নগরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা, সীতাকুণ্ডে তাপপ্রবাহ, নেই বৃষ্টির সম্ভাবনা
Published: 11th, May 2025 GMT
সারা দেশের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। যার কারণে গরম অনুভূত হচ্ছে। তবে চট্টগ্রাম নগরে তাপমাত্রা এখনো মৃদু তাপপ্রবাহের মাত্রা ছোঁয়নি। যদিও গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, চট্টগ্রামে তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম হলেও গরমের অনুভব ২ থেকে ৩ ডিগ্রি বেশি মনে হচ্ছে। চট্টগ্রাম নগরে মৃদু তাপপ্রবাহ না থাকলেও রয়েছে পাশের উপজেলা সীতাকুণ্ডে।
চট্টগ্রাম নগরে গতকাল শনিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন গত শুক্রবারও একই তাপমাত্রা ছিল। এটি চলতি মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। অথচ আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, চলতি মাসের দৈনিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হওয়ার কথা ৩২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ রোববার সকালে চট্টগ্রামে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজকের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হবে বেলা ৩টায়।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, চট্টগ্রামসহ সারা দেশে তাপপ্রবাহ ঊর্ধ্বমুখী। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর শুক্রবার সারা দেশে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা জারি করেছে। ওই সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, দেশের ওপর দিয়ে চলমান মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। শুক্রবার বেলা ২টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কোথাও কোথাও তীব্র তাপপ্রবাহও বয়ে যেতে পারে।
মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয় ৩৬ ডিগ্রি থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। ৩৮ ডিগ্রি থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত মাঝারি তাপপ্রবাহ বলা হয়। সে হিসাবে পতেঙ্গা আবহাওয়া অধিদপ্তরের রেকর্ডকৃত তাপমাত্রা এখনো মৃদু তাপপ্রবাহের নিচে রয়েছে। পতেঙ্গা আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ফারজানা নাসরিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগরে এখনো মৃদু তাপপ্রবাহ দেখা দেয়নি, তবে গরম অনুভূত হচ্ছে। আজও এই গরম অব্যাহত থাকবে। বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।’
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, রাঙামাটি, বান্দরবান, ফেনী, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। গতকাল সীতাকুণ্ডে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া কক্সবাজারে ৩৬ দশমিক ৫, রাঙামাটিতে ৩৮ দশমিক ৫, বান্দরবানে ৩৭ দশমিক ৫ ও ফেনীতে ৩৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র কর ড কর স লস য় স দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
ভাঙ্গা–বরিশাল মহাসড়কের ৪৯ কিলোমিটার বেহাল, ‘ভরসা’ জোড়াতালির মেরামত
বরিশাল থেকে সপ্তাহে দুবার ঢাকায় যাতায়াত করেন নাঈম হাওলাদার। ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে রোবোটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি করছেন। নাঈম হাওলাদার বলেন, বরিশাল থেকে বাসে এত ঝাঁকুনি লাগে যে শরীর ব্যথা হয়ে যায়। অনেক যাত্রী বমিও করে ফেলেন। মন দুরুদুরু করে, কখন কী হয়ে যায়!
বরিশাল থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত সড়কের অবস্থা এমনই বেহাল। সড়কের পিচ, পাথর সরে গিয়ে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। সড়কটিকে সাময়িকভাবে চলাচলের উপযোগী করতে ইট ফেলে খানাখন্দ ভরাট করে ওপরে বালু ফেলা হচ্ছে। এরপর দেওয়া হচ্ছে পিচের প্রলেপ।
তবে যাত্রী ও যানবাহনের চালক–সহকারীরা বলছেন, প্রতিবছর পাঁচ থেকে সাতবার সড়ক মেরামত করা হয়। কিন্তু মাস ঘুরতেই আগের অবস্থায় ফিরে যায়। সাময়িক সংস্কার অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়।
