চলছে শাহবাগ ব্লকেড, অন্যান্য মহাসড়কে ব্লকেড না দেওয়ার আহ্বান হাসনাতের
Published: 10th, May 2025 GMT
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবিতে আজ শনিবার সকালেও চলছে ‘শাহবাগ ব্লকেড’। বন্ধ রয়েছে শাহবাগের রাস্তা। তবে অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি যানবাহনগুলোকে যাতায়াতের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।শাহবাগে জড়ো হয়েছেন জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের আহতেরাও।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত চারটার কিছু আগে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে শাহবাগ ছাড়া ঢাকা বা সারা দেশের মহাসড়কে ব্লকেড না দিতে আহ্বান জানান। ওই পোস্টে তিনি লেখেন, ‘ঢাকার শাহবাগ ছাড়া ঢাকা বা সারাদেশের হাইওয়েগুলোতে ব্লকেড দিবেন না। জেলাগুলোতে স্বতঃস্ফূর্ত জমায়েত করুন, সমাবেশ করুন। কিন্তু ব্লকেড না। ব্লকেড খুলে দিন।’
গতকাল রাতভর শাহবাগে অবস্থান করেন আন্দোলনকারীরা। সেখানে তাঁরা বিভিন্ন স্লোগান দেন।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে রাতভর অবস্থান এবং মিন্টো রোডের মোড়ে মঞ্চ তৈরি করে বিক্ষোভের পর গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি না করা পর্যন্ত তাঁরা ‘শাহবাগ ব্লকেড’-এর ঘোষণা দিয়েছেন।
একই দাবিতে আজ বেলা তিনটায় শাহবাগে গণজমায়েত কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সারা দেশের জুলাই অভ্যুত্থানের স্থানগুলোতেও গণজমায়েত কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। এই আন্দোলনের উদ্যোক্তারা বলেছেন, শাহবাগ থেকে তাঁদের ‘দ্বিতীয় অভ্যুত্থান পর্ব’ শুরু হবে।
গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তিনটি দাবির কথা লিখে ফেসবুকে পোস্ট দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। দাবিগুলো হচ্ছে আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করতে হবে; আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে আওয়ামী লীগের দলগত বিচারের বিধান যুক্ত করতে হবে এবং জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে। এরপর এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমসহ অনেকেই একই পোস্ট দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা। গতকাল বিকেলে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন ষ দ ধ কর শ হব গ ব লক ড আওয় ম এনস প গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
নিয়ন্ত্রণরেখার দিকে এগোচ্ছে পাক সেনা, জবাব দিতে তৈরি ভারত
শুক্রবার গভীর রাতে ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে ভারতের উধমপুর, পাঠানকোট, ভূজ এবং ভাটিন্ডা বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে পাকিস্থান। জবাবে পাকিস্তানের একাধিক বিমানঘাঁটি, অস্ত্রাগার, কমান্ড সেন্টার লক্ষ্যবস্তু করেছে ভারত।
শনিবার (১০ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সামরিক বাহিনী।
সংবাদ সম্মেলনে কর্নেল সুফিয়া কুরেশি এবং উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং জানান, গতকাল শুক্রবার রাতেও সীমান্তে লাগাতার উসকানি দিয়েছে পাকিস্তান। আকাশপথে অস্ত্রবাহী ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র, এমনকি, যুদ্ধবিমানের মাধ্যমে ২৬ এলাকায় হামলা চালিয়েছে। শুধু সেনাছাউনি বা বিমানঘাঁটি নয়, নিশানা করা হয়েছে স্কুল, হাসপাতালের মতো বেসামরিক অবকাঠামোকেও। রাত ১টা ৪০ মিনিট নাগাদ হাই স্পিড ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে হামলা করা হয়েছে উধমপুর, পাঠানকোট, ভূজ এবং ভাটিন্ডা বিমানঘাঁটিতে। সেখানে কিছু সেনাকর্মী ও যন্ত্রাংশের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
আরো পড়ুন:
সামরিক স্থাপনায় ক্ষয়ক্ষতির তথ্য প্রত্যাখ্যান করল ভারত
পারমাণবিক অস্ত্র কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসছেন শাহবাজ
