প্রিয় কুকুরটি হঠাৎ ঘেউ ঘেউ করছে। কেন করছে, তা বোঝার চেষ্টা করেন অনেকেই। তবে শব্দ দিয়ে প্রাণীর মনের কথা বোঝার সেই বহু পুরোনো কৌতূহল এবার প্রযুক্তির হাত ধরে বাস্তবে রূপ পেতে পারে। প্রাণীর আওয়াজ ও আচরণ থেকে অর্থ খুঁজে বের করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে চীনা প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান বাইদু।

বাইদু সম্প্রতি চীনের ন্যাশনাল ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে একটি পেটেন্ট আবেদন করেছে। সেখানে তারা এমন একটি উন্নত অনুবাদ পদ্ধতির ধারণা উপস্থাপন করে। এ পদ্ধতিতে প্রাণীর আওয়াজ, শরীরী ভাষা, আচরণগত পরিবর্তন ও অন্যান্য জৈবিক সংকেত বিশ্লেষণ করে তা মানুষের ভাষায় অনুবাদ করতে পারবে। বাইদুর দাবি, এআইভিত্তিক এই সিস্টেম প্রাণীর আবেগ বা মানসিক অবস্থা শনাক্ত করতে পারবে। বিশ্লেষণের পর সেই আবেগ অনুবাদ করে চীনা বা ইংরেজি ভাষায় মানুষের বোধগম্য করে উপস্থাপন করবে। এতে মানুষ ও প্রাণীর মধ্যে যোগাযোগ আরও সহজ ও অর্থবহ হবে। পেটেন্ট আবেদনপত্রে বাইদু লিখেছে, এই প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রাণী ও মানুষের মধ্যে আবেগঘন যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হবে।

প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, পুরো প্রকল্পটি এখনো গবেষণার প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। একটি সম্ভাব্য পণ্যে রূপ নেওয়ার জন্য আরও গবেষণা, উন্নয়ন ও বাস্তব পরীক্ষা দরকার। বাইদুর একজন মুখপাত্র বলেন, ‘পেটেন্টটি জমা দেওয়ার পর থেকেই ব্যাপক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। তবে এটি এখনো গবেষণা পর্যায়ে রয়েছে, তাই পণ্য হিসেবে কবে নাগাদ বাজারে আসবে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।’ সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানিয়েছে, বাইদুর পেটেন্ট আবেদনটি ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে দাখিল করা হলেও তা প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি।

এখন পর্যন্ত প্রযুক্তিটি চূড়ান্তভাবে কী রূপ নেবে, সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। তবে প্রযুক্তিবিদদের ধারণা, এটি সম্ভবত একটি মোবাইল অ্যাপ হিসেবে বাজারে আসতে পারে। ব্যবহারকারী তাঁর পোষা প্রাণীর ভিডিও ধারণ করে অ্যাপে আপলোড করলে, সেটি বিশ্লেষণ করে প্রাণীর বক্তব্য বা অনুভূতির সম্ভাব্য অনুবাদ দেখাবে। তবে এ ধরনের পণ্য নিয়ে সংশয়ও রয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, সত্যিকার অর্থে এআই কি প্রাণীর ভাব প্রকাশ সঠিকভাবে ধরতে পারবে? ব্রিটিশ প্রযুক্তি পরামর্শক সংস্থা বোর্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা জেমস বোরে বলেন, ‘পশুপাখির অনুভূতি বা ভাষা বোঝা এখনো বিজ্ঞানের জন্য অত্যন্ত জটিল একটি বিষয়। অনেক অ্যাপ উন্মুক্ত করা হলেও বাস্তবে সেগুলোর কার্যকারিতা খুবই সীমিত।’

বিশ্বজুড়ে প্রাণীর সঙ্গে মানুষের ভাষাগত যোগাযোগ স্থাপনে এরই মধ্যে একাধিক গবেষণা উদ্যোগ চলছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা আর্থ স্পিসিস প্রজেক্ট ২০১৭ সাল থেকে প্রাণীর আওয়াজ বিশ্লেষণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করছে। এ ছাড়া ডেনমার্কের বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি একটি গবেষণায় শূকরের ডাক বিশ্লেষণ করে তাদের আবেগ শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। বাইদুর পেটেন্ট নিয়ে চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতেও চলছে আলোচনা।

২০২২ সালে ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটি প্রকাশের পর চীনের বৃহৎ প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বাইদুই প্রথম ব্যাপকভাবে এআই খাতে বিনিয়োগ করে। গত মাসে প্রতিষ্ঠানটি তাদের সর্বশেষ এআই মডেল ‘আর্নি ৪.

