দেশজুড়ে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ থেকে জনসাধারণকে সুরক্ষিত রাখতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কিছু নির্দেশনা জারি করেছে। এতে দুপুরের সময় (বিশেষ করে দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত) অপ্রয়োজনে বাইরে না যাওয়ার জন্য জনসাধারণকে অনুরোধ করা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে বাইরে যেতে হলে মাথায় ছাতা বা কাপড় দিয়ে রোদ থেকে নিজেকে রক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

গতকাল রোববার (১১ মে) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর পরিচালক আবু হোসেন মো.

মঈনুল আহসান স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় এ কথাগুলো বলা হয়।
নির্দেশনায় প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে বেশি করে বিশুদ্ধ পানি পান, হালকা ও ঢিলেঢালা জামাকাপড় পরা, ঘন ঘন গোসল করা এবং বাসি ও খোলা খাবার এড়িয়ে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ছাড়া ঘরের ভেতরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ছাদে পানি ঢালা ও জানালা খোলা রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

যেকোনো পরামর্শের জন্য ‘স্বাস্থ্য বাতায়ন’–এর ১৬২৬৩ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনাগুলো হলো—

১. দিনের বেলায় ঘরের বাইরে বের হলে ছাতা, টুপি বা ক্যাপ বা কাপড় দিয়ে মাথা যথাসম্ভব ঢেকে রাখতে হবে।
২. হালকা রঙের ঢিলেঢালা সুতির জামা পরতে হবে।
৩. প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান ও তরলজাতীয় খাবার খেতে হবে।
৪. সম্ভব হলে একাধিকবার গোসল করতে হবে।
৫. অতিরিক্ত তেল ও মসলাযুক্ত খাবার, বাসি ও খোলা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

৬. প্রস্রাবের রঙের দিকে লক্ষ রাখতে হবে। গাঢ় হলুদ রঙের প্রস্রাব হলে অবশ্যই পানি পানের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
৭. গরমে অসুস্থ বোধ করলে দ্রুত কাছের চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৮. গরমে যেসব ব্যক্তি অধিক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছেন, যেমন শিশু ও গর্ভবতী মা, বয়স্ক ব্যক্তি ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, রিকশাচালক, কৃষক, নির্মাণশ্রমিক, দিনমজুর, স্থূলকায় ব্যক্তি ও শারীরিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তি, বিশেষ করে হৃদ্‌রোগ ও উচ্চ রক্তচাপের রোগী, তাঁরা বিশেষভাবে সাবধান থাকবেন।
৯. প্রয়োজনে ‘স্বাস্থ্য বাতায়ন’–এর ১৬২৬৩ নম্বরে পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করতে হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য র পর ম

এছাড়াও পড়ুন:

ভাঙ্গা–বরিশাল মহাসড়কের ৪৯ কিলোমিটার বেহাল, ‘ভরসা’ জোড়াতালির মেরামত

বরিশাল থেকে সপ্তাহে দুবার ঢাকায় যাতায়াত করেন নাঈম হাওলাদার। ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে রোবোটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি করছেন। নাঈম হাওলাদার বলেন, বরিশাল থেকে বাসে এত ঝাঁকুনি লাগে যে শরীর ব্যথা হয়ে যায়। অনেক যাত্রী বমিও করে ফেলেন। মন দুরুদুরু করে, কখন কী হয়ে যায়! 

বরিশাল থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত সড়কের অবস্থা এমনই বেহাল। সড়কের পিচ, পাথর সরে গিয়ে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। সড়কটিকে সাময়িকভাবে চলাচলের উপযোগী করতে ইট ফেলে খানাখন্দ ভরাট করে ওপরে বালু ফেলা হচ্ছে। এরপর দেওয়া হচ্ছে পিচের প্রলেপ। 

তবে যাত্রী ও যানবাহনের চালক–সহকারীরা বলছেন, প্রতিবছর পাঁচ থেকে সাতবার সড়ক মেরামত করা হয়। কিন্তু মাস ঘুরতেই আগের অবস্থায় ফিরে যায়। সাময়িক সংস্কার অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়। 

কুয়াকাটা-ঢাকা পথের একটি বাসের চালক কেরামত আলী বলেন, ‘সড়কের যে অবস্থা, তাতে বাস চালাতে অনেক ঝুঁকি। যাত্রীরা আতঙ্কে থাকেন। আমাদের সময়ও বেশি লাগে। যেভাবে মেরামত করা হচ্ছে, তাতে খুব বেশি দিন টিকবে বলে মনে হয় না। কারণ, এ রকম সংস্কার আগেও বহুবার হয়েছে।’

