নিয়ন্ত্রণরেখায় পাকিস্তানের গোলাবর্ষণ, ৪ শিশুসহ ১১ ভারতীয় নিহত
Published: 8th, May 2025 GMT
ভারতশাসিত কাশ্মীরের পহেলগাঁও হামলা নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। পাল্টা জবাবে রাতেই হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। বুধবার সকাল থেকে নিয়ন্ত্রণরেখায় গোলাগুলি চলেছে দুদেশের।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর সীমান্তে বসবসকারী বেসামরিক জনগোষ্ঠীর ওপর গোলাবর্ষণ করেছে পাকিস্তান। এতে কমপক্ষে ১১ জন নিহত ও ৪০ জন আহত হয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটি বলছে, কাশ্মীর উপত্যকার উরি ও তাংধর সেক্টরে তীব্র কামানের গোলাবর্ষণের শব্দ শোনা গেলেও, জম্মুর পুঞ্চ শহরে সবচেয়ে ভয়াবহ গোলাবর্ষণ ঘটনা ঘটেছে। ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো পাবলিক প্লেস ছাড়াও আবাসিক এবং সরকারি ভবন লক্ষ্য করে কামানের গোলা ছুড়েছে পাকিস্তান।
আরো পড়ুন:
ঠান্ডা মাথায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইয়ের বার্তা মমতার
ভারতের সঙ্গে পারমাণবিক যুদ্ধের সম্ভাবনা রয়েছে: পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী
নিরাপত্তাজনিত শঙ্কায় বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন অঞ্চলগুলোর বাসিন্দারা। কাশ্মীরের স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, সীমান্তের কাছে থাকা অনেক বাসিন্দাকে লাসানা, সানাই এবং সাথরায় নির্ধারিত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, যদিও পাকিস্তান অতীতে পুঞ্চ জেলায় নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর মর্টার ও কামানের গোলাবর্ষণ করেছে, কিন্তু সীমান্তবর্তী শহরের ভেতরে, বিশেষ করে আবাসিক এলাকায় এত গভীরে এর আগে কখনো গোলাবর্ষণ হয়নি।
পুঞ্চ জেলার গুরুদ্বার প্রবন্ধক কমিটির সভাপতি নরিন্দর সিং স্মৃতিচারণ করে বলেন, “২০১৯ সালে পুলওয়ামা সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ নিতে ভারত পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বালাকোট এলাকায় সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালানোর পর, পুঞ্চ শহরের উপকণ্ঠে বেতার নালার কাছে দুই-তিনটি পাকিস্তানি গোলা পড়েছিল।”
তিনি বলেন, “পাকিস্তানের এবারের হামলায় জম্মুতে বসবাসকারী শিখ সম্প্রদায়ের কমপক্ষে পাঁচজন সদস্য নিহত হয়েছেন এবং স্থানীয় গুরুদ্বার সিং সভার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পাকিস্তানের হামলায় নিহত ১১ জনের মধ্যে দুই নারী ও চার শিশু রয়েছে। নিহত শিশুদের মধ্যে রয়েছে দুই বোন জোয়া খান (১৪) এবং জয়েন খান (১২)। কালানি গ্রামে পাকিস্তানের গোলা তাদের বাড়িতে পড়লে তারা নিহত হন। তাদের বাবা রমিজ খান আহত হন।
সিন্ডিকেট চকে এলাকায় দুই প্রতিবেশী দোকানদার- ৫৫ বছর বয়সী আম্রিক সিং ও ৪৮ বছর বয়সী রঞ্জিত সিং তাদের দোকানেই গোলার আঘাতে মারা যান।
নিয়ন্ত্রণ রেখার ওপার থেকে ছোড়া গোলার আঘাতে কাজী মহল্লায় নিজ বাড়ির প্রাঙ্গণে বসে থাকা সাত বছর বয়সী মরিয়ম খাতুন নিহত হন, গুলির স্প্লিন্টারে তার বোন ইরাম নাজ (১০) আহত হন।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গুলির আঘাতে নিহত আরেক শিশুর নাম বিহান ভার্গব (১৩)। সে ডুঙ্গুস গ্রামের বাসিন্দা।
মেন্ধারের মানকোট এলাকায় বলবিন্দর কৌর (৩৫) নিহত হন এবং তার মেয়ে রবীন্দর কৌর (১২) আহত হন।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোলাবর্ষণে নিহত অন্যদের মধ্যে রয়েছেন অমরজিৎ সিং (৪৭), মোহাম্মদ আকরাম (৪০) এবং কাজী মোহাম্মদ ইকবাল। তারা সবাই পুঞ্চের বাসিন্দা।
ভারতের উত্তর কমান্ডের জনসংযোগ কর্মকর্তা (প্রতিরক্ষা) লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুনীল বারাতওয়াল বলেন, “৬-৭ মে রাতে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী জম্মু ও কাশ্মীরের বিপরীতে নিয়ন্ত্রণ রেখার ওপারে অবস্থিত পোস্ট থেকে কামানের গোলা নিক্ষেপসহ নির্বিচারে গুলি চালায়।”
ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস বলছে, রাজৌরির লাম, মাঞ্জাকোট এবং গম্ভীর ব্রাহ্মণা ছাড়াও পুঞ্চ জেলার কৃষ্ণা ঘাটি, শাহপুর এবং মানকোটে ভারী গোলাবর্ষণের খবর পাওয়া গেছে।
নিরাপত্তার উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে কাশ্মীর কর্তৃপক্ষ পাঁচটি সীমান্ত জেলা- জম্মু, সাম্বা, কাঠুয়া, রাজৌরি এবং পুঞ্চ- এর স্কুল ও কলেজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। এছাড়া জম্মু, শ্রীনগর এবং লেহ সহ সীমান্তের কাছাকাছি শহরগুলোর বিমানবন্দর কার্যক্রম স্থগিত করেছে।
গুরুদ্বার প্রবন্ধক কমিটির সভাপতি নরিন্দর সিংয়ের জানান, তারা কয়েক দশক ধরে এমন গোলাবর্ষণ দেখেননি।
তিনি বলেন, “১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো এত তীব্র এবং অবিরাম গোলাবর্ষণ চালানো হয়েছে। তারা (পাকিস্তান সেনাবাহিনী) পুরো শহরকে লক্ষ্য করে.
