চট্টগ্রামে র‌্যাব-৭ এ কর্মরত সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পলাশ সাহার মৃত্যুর পর থেকে তার স্ত্রী সুস্মিতা সাহাকে (২০) নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। পলাশের মৃত্যুর পর তার মা ও ভাই অভিযোগ করেছিলেন, সুস্মিতার কারণে সংসারে সব সময় কলহ লেগেই থাকত। আর এসব কারণে আত্মহত্যা করেছেন পলাশ।

তবে, এসব অভিযোগ নাকচ পাল্টা অভিযোগ করেছেন পলাশের শ্বশুর ভরত সাহা (৬১)। তিনি জানান, বিয়েতে মেয়েকে কিছু দিতে না পারায় প্রায়ই নির্যাতন করতেন পলাশের মা। শাশুড়ির অত্যাচারে সুস্মিতা আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে গিয়েছিল।

শনিবার (১০ মে) সরেজমিনে ফরিদপুর শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন চৌধুরীপাড়া গেলে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপ হয় ভরত সাহার।

আরো পড়ুন:

এসএসসি পরীক্ষার্থীকে হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার

টাঙ্গাইলে সাপের কামড়ে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২

তিনি বলেন, ‘‘সুস্মিতা আমার একমাত্র মেয়ে। প্রায় দুই বছর আগে পারিবারিকভাবে পলাশের সঙ্গে সুস্মিতার বিয়ে হয়। মেয়েকে দেখার পরই পলাশ বিয়ের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল। কিন্তু, আমি রাজি ছিলাম না।’’

‘‘প্রথমত, আমার মেয়ের বিয়ের বয়স হয়নি, আর আমার তেমন টাকা-পয়সা ছিল না। পরে পরিবারের সবাই বোঝানোর পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করি। ভাবলাম, মেয়েকে তো একদিন বিয়ে দিতেই হবে। আর যেহেতু নিজস্ব সম্প্রদায়ের (সাহা) মধ্যে ছেলে পাওয়া গেছে। আর ছেলে হিসেবে পলাশ খুবই ভালো।’’- যোগ করেন তিনি।

ভরত সাহা বলেন, ‘‘মেয়েকে বিয়ে দিয়ে সত্যি রত্ম (পলাশ) পেয়েছিলাম। কিন্তু, বিয়ের পর এক দিনের জন্যেও মেয়ের শ্বশুরবাড়ি যেতে পারিনি; শুধুমাত্র সুস্মিতার শাশুড়ির কারণে। শাশুড়ি যে এত দজ্জাল হয়, জানা ছিল না।’’

তিনি বলেন, ‘‘পলাশ মাঝেমধ্যে ফোনে বলত, আমার মা একটু অন্য রকম। আপনাদের এখন পর্যন্ত আমাদের বাড়িতে আনতে পারিনি, কিছু মনে করবেন না। এজন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’’

নিহত র‍্যাব কর্মকর্তা পলাশ সাহা ও তার স্ত্রী সুস্মিতা সাহা

ভরত সাহা বলেন, ‘‘পলাশ যেদিন মারা গেছে, সেদিন সকালেও ফোন দিয়ে বলেছিল, বাবা সুস্মিতাকে নিয়ে যান। আপনাদের ওখানে কিছুদিন থেকে আসুক। এর আগের দিন, ওরা স্বামী-স্ত্রী ঝগড়া করেছে। সে সময় সুস্মিতার গায়ে হাত পর্যন্ত তোলেন পলাশের মা।’’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘মেয়েকে প্রায়ই ওর শাশুড়ি না খাইয়ে রাখত। মেয়ের জামাই সারাদিন অফিস করে বাসায় এসে ঘরে যেতে চাইলে পলাশের মা যেতে দিত না। বলত, আগে আমার ঘরে থাকবি; পরে বউয়ের কাছে যাবি।’’