কুয়াকাটা-ঢাকা পথের একটি বাসের চালক কেরামত আলী বলেন, ‘সড়কের যে অবস্থা, তাতে বাস চালাতে অনেক ঝুঁকি। যাত্রীরা আতঙ্কে থাকেন। আমাদের সময়ও বেশি লাগে। যেভাবে মেরামত করা হচ্ছে, তাতে খুব বেশি দিন টিকবে বলে মনে হয় না। কারণ, এ রকম সংস্কার আগেও বহুবার হয়েছে।’
বরিশাল থেকে ভাঙ্গার দূরত্ব ৯৭ কিলোমিটার। মাত্র ২৪ ফুট প্রশস্ত সড়কটিতে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ থাকে। এ ছাড়া জুলাই মাসে এ অঞ্চলে ভারী বর্ষণ হয়েছে। ফলে এ অংশের প্রায় পুরোটাতেই বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল থেকে গৌরনদীর ভুরঘাটা পর্যন্ত ৪৯ কিলোমিটার সড়ক বরিশাল সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের আওতায়, বাকিটা ফরিদপুর সওজের অধীনে।
যেভাবে মেরামত করা হচ্ছে, তাতে খুব বেশি দিন টিকবে বলে মনে হয় না। কারণ, এ রকম সংস্কার আগেও বহুবার হয়েছে।কেরামত আলী, বাসচালকগতকাল সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মহাসড়কের ওই অংশ ঘুরে দেখা যায়, বড় বড় খানাখন্দ ও গর্তে বালু, ইটের সুরকি ও পিচ ফেলে মেরামতের কাজ চলছে। বাবুগঞ্জ উপজেলার শিকারপুর সেতুর পূর্ব প্রান্তে একদল শ্রমিক মেরামতের কাজ করছেন। কয়েক কিলোমিটার পর গৌরনদীর বার্থী এলাকায়ও একই দৃশ্য দেখা গেল।
বার্থী এলাকায় সওজের একটি ট্রাকের চালক মো. শাহজাহান সরদার বলেন, ‘বৃষ্টিতে রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেছে। আগে ইট দিয়ে গর্ত ভরাট করতাম, এখন তার ওপর পিচ ও বালু দিয়ে প্রলেপ দিচ্ছি, যাতে যান চলাচলে ব্যাঘাত কমে এবং যাত্রীদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়।’
পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা সাগর হাওলাদার। তিনি বলেন, ‘দেড়-দুই মাস আগে একইভাবে রাস্তা মেরামত হয়েছিল, কিন্তু টেকেনি। এতে শুধু অর্থের অপচয় হয়।’
একই কথা বললেন ভুরঘাটাগামী একটি মাহেন্দ্রর চালক আবদুল বাছেদ।
বার্থী থেকে ভুরঘাটা পর্যন্ত আরও একটি ট্রাকে মেরামতের কাজ চলছিল খাঞ্জাপুর এলাকায়। কাজ তদারক করছিলেন সওজের কার্য সহকারী (ওয়ার্ক অ্যাসিস্ট্যান্ট) মো. জাকির হোসেন সরদার। তিনি বলেন, সাময়িক ভোগান্তি কমাতে জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় কাজ চলছে।
সওজ সূত্র জানায়, সত্তরের দশকে বরিশাল–ভাঙ্গা সড়ক ছিল ১২ ফুট প্রশস্ত। এখন বেড়ে হয়েছে মাত্র ২৪ ফুট। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সড়কটিতে যানবাহন চলাচল বেড়েছে তিন গুণ। এত চাপ নিতে পারছে না সড়কটি।
ছয় লেন মহাসড়ক নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে উল্লেখ করে বরিশাল সওজের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মাসুদ খান বলেন, তহবিল পাওয়া গেলে দ্রুত ছয় লেনের কাজ শুরু করা যাবে। আপাতত জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে যাত্রীদের ভোগান্তি কমানোর চেষ্টা করছেন।
পটুয়াখালী–কুয়াকাটা মহাসড়কও বেহালটানা বর্ষণে বরিশাল–কুয়াকাটা মহাসড়কের প্রায় ৭১ কিলোমিটারজুড়ে ছোট-বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এতে যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে। একাধিক বাঁকে দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
বাস মালিক সমিতি ও সওজ সূত্র জানায়, এই সড়কে প্রতিদিন অন্তত দুই হাজার যান চলাচল করে। পদ্মা সেতু চালুর পর কুয়াকাটাগামী যানবাহনের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু বেহাল সড়কের কারণে প্রতিদিনই দুর্ভোগ বাড়ছে।
মহাসড়ক ঘুরে দেখা যায়, একটু পরপর গর্ত। বিশেষ করে আমতলী চৌরাস্তা, মানিকঝুড়ি, শাখারিয়া, সাহেববাড়ি, আমড়াগাছিয়া, পাটুখালী, বান্দ্রা ও পখিয়া এলাকায় গর্ত বেশি। জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় ইট ফেলে সাময়িকভাবে ভরাটের চেষ্টা চলছে।
পটুয়াখালী সওজের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাসুদ করিম বলেন, ‘আমরা জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে খানাখন্দ মেরামতের কাজ করছি। আশা করি, এতে ভোগান্তি লাঘব হবে।’