৫ টার্বো’ প্রকাশ করেছে। বাইদুর দাবি, এটি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এআই মডেলগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিতে সক্ষম। তবে এত সব উদ্যোগের পরও বাইদুর চ্যাটবট এখনো স্থানীয় বাজারে উল্লেখযোগ্য জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি। প্রতিযোগী হিসেবে সেখানে রয়েছে ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটি ও চীনের নিজস্ব উন্নত চ্যাটবট ডিপসিক।

সূত্র: ডেইলি মেইল

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ব দ

এছাড়াও পড়ুন:

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম

সালাতুল হাজত একটি নফল নামাজ, যা বিশেষ প্রয়োজনকে সামনে রেখে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে আদায় করা হয়। এই নামাজের মাধ্যমে মুমিন ব্যক্তি জীবনের বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতিতে আল্লাহর নৈকট্য ও সাহায্য কামনা করে।

হাদিসে সালাতুল হাজতের ফজিলত ও নিয়ম বর্ণিত আছে, যা মুমিনের আল্লাহর ওপর ভরসাকে দৃঢ় করে।

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম

সালাতুল হাজত একটি নফল নামাজ, যা সাধারণত দুই রাকাত আদায় করা হয়। তবে ইচ্ছা হলে চার বা ততোধিক রাকাতও পড়া যায়। নামাজের নিয়ম বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো:

১. অজু করা

সালাতুল হাজত নামাজের জন্য পূর্ণ পবিত্রতা প্রয়োজন। তাই প্রথমে অজু করতে হবে। অজুর ফরজ চারটি: মুখমণ্ডল ধোয়া, দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়া, মাথায় মসেহ করা এবং দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধোয়া। এ ছাড়া সুন্নত অনুযায়ী অজু করা উত্তম, যেমন বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা, কুলি করা, নাকের ভেতরে পানি দেওয়া ইত্যাদি। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৮৫)

সালাতুল হাজত একটি নফল নামাজ, যা বিশেষ প্রয়োজনকে সামনে রেখে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে আদায় করা হয়। সাধারণ ফরজ বা নফল নামাজের মতোই পড়তে হয়।

২. নিয়ত করা

নামাজ শুরু করার আগে মনে মনে সালাতুল হাজতের নিয়ত করতে হবে। নিয়তের উদাহরণ: ‘আমি দুই রাকাত সালাতুল হাজত নফল নামাজ আল্লাহর জন্য আদায় করছি, আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে।’

নিয়ত মনে মনে করা যথেষ্ট, মুখে বলা জরুরি নয়। (সাইয়্যিদ সাবিক, ফিকহুস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা: ১৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২০১৮)

আরও পড়ুনইশরাকের নামাজ: সকালের আলোয় আল্লাহর নৈকট্য ০৪ জুলাই ২০২৫

৩. দুই রাকাত নামাজ আদায়

প্রথম রাকাত: তাকবিরে তাহরিমা (আল্লাহু আকবার) বলে নামাজ শুরু করা। সুরা ফাতিহার পর যেকোনো সুরা পড়া, যেমন সুরা ইখলাস। তারপর রুকু, সিজদা ও অন্যান্য নিয়ম অনুসরণ করে প্রথম রাকাত সম্পন্ন করা।

দ্বিতীয় রাকাত: একইভাবে সুরা ফাতিহার পর একটি সুরা পড়া, রুকু, সিজদা ও তাশাহহুদ পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা।

এই নামাজ সাধারণ ফরজ বা নফল নামাজের মতোই পড়তে হবে, তবে খুশুখুজু (মনোযোগ) বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৪৭৮)

৪. নামাজের পর দোয়া

নামাজ শেষে আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ পড়ে নিজের প্রয়োজনের জন্য দোয়া করতে হবে। আব্দুল্লাহ ইবনে আবু আওফা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির আল্লাহর কাছে কোনো প্রয়োজন বা মানুষের কাছে কোনো দরকার থাকে, সে যেন অজু করে দুই রাকাত নামাজ পড়ে, তারপর আল্লাহর প্রশংসা করে, নবীর ওপর দরুদ পড়ে এবং এই দোয়া পড়ে:

উচ্চারণ: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালিমুল কারিম, সুবহানাল্লাহি রাব্বিল আরশিল আজিম, আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, আসআলুকা মুজিবাতি রাহমাতিক, ওয়া আজাইমা মাগফিরাতিক, ওয়াল গানিমাতা মিন কুল্লি বিরর, ওয়াস সালামাতা মিন কুল্লি ইসম। লা তাদা লি জাম্বান ইল্লা গাফারতাহু, ওয়া লা হাম্মান ইল্লা ফাররাজতাহু।’

অর্থ: ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি সহনশীল ও দয়ালু। পবিত্র মহান আরশের প্রভু আল্লাহ। সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রভু আল্লাহর জন্য। আমি তোমার কাছে তোমার রহমতের কারণ, ক্ষমার দৃঢ়তা, প্রতিটি পুণ্যের লাভ এবং সব পাপ থেকে মুক্তি প্রার্থনা করি। আমার কোনো গুনাহ রেখো না, যা তুমি ক্ষমা করোনি এবং কোনো দুশ্চিন্তা রেখো না, যা তুমি দূর করোনি।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস:: ৪৭৮)

৫. অতিরিক্ত দোয়া

ওপরের দোয়ার পর নিজের প্রয়োজন বা দরকারের জন্য নিজের ভাষায় আল্লাহর কাছে দোয়া করা। দোয়া করার সময় আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখা এবং ধৈর্যের সঙ্গে ফলাফলের অপেক্ষা করা।

আরও পড়ুননামাজ আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধির একটি ধাপ১৭ জুলাই ২০২৫সালাতুল হাজতের সময়

সালাতুল হাজত নির্দিষ্ট কোনো সময়ের সঙ্গে সীমাবদ্ধ নয়। এটি যেকোনো সময় আদায় করা যায়, তবে নিষিদ্ধ সময় (যেমন সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত বা ঠিক মধ্যাহ্নে) এড়িয়ে চলতে হবে। সর্বোত্তম সময় হলো:

রাতের শেষ প্রহর (তাহাজ্জুদের সময়)।

ফজর বা মাগরিব নামাজের পর।

জুমার দিনে, বিশেষ করে আসর ও মাগরিবের মাঝে। (মুহাম্মদ ইবনে সালিহ, আল-ফিকহুল মুয়াসসার, পৃষ্ঠা: ১৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২০১৫)

সালাতুল হাজতের ফজিলত

সালাতুল হাজত নামাজের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে উল্লেখ আছে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সালাতুল হাজত পড়ে এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করেন।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৪৭৮)

এই নামাজ মুমিনের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার একটি শক্তিশালী মাধ্যম, যা মানসিক শান্তি ও ইমানের দৃঢ়তা বাড়ায়।

সতর্কতা

নিষিদ্ধ সময় এড়ানো: সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত ও মধ্যাহ্নে নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকা।

খুশুখুজু: নামাজ ও দোয়ায় মনোযোগ বজায় রাখা, যাতে ইবাদত পূর্ণতা পায়।

হারাম প্রয়োজনে না: সালাতুল হাজত শুধু জায়েজ ও হালাল প্রয়োজনের জন্য পড়তে হবে।

ধৈর্য: দোয়ার ফলাফলের জন্য ধৈর্য ধরা, কারণ আল্লাহ সর্বোত্তম সময়ে প্রয়োজন পূরণ করেন। (ইবনে হাজার আসকালানি, ফাতহুল বারি, ২/৪৮০, দারুল মা’রিফা: ১৯৮৯)

সালাতুল হাজত নামাজ মুমিনের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার একটি অসাধারণ মাধ্যম। এটি দুই রাকাত নফল নামাজ, যার পর নির্দিষ্ট দোয়া ও নিজের প্রয়োজনের জন্য দোয়া করা হয়। জীবনে ব্যস্ততার মাঝেও এই নামাজ সহজেই আদায় করা যায়।

আরও পড়ুনজীবনকে ছন্দে ফেরাবে ‘ধীর নামাজ’২৪ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