অধিকার প্রতিষ্ঠায় তরুণদের সচেতনতা বাড়ানো এবং দলের সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি। আজ শুরু হচ্ছে তারুণ্যের সেমিনার ও সমাবেশ কর্মসূচি। ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের ব্যানারে এসব আয়োজনে বিএনপি নেতারাও তরুণদের বক্তব্য শুনবেন। তাদের মতামত বিশ্লেষণ করে এগিয়ে যেতে চায় দলটি। এদিকে সারাদেশে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মাঝে বিএনপির আদর্শ ছড়িয়ে দিতে আগামী বৃহস্পতিবার শুরু হচ্ছে সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি। এক কোটি সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়েছে তারা। 

বিএনপি নেতারা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে তরুণদের বড় ভূমিকা ছিল। মুক্তিযুদ্ধ থেকে দেশের প্রতিটি আন্দোলনে তাদের বড় অবদান ছিল। কিন্তু এখন একশ্রেণির মানুষ এই তরুণদের নিয়ে ব্লেম গেমের রাজনীতি শুরু করেছে। বিগত দিনে তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। মেধাবী তরুণরা কাজের সুযোগ না পেয়ে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে। আর দেশে ফিরছে না। এটি উন্নয়নের ক্ষেত্রেও বড় বাধা। বিএনপি তরুণদের মেধা, জ্ঞান এবং তাদের স্বপ্নকে ধারণ করতে চায়। তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে দেশের উন্নয়নে তাদের কাজে লাগাতে চায়। 
ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের আট দিনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ শুক্রবার চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে তারুণ্যের সেমিনার হবে। এতে তরুণদের মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা এবং তাদের জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বার্তা দেওয়া হবে। কাল চট্টগ্রামের পলো গ্রাউন্ডে হবে ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ’। 
এ ছাড়া আগামী ১৬ মে খুলনায় সেমিনার ও ১৭ মে সমাবেশ, ২৩ মে বগুড়ায় সেমিনার ও ২৪ মে সমাবেশ এবং ২৭ মে ঢাকায় সেমিনার ও ২৮ মে সমাবেশ হবে। চট্টগ্রাম, খুলনা এবং বগুড়ায় সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ঢাকায় সমাবেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে প্রধান হিসেবে রাখতে চায় যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও 
ছাত্রদল। তবে এ বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে সূত্র জানিয়েছে। 

এর আগে ২০২৩ সালেও তিন সংগঠনের ব্যানারে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময় আয়োজনের শুরু থেকেই ক্ষমতাসীন দল ও প্রশাসনের বাধার মুখে পড়লেও এবারের আয়োজন হচ্ছে বাধাহীন। তাই এবারের সমাবেশ ও সেমিনার ঘিরে দলের মধ্যে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। উচ্ছ্বসিত নেতাকর্মীরা। সমাবেশ সফল করতে ইতোমধ্যে বিভাগের আওতাধীন প্রতিটি জেলায় প্রস্তুতি সভা ও প্রচারণা চালানো হয়েছে। বিভাগীয় শহর, জেলা ও থানা পর্যায়ে যৌথসভা ও প্রস্তুতি সভা হয়েছে। এতে যোগ দিয়েছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারাও। প্রচারণা চালানোর সময় সাড়া দিয়েছেন সাধারণ লোকজনও। ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নে একই সঙ্গে অনলাইন ক্যাম্পিং শুরু হয়েছে। 
সেমিনারে কর্মসংস্থান, বহুমাত্রিক শিল্পায়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মৌলিক অধিকার, কৃষি উন্নয়ন, পরিবেশ রক্ষা এবং নাগরিক সমস্যা নিয়ে তারুণদের বক্তব্য ও মতামত শুনবেন নেতারা। এর মধ্য দিয়ে তরুণদের বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা চালানো হবে। 
তরুণদের একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে বিএনপি নেতারা জানান।
স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান বলেন, সেমিনার এবং সমাবেশে দেশের তরুণদের কথা শুনবেন তারা। তরুণদের স্বপ্ন, মেধা, জ্ঞান, শক্তি এবং সাহসকে ধারণ করার সক্ষমতা বিএনপির রয়েছে। তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে দেশের উন্নয়নে আমরা কাজে লাগাতে চাই। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলসহ বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের বাইরে যেসব তরুণ রয়েছেন, যারা বিএনপির কিংবা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন– তাদের সেমিনারে আনার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অন্য যে কোনো প্ল্যাটফর্মে যারা ভালো করছেন, তাদেরও এই সেমিনারে আনা হবে। এর মধ্যে সাংবাদিক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারসহ বিভিন্ন পেশার তরুণদের সম্পৃক্ত করার জন্য বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সংগঠন তিনটি। শুধু শিক্ষিত তরুণ নয়, যেসব তরুণ বিদ্যালয়ে যেতে পারেনি, তাদেরও এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য গুরুত্ব আরোপ করেছেন বিএনপি নেতারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, সারাদেশে এক কোটি সদস্য সংগ্রহ করার উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। আগামী ১৫ মে শুরু হয়ে ১৫ জুলাই পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে। শিক্ষক, ব্যাংকার, এনজিও কর্মকর্তা, কৃষক ও শ্রমিক– যে কেউ হতে পারেন সদস্য। জাতীয়তাবাদী আদর্শকে যারা বিশ্বাস করেন তাদেরই এই কর্মসূচির আওতায় আনা হবে।
বিএনপি নেতারা জানান, সর্বশেষ ২০১৭ সালের জুলাইয়ে সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি 
ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু তখন ফ্যাসিবাদী সরকারের নানা ধরনের চাপে ও বাধায় আশানুরূপ সদস্য সংগ্রহ হয়নি। এ ছাড়া জেলা পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতারাও কর্মসূচি বাস্তবায়নে 
সচেষ্ট ছিলেন না। তাই এবার এই কর্মসূচি শতভাগ সফল করতে কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং টিম গঠন করা হবে। বিভিন্ন জেলা ও মহানগরের সমন্বয় করবেন বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকরা। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ ব এনপ র র র জন র জন ত ক দল র য বদল স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর

বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!

কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।

এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)

সম্পর্কিত নিবন্ধ