রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে চলমান অবরোধ (ব্লকেড) কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মূখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করাসহ তিন দফা দাবি জানিয়ে তিনি আগামীকাল শনিবার বিকেলে শাহবাগে গণজমায়েত কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন। পাশাপাশি সারা দেশে জুলাই অভ্যুত্থানের পয়েন্টগুলোতে (স্থান) গণজমায়েত কর্মসূচির ঘোষণা করেন তিনি।

শুক্রবার শাহবাগে চলমান অবরোধ কর্মসূচি থেকে রাত ১১টার দিকে হাসনাত আবদুল্লাহ এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

এনসিপি দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক বলেন, ‘অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছি ২৫ ঘণ্টা হয়েছে। আমরা জানি না এ কর্মসূচির শেষ কোথায়। যতক্ষণ না পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের এই অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে তিন দফা দাবি দিয়েছি। প্রথম দফা, আওয়ামী লীগের যত সহযোগী সংগঠন রয়েছে সকল সংগঠনসহ আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করতে হবে। দ্বিতীয় দফা দাবি হচ্ছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে আওয়ামী লীগের দলগত বিচারের বিধান যুক্ত করতে হবে। তৃতীয়ত, জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের এ তিন দফা যতক্ষণ না পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়, ততক্ষণ কী আমরা এই মাঠ ছাড়ব?’ এ সময় সবাই ‘না’ বলে সমর্থন জানান।

পরে হাসনাত আবদুল্লাহ শনিবারের (আগামীকাল) কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, এ তিন দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি আগামীকাল (শনিবার) বিকেল তিনটার দিকে শাহবাগে গণজমায়েত ঘোষণা করা হচ্ছে। হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, সারা ঢাকায় জুলাই-অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি যারা আওয়ামী লীগের নির্যাতন ও নিপীড়নের যারা শিকার হয়েছেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, শাপলা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, গুম-খুনের শিকার হয়েছেন, মোদিবিরোধী আন্দোলনে যারা শিকার হয়েছেন— সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে এই শাহবাগে গণজমায়েত অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আরও বলেন, সারা বাংলাদেশে প্রত্যেকটা জুলাই পয়েন্টে গণজমায়েত কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘এ লড়াই যারা বাংলাদেশকে বর্গা দিয়ে আমাদের শাসন করেছে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই। যে সিদ্ধান্ত জনগণ ৫ আগস্ট নিয়েছে, সেই সিদ্ধান্তের আইনগত ভিত্তি প্রতিষ্ঠার লড়াই। যতক্ষণ না পর্যন্ত আমাদের দাবি আদায় হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা শাহবাগ ছাড়ব না।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ক র হয় ছ ন গণজম য় ত আম দ র শ হব গ আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর

বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!

কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।

এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)

সম্পর্কিত নিবন্ধ