এদিন সংবাদ সম্মেলনে উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং জানান, আরো অশান্তির ছক কষছে পাকিস্তান। নিয়ন্ত্রণরেখার দিকে এগোচ্ছে পাক সেনা। তাদের জবাব দিতে তৈরি হয়েছে ভারতীয় বাহিনীও।
তিনি আরো বলেন, পাকিস্তান স্থলবাহিনীর সামনের দিকে এগিয়ে আসার অর্থই হলো তারা আরো উত্তেজনা বৃদ্ধির চেষ্টা চালাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীও চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। পাকিস্তানের যেকোনো পদক্ষেপের দ্রুত ও যোগ্য জবাব দেওয়ার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে ভারতীয় বাহিনী। ভারত চায় উত্তেজনা প্রশমিত হোক, কিন্তু পাকিস্তান যদি তাতে সাড়া দেয় তো।
উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং জানান, ভারতীয় বাহিনী অত্যন্ত দ্রুততা ও নির্দিষ্ট লক্ষ্য করে পাকিস্তানি সেনা ঘাঁটি ও জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবিরগুলোকে আক্রমণ করেছে। এর মধ্যে বিএসএফ সিয়ালকোটের একটি জঙ্গিঘাঁটি সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। তিনি আরো জানান, ভারতীয় বাহিনী প্রত্যাঘাতে কোমর ভেঙে যাওয়া পাকিস্তান এখনও কুরুচিকর, মিথ্যা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তান যে দাবি তুলেছে তারা ভারতের সুরাত ও সিরসায় বিমানঘাঁটিতে থাকা এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে, তা সম্পূর্ণত মিথ্যা দাবি।
এদিকে আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের ঐক্যে ফাটল ধরাতেও ভুয়া খবর ছড়াচ্ছে পাকিস্তান। সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন, “ভারতের কোনো ক্ষেপণাস্ত্র আফগানিস্তানে আছড়ে পড়েনি। আফগান নাগরিকরা যেন না ভোলেন যে, কোন দেশ সেখানকার নাগরিকদের উপরে হামলা চালায়।”
মিশ্রি বলেন, পাকিস্তানের ভারতকে বিভক্ত করার মতলব ব্যর্থ হবেই। পাকিস্তানের মিথ্যে অপপ্রচারে কান দেবেন না। পাকিস্তান নিরীহ নাগরিক ও বেসামরিক অবকাঠামোকেও টার্গেট করছে, বিশেষত জম্মু ও কাশ্মীর এবং পাঞ্জাবে। চেষ্টা চালাচ্ছে সম্প্রদায়ের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি করার।”
ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব আরো বলেন, “আমি আগেও অনেকবার বলেছি, পাকিস্তান উসকানি এবং উত্তেজনা বৃদ্ধির চেষ্টা করেই চলেছে। জবাবে ভারত তা প্রতিহত করেছে এবং পরিমিত প্রতিরক্ষা এবং প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। আজ সকালেও আমরা এই উত্তেজনা ও উসকানিমূলক প্রচেষ্টার পুনরাবৃত্তি প্রত্যক্ষ করেছি।”
প্রসঙ্গত, ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ‘অপারেশন বুনিয়ানুন মারসুস’-এর ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। তারই অংশ হিসেবে শুক্রবার রাতভর ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার চেষ্টা চালিয়েছে তারা। শনিবার ভোরে জম্মু ও কাশ্মীরের বিভিন্ন জায়গায় আক্রমণ চালায় পাকিস্তান। ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ জম্মু শহরে বিরাট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এছাড়া ভোর থেকে জম্মু ও কাশ্মীরের উধমপুর, আখনুর, রাজৌরি, পুঞ্চ, পাঠানকোটসহ একাধিক জায়গায় শোনা যায় বিস্ফোরণের শব্দ। এসব হামলায় এক সরকারি কর্মকর্তাসহ তিন জনের মৃত্যু ঘটেছে। রাজৌরির অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট কমিশনার রাজকুমার থাপার বাড়িতে একটি শেল এসে পড়ে। প্রথমে গুরুতর আহত হলেও পরে তার মৃত্যু ঘটে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ শোকপ্রকাশ করেছেন।
এরপর পাল্টা প্রত্যাঘাত করে ভারত। রাওয়ালপিন্ডির নুর খান-সহ তিনটি বিমানঘাঁটিতে পাল্টা প্রত্যাঘাত আনে ভারত।
শনিবার জরুরিভাবে ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটির বৈঠক ডেকেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। এই কমিটির হাতেই রয়েছে পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্র এবং দূরপাল্লার ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষমতা।
ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