আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধের দাবিতে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ, ফেনীতে ব্লকেড
Published: 9th, May 2025 GMT
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী চাটগাঁ মঞ্চ’ তৈরি করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) চট্টগ্রাম। শুক্রবার রাতে নগরের ২ নম্বর গেটের বিপ্লব উদ্যানে এই মঞ্চ তৈরি করা হয়। রাত ১০টার দিকে এনসিপির নেতা-কর্মীরা মঞ্চে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন।
এনসিপি চট্টগ্রামের তত্ত্বাবধায়ক জোবাইরুল আরিফ রাত সাড়ে ১০টায় প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগের বিচারের সুস্পষ্ট অগ্রগতি দেখানো ও দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে এই সিদ্ধান্ত জানাতে হবে। দেশের জনগণ আওয়ামী লীগের দুঃশাসন ও গণহত্যার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের যাঁরা গণহত্যার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের গণতন্ত্রের জন্য হুমকি ঘোষণা করতে হবে। তাঁদের রাজনীতিও নিষিদ্ধ করতে হবে। সরকার এখনো জুলাই ঘোষণাপত্র তৈরি করতে পারেনি। এই ঘোষণাপত্র তৈরি না করাটাই হবে বর্তমান সরকারের সবচেয়ে বাজে কাজ।
কর্মসূচি উপলক্ষে নেতা-কর্মীরা সন্ধ্যা থেকেই বিপ্লব উদ্যানে জড়ো হতে থাকেন। মঞ্চ প্রস্তুত হওয়ার পর বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। রাত সাড়ে ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধের দাবিতে স্লোগান ও বক্তব্য দিচ্ছিলেন।
এ ছাড়া জুমার নামাজের পর নগরের আন্দরকিল্লায় বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে মিছিল করে।
ফেনীতে ব্লকেড
এদিকে একই দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী সদর উপজেলার মহিপাল চৌরাস্তা এলাকার উড়ালসড়কের নিচে ব্লকেড কর্মসূচি পালিত হয়েছে। শুক্রবার রাত নয়টার দিকে এই কর্মসূচি শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, এনসিপি, জাতীয় নাগরিক কমিটিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় এই কর্মসূচি শুরু হয়। শেষ হয় রাত ১০টার দিকে। কয়েক শ শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক কর্মী আওয়ামী লীগের বিচার চেয়ে স্লোগান দেন। তবে কর্মসূচি চলাকালে যানবাহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়নি।
এতে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মুহাইমিন তাজিম, আবদুল কাইয়ুম, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক তুহিন আহমেদ, জাতীয় নাগরিক পার্টির জেলা সংগঠক শাহ ওয়ালী উল্লাহ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফেনী জেলার সংগঠক আবদুল্লাহ আল যোবায়ের প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গাজা দখল করে ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ গড়তে চান নেতানিয়াহু
নিজের জনগণকে ৬৭০ দিনের বেশি সময় ধরে ধ্বংস হতে দেখার বেদনা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। এত কষ্ট, এত অপরাধের সাক্ষী হওয়ার পরও গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে আরেক দফা ইসরায়েলি হামলার কথা ভাবা পর্যন্ত কল্পনার বাইরে। অথচ বিশ্বের চোখের সামনেই এটি হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ্ব কি শুধু দাঁড়িয়ে দেখে যাবে?
