর্কটিক পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় প্রায় চার গুণ দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে। এই দ্রুত পরিবর্তন কেবল বরফের ওপর নির্ভরশীল প্রজাতিদেরই নয়, বরং মহাসাগর কীভাবে কার্বন সঞ্চয় ও নির্গত করে, তারও পরিবর্তন ঘটায়। নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়ার ভূমিকা বোঝা গেলে বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যতের জলবায়ু ধরন সম্পর্কে আরও নির্ভুল ভবিষ্যদ্বাণী করতে সক্ষম হবেন বলে আশা করছেন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া