ঢাকা/ফিরোজ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানকে নিয়ে মার্কিন গোয়েন্দাদের ‘ইতিবাচক’ রিপোর্ট মানছেন না ট্রাম্প
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা ‘ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না’ বলে যে ইতিবাচক রিপোর্ট দিয়েছে, তা প্রত্যাখ্যান করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
শনিবার (২১ জুন) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে এবং তার গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড এই বিষয়ে ভুল বলেছেন। এ মন্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মূল্যায়ন সরাসরি প্রত্যাখ্যান করলেন প্রেসিডেন্ট।
আরো পড়ুন:
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ
ইরান-ইসরায়েল ছেড়ে পালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা
শুক্রবার হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকরা ‘ইরান বর্তমানে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না বলে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি অবস্থান’ সম্পর্কে জানতে চাইলে টাম্প বলেন, “তাহলে আমার গোয়েন্দা সংস্থা ভুল। কে বলেছে যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে না?”
সাংবাদিকরা তখন উত্তর দেন, “আপনার জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ডই এই অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন।” তখন ট্রাম্প পাল্টা জবাব দেন, “তিনি (গ্যাবার্ড) ভুল।”
এর আগে, ২৫ মার্চ কংগ্রেসে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে গ্যাবার্ড বলেন, “গোয়েন্দা তদন্তে ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ কার্যক্রমের প্রমাণ পাওয়া যায়নি এবং সর্বোচ্চ নেতা (আয়াতুল্লাহ আলি) খামেনি ২০০৩ সালে স্থগিত করা পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি অনুমোদন করেননি।”
গোয়েন্দা প্রধান মার্কিন আইন প্রণেতাদের আরো বলেন, “তেহরান যদি তার পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি পুনরায় অনুমোদন করার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে আইসি (মার্কিন সংস্থা সংস্থাগুলোর কোড) নিবিড়ভাবে তা পর্যবেক্ষণ করছে।”
তবে শুক্রবার ট্রাম্পের মন্তব্যের পর গ্যাবার্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, “আমেরিকার কাছে তথ্য আছে যে, ইরান চাইলে কয়েক সপ্তাহ বা মাসের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র প্রস্তুত করতে পারে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্টভাবে বলেছেন, এটা হতে দেওয়া যাবে না, আর আমি এতে একমত।”
বিশ্লেষকদের মতে, গ্যাবার্ডের নতুন বক্তব্য আগের মূল্যায়নের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়, কারণ তিনি এখনও দাবি করছেন না যে ইরান অস্ত্র তৈরি করছে।
গত ১৩ জুন থেকে আঞ্চলিক উত্তেজনা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ইসরায়েল ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে বিমান হামলা শুরু করে, যার জবাবে তেহরান প্রতিশোধমূলক হামলা চালায়। দুই পক্ষের মধ্যে হামলা ও পাল্টা হামলা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ২৪ জন নিহত এবং কয়েশ শ’ আহত হয়েছে। ইরান জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ২২৪ জন নিহত এবং ১,০০০ এরও বেশি আহত হয়েছে।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তার মতে, ইসরায়েলের হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে কেবল কয়েক মাসের জন্য পিছিয়ে দিয়েছে। সিএনএন জানিয়েছে, হামলায় ইরানের নাতানজ পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ স্থাপনার উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হলেও, ফোরদোর ভারী সুরক্ষিত স্থাপনাটির তেমন কোনো ক্ষতি করতে পারেনি ইসরায়েল।
ঢাকা/ফিরোজ