ইসরায়েলের নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা গাজায় এই নতুন হামলার ঘোষণা দিয়েছে। গাজা উপত্যকাকে ‘সম্পূর্ণ দখল’ করার জন্যই তারা সেখানকার জনবসতিগুলোয় হামলা চালানোর পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। এ হামলা শুরু হবে গাজা সিটি থেকেই। এর ফলাফল অনুমান করা কঠিন নয়।
২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক সতর্কবার্তা ও আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) নির্দেশ অমান্য করে ইসরায়েল রাফা এলাকায় হামলা চালায়। আজ রাফার কোনো অস্তিত্ব নেই। এরপর ২০২৪ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে তারা উত্তর গাজার বেইত লাহিয়া, বেইত হনুন ও জাবালিয়া শহরে হামলা চালিয়ে সেগুলো ধ্বংস করে দেয়।
আরও পড়ুনমুখ ফিরিয়েছে বিশ্ব, গাজা কি নিভে আসছে ০৯ জুন ২০২৫সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোশে ইয়ালন এ অভিযানকে বলেছেন ‘জাতিগত নিধন’। এরপর ইসরায়েল একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি ভেঙে ফেলে, ২০ লাখ বেঁচে থাকা মানুষকে অনাহারে রাখে এবং দক্ষিণের খান ইউনিস শহর ধ্বংস করে দেয়। এসব কাজ ২০২৪ সালের জানুয়ারি, মার্চ ও মে মাসে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের দেওয়া তিনটি গণহত্যাবিরোধী রায়ের সরাসরি লঙ্ঘন।
জানুয়ারিতে আদালত গাজায় গণহত্যার ঝুঁকি আছে বলে জানান এবং তা ঠেকাতে কিছু ব্যবস্থা নিতে বলেন। এর মধ্যে ছিল গাজায় মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু দেখা গেল, ইসরায়েল এই নির্দেশ মানছে না। গাজা সিটিতে হামলা হলে তা এই গণহত্যা অভিযানের শেষ ধাপ হবে।
যুক্তরাজ্যের মতো পশ্চিমা দেশগুলো গত দুই বছরে ইসরায়েলের গণ–অত্যাচারের সহযোগিতার দায় থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারবে না। ইসরায়েলকে জবাবদিহি থেকে মুক্তি দিয়ে এবং এই দুষ্ট রাষ্ট্রকে অস্ত্র সরবরাহ করে পশ্চিমারা এই অপরাধগুলোকে সম্ভব করেছে। সম্প্রতি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার যে ঘোষণাগুলো এসেছে, তা কেবল প্রচারমূলক চাল ও মনোযোগ সরানোর কৌশল।৭ অক্টোবরের পরপরই ইসরায়েলের নেতা, রাজনীতিক, সামরিক কমান্ডার ও সেনারা প্রকাশ্যে বলেছিলেন, তাঁরা গাজাকে ধ্বংস করে দেবেন, পুড়িয়ে দেবেন এবং সমতল করে দেবেন। তাঁরা ঠিক সেটাই করেছেন। তাঁরা গাজার ৯০ শতাংশ এলাকা কার্যত ধ্বংস করে এটিকে জনমানবহীন মরুভূমিতে পরিণত করেছেন। বাকি জনসংখ্যাকে ঠাসা অবস্থায় মাত্র ১২ শতাংশ এলাকায় গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে। সেখানে মানুষের বেঁচে থাকার মতো কোনো পরিবেশ নেই। অবরোধ আর বোমাবর্ষণের মাধ্যমে ইসরায়েল গাজায় কোনো নিরাপদ জায়গা রাখেনি। বাইরে যাওয়ারও কোনো পথ রাখেনি।
এখন গাজা সিটি, দেইর আল-বালাহ বা আল-মাওয়াসির বাকি জনবসতিতে হামলার মানে হবে নতুন গণহত্যা, আরও ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি এবং অবশিষ্ট অনাহারগ্রস্ত মানুষকে সরাসরি নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া। এর মানে ইসরায়েল আসলে ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ গড়ার মেসিয়ানি কল্পনা ও অপরাধমূলক প্রকল্প চালিয়ে যাচ্ছে—ইসরায়েলের লক্ষ্য ‘সর্বোচ্চ পরিমাণ জমি, সর্বনিম্নসংখ্যক আরব’।
গাজায় দাতব্য রান্নাঘরের সরবরাহ করা খাবার সংগ্রহ করতে ফিলিস্তিনিদের ভিড়।