বরিশাল থেকে ভাঙ্গার দূরত্ব ৯৭ কিলোমিটার। মাত্র ২৪ ফুট প্রশস্ত সড়কটিতে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ থাকে। এ ছাড়া জুলাই মাসে এ অঞ্চলে ভারী বর্ষণ হয়েছে। ফলে এ অংশের প্রায় পুরোটাতেই বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল থেকে গৌরনদীর ভুরঘাটা পর্যন্ত ৪৯ কিলোমিটার সড়ক বরিশাল সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের আওতায়, বাকিটা ফরিদপুর সওজের অধীনে।

যেভাবে মেরামত করা হচ্ছে, তাতে খুব বেশি দিন টিকবে বলে মনে হয় না। কারণ, এ রকম সংস্কার আগেও বহুবার হয়েছে।কেরামত আলী, বাসচালক

গতকাল সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মহাসড়কের ওই অংশ ঘুরে দেখা যায়, বড় বড় খানাখন্দ ও গর্তে বালু, ইটের সুরকি ও পিচ ফেলে মেরামতের কাজ চলছে। বাবুগঞ্জ উপজেলার শিকারপুর সেতুর পূর্ব প্রান্তে একদল শ্রমিক মেরামতের কাজ করছেন। কয়েক কিলোমিটার পর গৌরনদীর বার্থী এলাকায়ও একই দৃশ্য দেখা গেল।

বার্থী এলাকায় সওজের একটি ট্রাকের চালক মো. শাহজাহান সরদার বলেন, ‘বৃষ্টিতে রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেছে। আগে ইট দিয়ে গর্ত ভরাট করতাম, এখন তার ওপর পিচ ও বালু দিয়ে প্রলেপ দিচ্ছি, যাতে যান চলাচলে ব্যাঘাত কমে এবং যাত্রীদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়।’

পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা সাগর হাওলাদার। তিনি বলেন, ‘দেড়-দুই মাস আগে একইভাবে রাস্তা মেরামত হয়েছিল, কিন্তু টেকেনি। এতে শুধু অর্থের অপচয় হয়।’

একই কথা বললেন ভুরঘাটাগামী একটি মাহেন্দ্রর চালক আবদুল বাছেদ।

বার্থী থেকে ভুরঘাটা পর্যন্ত আরও একটি ট্রাকে মেরামতের কাজ চলছিল খাঞ্জাপুর এলাকায়। কাজ তদারক করছিলেন সওজের কার্য সহকারী (ওয়ার্ক অ্যাসিস্ট্যান্ট) মো. জাকির হোসেন সরদার। তিনি বলেন, সাময়িক ভোগান্তি কমাতে জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় কাজ চলছে।

সওজ সূত্র জানায়, সত্তরের দশকে বরিশাল–ভাঙ্গা সড়ক ছিল ১২ ফুট প্রশস্ত। এখন বেড়ে হয়েছে মাত্র ২৪ ফুট। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সড়কটিতে যানবাহন চলাচল বেড়েছে তিন গুণ। এত চাপ নিতে পারছে না সড়কটি।

ছয় লেন মহাসড়ক নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে উল্লেখ করে বরিশাল সওজের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মাসুদ খান বলেন, তহবিল পাওয়া গেলে দ্রুত ছয় লেনের কাজ শুরু করা যাবে। আপাতত জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে যাত্রীদের ভোগান্তি কমানোর চেষ্টা করছেন।

পটুয়াখালী–কুয়াকাটা মহাসড়কও বেহাল

টানা বর্ষণে বরিশাল–কুয়াকাটা মহাসড়কের প্রায় ৭১ কিলোমিটারজুড়ে ছোট-বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এতে যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে। একাধিক বাঁকে দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

বাস মালিক সমিতি ও সওজ সূত্র জানায়, এই সড়কে প্রতিদিন অন্তত দুই হাজার যান চলাচল করে। পদ্মা সেতু চালুর পর কুয়াকাটাগামী যানবাহনের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু বেহাল সড়কের কারণে প্রতিদিনই দুর্ভোগ বাড়ছে।

মহাসড়ক ঘুরে দেখা যায়, একটু পরপর গর্ত। বিশেষ করে আমতলী চৌরাস্তা, মানিকঝুড়ি, শাখারিয়া, সাহেববাড়ি, আমড়াগাছিয়া, পাটুখালী, বান্দ্রা ও পখিয়া এলাকায় গর্ত বেশি। জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় ইট ফেলে সাময়িকভাবে ভরাটের চেষ্টা চলছে।

পটুয়াখালী সওজের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাসুদ করিম বলেন, ‘আমরা জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে খানাখন্দ মেরামতের কাজ করছি। আশা করি, এতে ভোগান্তি লাঘব হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