ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় পাকিস্তানের শেখ জায়েদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শনিবার ভোরে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রহিম ইয়ার খান জেলায় অবস্থিত বিমানবন্দরটিতে আকাশ থেকে ভূমিতে আঘাত হানতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে।

বিমানবন্দরটি পাকিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। হামলায় আমিরাতের প্রেসিডেন্ট ও তাঁর পরিবারের ব্যবহৃত রাজকীয় লাউঞ্জসহ বিমানবন্দরটির অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রহিম ইয়ার খান জেলার ডেপুটি কমিশনার খুররম জাভেদ। তিনি বলেন, শেখ জায়েদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লক্ষ্য করে ভারত একটি ক্ষেপণাস্ত্র ও একটি ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে।

এই কর্মকর্তা জানান, ২০২৩ সাল থেকে বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা স্থগিত থাকায় মাঝেমধ্যে আবুধাবির রাজপরিবারের সদস্যরা বিমানবন্দরটি ব্যবহার করতেন। হামলায় রাজকীয় লাউঞ্জটি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। বিমানবন্দরে উড়াজাহাজ দাঁড়ানোর জায়গায় ১০ ফুট চওড়া গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

বিমানবন্দরের আশপাশের বাসিন্দারা জানান, শনিবার ভোর ৪টা ১৫ মিনিটের দিকে তাঁরা কয়েকটি বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান।

আমিরাতের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল–নাহিয়ানের নামে করা এই বিমানবন্দর পাকিস্তানের উড়োজাহাজ চলাচলব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আরব দেশটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক সম্পর্কের কারণে পাকিস্তানের কাছে বিমানবন্দরটির বিশেষ কৌশলগত ও কূটনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে।

পাকিস্তানের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৩ ও ২০১০ সালের ভয়াবহ বন্যার সময় বিমানবন্দরটি ত্রাণ সরবরাহ, খাদ্য ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী পরিবহন এবং দুর্গত মানুষকে স্থানান্তরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরিবহনকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল।

আরও পড়ুনতিন বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত: পাকিস্তানের সেনাবাহিনী১০ মে ২০২৫আরও পড়ুনবিশ্বের প্রথম ‘ড্রোন যুদ্ধ’: ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে নতুন অধ্যায়ের উন্মোচন ঘটাল১৬ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ম নবন দরট

এছাড়াও পড়ুন:

এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর

বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!

কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।

এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)

সম্পর্কিত নিবন্ধ