পরীক্ষার আগে প্রস্তুতি নিয়ে দুশ্চিন্তা করেন না—এমন শিক্ষার্থী খুঁজে পাওয়া কঠিন। পড়ার চাপ, রাতজাগা আর নোট গোছানো—সবকিছু মিলিয়ে পরীক্ষার আগে প্রস্তুতির সময়টা বেশ কঠিন। তবে প্রযুক্তির অগ্রগতির এই সময়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের সহায়তা নিয়ে পড়াশোনার চাপ কিছুটা কমানো যায়। সঠিকভাবে ব্যবহার করা হলে এআই পড়াশোনার সময় কার্যকর সহকারী হতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, এআই সব সময় নির্ভুল তথ্য দেয় না। আর তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্দেশনা অনুযায়ী পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হবে। পরীক্ষার প্রস্তুতিতে এআইয়ের সহায়তা নেওয়ার ছয় কৌশল দেখে নেওয়া যাক।

১.

প্রবন্ধ লেখায় সহায়তা

সেমিস্টারের শেষ দিকে অনেক শিক্ষার্থীকে বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ বা গবেষণাপত্র জমা দিতে হয়। এসব লেখায় কাঠামো, যুক্তি ও তথ্যসূত্র গুরুত্বপূর্ণ। এআই টুল ব্যবহার করে সহজেই প্রবন্ধের খসড়া, বিষয়ভিত্তিক লেখা কিংবা গবেষণার ধারণা পাওয়া যায়।

২. নোট থেকে প্রাসঙ্গিক তথ্য খুঁজে বের করা

পরীক্ষার প্রস্তুতির বড় একটি অংশ হলো নোট থেকে প্রাসঙ্গিক তথ্য খুঁজে বের করা। চাইলে ব্যবহারকারী তার নিজের নোট এআই চ্যাটবটে দিয়ে সংক্ষেপে সাজিয়ে নিতে পারেন। এতে সময় বাঁচে, আর গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো আলাদা করে সহজে পড়া যায়।

৩. অডিওর মাধ্যমে পড়াশোনা

বিভিন্ন এআই টুলের মাধ্যমে সহজেই বিভিন্ন বিষয় পডকাস্টের মতো করে শোনা সম্ভব। এমনকি দুটি এআই চরিত্রের কথোপকথনের মাধ্যমে পড়ার বিষয়গুলো ব্যাখ্যাও করে নেওয়া যায়। ফলে হাঁটার সময় বা দৈনন্দিন কাজের ফাঁকে পডকাস্ট শুনে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব।

৪. জটিল বিষয় সহজ করে ব্যাখ্যা

অনেক সময় বারবার পড়ার পরও নির্দিষ্ট বিষয় সহজে বোঝা যায় না। এসব ক্ষেত্রে এআই চ্যাটবট ব্যবহার করে বিষয়টি সহজ ভাষায় বুঝে নেওয়া যায়।

৫. ছবি ও ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা তৈরি

বর্তমান এআই টুলগুলো লেখা ছাড়াও ছবি ও চার্ট তৈরিতেও পারদর্শী। জিপিটি ৪ও সংস্করণে চ্যাটজিপিটির ভিজ্যুয়াল প্রসেসিং ক্ষমতা আরও উন্নত হয়েছে। এটি ডেটা থেকে চার্ট, ফ্লোচার্ট বা অন্যান্য গ্রাফিক উপস্থাপন তৈরি করতে পারে, যা অনেক জটিল বিষয় সহজ করে বুঝতে সহায়তা করে।

৬. যাচাই করা

পরীক্ষার আগে নিজেকে যাচাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এআই ব্যবহার করে ব্যবহারকারী ফ্ল্যাশকার্ড, কুইজ কিংবা প্রশ্নোত্তর অনুশীলনের মাধ্যমে তার প্রস্তুতি কতটা কার্যকর হয়েছে, তা পরখ করে নিতে পারেন।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর

এছাড়াও পড়ুন:

এআইকে সমস্যা সমাধানে কাজে লাগাতে হবে

বর্তমানে দেশ-বিদেশের কোটি কোটি মানুষ দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)–নির্ভর বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন। অন্য সব প্রযুক্তির তুলনায় এআই বেশ গতিশীল। তাই পুরো বিশ্ব এখন এআই বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানেও এআইকে কাজে লাগাতে হবে। আজ বৃহস্পতিবার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ এআই সামিটে এসব তথ্য জানানো হয়। দেশের বিভিন্ন খাতে এআই প্রযুক্তির ব্যবহার ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে এ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শুধু একটি প্রযুক্তি নয়, এটি সময়ের সবচেয়ে বড় রূপান্তরমূলক শক্তি। আজ আমরা দাঁড়িয়ে আছি এক বৈশ্বিক পরিবর্তনের সন্ধিক্ষণে, যেখানে সিদ্ধান্ত নিতে হবে—আমরা কি কেবল প্রযুক্তির অনুসারী হব, নাকি এর পথপ্রদর্শক।’

বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম এবং বাংলাদেশ ইনোভেশন কনক্লেভের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন শুধু প্রযুক্তির বিষয় নয়, এটি আমাদের জীবনের প্রতিটি খাতকে ছুঁয়ে যাচ্ছে। শিল্পকারখানা থেকে শুরু করে কৃষি, স্বাস্থ্যসেবা থেকে শিক্ষা, প্রশাসন থেকে দৈনন্দিন জীবন—সবখানেই এআই এনে দিচ্ছে দ্রুত সমাধান, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও অগ্রগতির অশেষ সম্ভাবনা।’

প্যানেল আলোচনায় গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়াসির আজমান বলেন, এআই এখন অনেক শক্তিশালী। এখন এই প্রযুক্তি দিয়ে অনেক কাজ করা যাচ্ছে। ব্যক্তিগত কাজ হোক বা পেশাদার, সব কাজেই এআই উপস্থিত। এআই দিয়ে ভালো কাজ করতে হবে। নৈতিকতার বিষয়গুলোকে মাথায় রাখতে হবে। এআই যেন ভালো ও কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যায় সে বিষয়ে প্রযুক্তিবিদ, ব্যবহারকারী ও সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সম্মিলিত ভূমিকা থাকতে হবে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, এখন সবখানেই প্রযুক্তির ছোঁয়া দেখা যাচ্ছে। স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে কৃষি, সব ক্ষেত্রেই এআইয়ের উপস্থিতি রয়েছে। প্রযুক্তি আসলে এমন একটা মাধ্যম, যা মানুষকে শক্তিশালী করে তোলে। এ জন্য বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে এআইকে ব্যবহার করতে হবে।

অন্যান্য প্যানেল আলোচনায় বক্তারা জাতীয় উন্নয়ন এবং আর্থিক সেবার পরিধি বাড়াতে এআইয়ের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন। এ ছাড়া শিক্ষা খাতে এআইয়ের মাধ্যমে সহজলভ্য শিক্ষার সুযোগ তৈরিসহ উদ্ভূত নৈতিক চ্যালেঞ্জ, বিশেষ করে গোপনীয়তা ও ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে আলোচনা করা হয়।

সম্মেলন চলাকালে গত মার্চে অনুষ্ঠিত এআই হ্যাকাথনের সেরা ৩১টি দল নিজেদের তৈরি উদ্ভাবন প্রদর্শন করে। বিচারকেরা রায়ে এআই হ্যাকাথনে বিজয়ী হয়েছে ছয়টি দল। দলগুলো হলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেশিন মাইন্ডসেট (উৎপাদন), মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) কিউআরএআরজি (স্বাস্থ্য), ফিনটেকে ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির রানটাইম টেররস (ফিনটেক), ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কোড ফারমার্স (কৃষি), বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) টিম—গ্লাইডার্স (সিটি ম্যানেজমেন্ট) ও রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির (রুয়েট) বুরাক। বিজয়ী প্রতিটি দল পেয়েছে এক লাখ টাকা পুরস্কার।

ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ এআই সামিট আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতায় ছিল আকিজ রিসোর্স ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এআইকে সমস্যা সমাধানে কাজে লাগাতে হবে