ভরত সাহা আরো বলেন, ‘‘সুস্মিতার শাশুড়ির মূল সমস্যা ছিল, আমরা গরীব। বিয়েতে তেমন কিছু দিতে পরিনি। বিভিন্ন সময় মেয়েকে বলেছিল, বিয়েতে তোমার বাবার একশ ভরি স্বর্ণ, গাড়ি, বাড়ি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, কিছুই তো দিল না। এসব বলে মেয়েকে নির্যাতন করত। মেয়ে একপর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল। তখন মেয়েকে বুঝিয়ে শান্ত করি।’’

এর আগে, বুধবার (৭ মে) দুপুর সাড়ে ১২টায় র‌্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পের তৃতীয় তলা থেকে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পলাশ সাহার গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহের পাশে পাওয়া যায় একটি চিরকুট।

চিরকুটে লেখা ছিল, ‘‘আমার মৃত্যুর জনা মা এবং বউ কেউ দায়ী না। আমিই দায়ী। কাউকে ভালো রাখতে পারলাম না। বউ যেন সব স্বর্ণ নিয়ে যায় এবং ভালো থাকে। মায়ের দায়িত্ব দুই ভাইয়ের ওপর। তারা যেন মাকে ভালো রাখে। স্বর্ণ বাদে যা আছে তা মায়ের জন্য। দিদি যেন কো-অর্ডিনেট করে।‬‎’’

পরের দিন সকাল ৯টায় অ্যাম্বুলেন্সযোগে পলাশ সাহার মরদেহ নিয়ে আসা হয় গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার তাড়াশী গ্রামে। ওই দিন দুপুরে উপজেলার পারকোনা শ্মশানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

আরো পড়ুন

চট্টগ্রামে সিনিয়র এএসপির গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার, পাশে ‘সুইসাইড নোট’

এএসপি পলাশের আত্মহত্যার কারণ জানালেন তার ভাই

নিজ গ্রামে এএসপি পলাশ সাহার শেষকৃত্য

‘তোর মা এখান থেকে না গেলে তোকে খুন করব’

ঢাকা/রাজীব

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন হত পল শ স হ র পল শ র ম ভরত স হ ন পল শ য গ কর মরদ হ

এছাড়াও পড়ুন:

নিজ গ্রামে এএসপির পলাশ সাহার শেষকৃত্য 

চট্টগ্রামে র‌্যাব-৭ এ কর্মরত সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পলাশ সাহার আত্মহত্যা কোনোভাবে মেনে নিতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা। তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার তারাশী গ্রামে চলছে মাতম। এলাকাবাসী পলাশের লাশ একনজর দেখতে তার বাড়িতে ভিড় করেন। পরিবারের লোকজন পলাশের মৃত্যুর জন্য তার স্ত্রীকে দায়ী করে তার শাস্তির দাবি করেন।

র‌্যাব-৬ এর পক্ষ থেকে পলাশের লাশে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর উপজেলার পাড়কোনা মহাশ্মশানে পলাশ সাহার অন্তেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। 

বুধবার (৭ মে) দুপুর সাড়ে ১২টায় র‌্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পের তৃতীয় তলা থেকে পলাশ সাহার গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশের পাশে চিরকুট পাওয়া যায়।

আরো পড়ুন:

আশুলিয়ায় ইউপি সদস্যের ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার

চট্টগ্রামে সিনিয়র এএসপির গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার, পাশে ‘সুইসাইড নোট’

ওই চিরকুটে লেখা আছে, ‘‘আমার মৃত্যুর জন্য মা এবং বউ কেউ দায়ী না। আমিই দায়ী। কাউকে ভালো রাখতে পারলাম না। বউ যেন সব স্বর্ণ নিয়ে যায় এবং ভালো থাকে। মায়ের দায়িত্ব দুই ভাইয়ের ওপর। তারা যেন মাকে ভালো রাখে। স্বর্ণ বাদে যা আছে, তা মায়ের জন্য। দিদি যেন কো-অর্ডিনেট করে।’’

তারাশী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার (৮ মে) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে পলাশ সাহার লাশ গ্রামে নিয়ে আসা হয়। এরপর লাশ বাড়ির উঠানে রাখা হয়। এ সময় মা রমা রাণী সাহা ও স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। রমা রাণী সাহা আহাজারি করতে করতে বার বার ছেলের উপর বৌমার নির্যাতনে কথা বলছিলেন। সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

পলাশ সাহা তারাশী গ্রামের মৃত বিনয় কৃষ্ণ সাহার ছেলে। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে পলাশ সবার ছোট। কোটালীপাড়া পাবলিক ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন থেকে এসএসসি ও শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে পলাশ ঢাকায় চলে যান উচ্চ শিক্ষার জন্য। জগ্ননাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হলেও পরের বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়। স্নাতকোত্তর শেষ করে সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগ দেন। আরো ভালো কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার জন্য একের পর এক চাকরির পরীক্ষায় বসেন পলাশ সাহা। যেখানে পরীক্ষা দেন সেখানেই চাকরি হয়ে যায় তার। একে একে পুলিশের এসআই, আনসারের সহকারী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক, ৩৬তম বিসিএসএ শিক্ষা ক্যাডারে চাকরি পেলেও কোনোটায় যোগ দেননি তিনি। ৩৭তম বিসিএসএ পুলিশ ক্যাডারের এএসপি হিসেবে চাকরি হলে সাব রেজিস্ট্রারের চাকরি ছেড়ে পুলিশে যোগ দেন।

পলাশ সাহার এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না গ্রামবাসী। পলাশের মতো নিরীহ ও মেধাবী ছেলে এই গ্রামে ছিল না। তার এভাবে চলে যাওয়ায় সবাই শোকাহত।

দুপুরে উপজেলার পারকোনা শ্মাশানে তার লাশে শেষকৃত্য করা হয়। এর আগে র‌্যাব-৬ এর পক্ষ থেকে পলাশের লাশে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

পলাশ সাহার বড় ভাই লিটন সাহা জানান, ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় তারা বাবাকে হারান। মেধাবী ছোট দুই ভাইয়ের ভবিষ্যত চিন্তা করে তিনি লেখাপড়া বাদ দিয়ে সংসারের হাল ধরেন। পলাশ এসবি সদর দপ্তরে কর্মরত থাকা অবস্থায় বিয়ে করে স্ত্রী ও মাকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। 

স্ত্রীর সঙ্গে অভিমান করে পলাশ সাহা আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করেন তার মেঝ ভাই নন্দ লাল সাহা। তিনি বলেন, ‘‘বিয়ের পর থেকে পলাশের স্ত্রী সুষ্মিতা সাহা টিনটিন মাকে দেখতে পারতেন না। মা পলাশের সঙ্গে থাকুক টিনটিন তা চাইতেন না। এ নিয়ে সবসময় কলহ লেগে থাকতো। পলাশ মাকে খুব ভালোবাসতেন। পলাশ চাইতেন না মা তাকে ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে আসুক। কয়েক মাস হলো পলাশ র‌্যাবে যোগ দিয়ে চট্টগ্রামে গেলে সেখানেও স্ত্রী এবং মাকে নিয়ে যান। এ নিয়ে পলাশের সঙ্গে স্ত্রীর ঝগড়া হয়। আমরা মাকে গ্রামে রাখতে চাইলে তিনিও পলাশকে ছাড়া থাকতে নারাজ ছিলেন। মা ও স্ত্রী দুজনকেই ভালোবাসতেন পলাশ। এই ভালোবাসা আজ কাল হলো। সবার আশা-আকাঙ্ক্ষার জলাঞ্জলি দিয়ে স্ত্রীর উপর অভিমান করে আমাদের ছেড়ে এভাবে চলে যাবে তা মেনে নিতে পারছি না।’’

ঢাকা/বাদল/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মোটরসাইকেল জব্দ করায় পুলিশের ওপর হামলা
  • ‘তোর মা এখান থেকে না গেলে তোকে খুন করব’
  • নিজ গ্রামে এএসপির পলাশ সাহার শেষকৃত্য