সৌদি আরবের মক্কায় হজযাত্রীদের জন‍্য বাড়িভাড়া না করা এবং এক বাড়ি দেখিয়ে অন‍্য বাড়িতে হাজি রাখার অভিযোগে চ‍্যালেঞ্জার ট্রাভেলসকে কালোতালিকাভুক্ত করেছে সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়। এটি ১৬টি হজ এজেন্সির সমন্বয়ে গঠিত একটি লিড এজেন্সি। এর অধীন ১৬টি হজ এজেন্সির ১ হাজার ১৮ জন হজযাত্রী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকে ইতিমধ্যে মক্কায় পৌঁছে গেছেন।

গতকাল রোববার রাতে বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হজ এজেন্সিগুলোর সঙ্গে সৌদি সরকারের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের ভার্চ্যুয়াল সভায় দেশটির হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাসান আল মনোয়ার এ তথ্য জানান। সৌদি সরকারের এই ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে চ‍্যালেঞ্জার ট্রাভেলসের লাইসেন্সের অনুকূলে মোনাজ্জেম বা প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তির পাসপোর্ট জব্দ, ভিসা বাতিল এবং সৌদি আরবে তার চলাচল সীমিত করে দিয়েছে। এর ফলে ১৬টি হজ এজেন্সির ১ হাজার ১৮ জন হজযাত্রী দুর্ভোগে পড়তে পারেন।

ভার্চ্যুয়াল সভায় উপস্থিত একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সভায় সৌদি উপমন্ত্রী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের বাড়িভাড়ায় কয়েকটি এজেন্সির অনিয়মের কথা উল্লেখ করেন। তিনি জানান, প্রায় ১৫ হাজার হজযাত্রীর বাড়িভাড়ার কাগজপত্রের সঙ্গে প্রকৃত বাড়ির কোনো মিল নেই। অনেক হজযাত্রীর বেলায় কাগজপত্রে বাড়িভাড়া দেখানো হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে বাড়িভাড়া হয়নি বা এক বাড়ি দেখিয়ে অন‍্য বাড়িতে হজযাত্রী রাখা হচ্ছে। এ কারণে ১৫ হাজার হজযাত্রীর মিনার কার্ড তাঁরা অবরুদ্ধ করে রেখেছেন।

চ‍্যালেঞ্জার ট্রাভেলসের মালিক হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি সৈয়দ গোলাম সারোয়ার। তিনি দাবি করেন, চ‍্যালেঞ্জার ট্রাভেলসকে কালোতালিকাভুক্ত করা হয়নি, কালোতালিকাভুক্ত করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সৌদি উপমন্ত্রী। গোলাম সারোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো অনিয়মের জন্য চ‍্যালেঞ্জার ট্রাভেলসকে কালোতালিকাভুক্ত করার কথা বলা হয়নি। সৌদি সরকারের আইন অনুযায়ী, লিড এজেন্সি হিসেবে অন্যের অনিয়ম বা অপরাধের দায় আমাদের ওপর পড়েছে। “ইউসূফ এয়ার” নামের আমাদের সহযোগী একটি হজ এজেন্সির নিবন্ধিত ৩৫ জন হজযাত্রীর বাড়িভাড়াসংক্রান্ত অনিয়মের কারণে এই জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চ‍্যালেঞ্জার ট্রাভেলসকে কালোতালিকাভুক্ত করা এবং ১৫ হাজার হজযাত্রীর বাড়িভাড়ার কাগজপত্রে অসংগতির তথ্য জানার পর এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন‍্য সৌদি আরবে বাংলাদেশ হজ মিশনকে দায়িত্ব দিয়েছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো.

মঞ্জুরুল হক (হজ অধিশাখা) প্রথম আলোকে বলেন, ‘চ‍্যালেঞ্জার ট্রাভেলসকে কালোতালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা এই লিড এজেন্সির সহযোগী ১৬টি হজ এজেন্সির কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দিচ্ছি। একই সঙ্গে যে কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে, সে বিষয়ে প্রকৃত তথ্য-উপাত্তসহ কিছু বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, খুব দ্রুতই এর সমাধান হয়ে যাবে।’

প্রসঙ্গত, এ বছর ৭৫৩টি হজ এজেন্সির অধীন নিবন্ধিত ৮১ হাজার ৯০০ জন ব্যক্তি ৭০টি ‘লিড এজেন্সির’ মাধ্যমে হজে যাচ্ছেন। এ বছর বাংলাদেশ থেকে মোট ৮৭ হাজার ১০০ জন হজে যাচ্ছেন। এর মধ্যে বেসরকারিভাবে ৮১ হাজার ৯০০ জন এবং সরকারিভাবে ৫ হাজার ২০০ জন হজের জন্য নিবন্ধন করেছেন। গত ২৯ এপ্রিল থেকে হজযাত্রা শুরু হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ল ত ল ক ভ ক ত কর হজয ত র র ব সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সংসদে ১০০ নারী আসন ও সরাসরি নির্বাচনের দাবিতে মানববন্ধন

জাতীয় সংসদে নারীদের সংরক্ষিত আসন ১০০–তে উন্নীত করা এবং আসনগুলোতে সরাসরি নির্বাচনের দাবিতে মানববন্ধন করেছে নারী সংহতি।

আজ শনিবার রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আইন প্রণয়ন ও নীতিনির্ধারণে অর্ধেকের বেশি জনগণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতে ‘সংরক্ষিত নারী আসন বৃদ্ধি ও সরাসরি নির্বাচন চাই’ শিরোনামে মানববন্ধন করে নারী সংহতি। এতে বিভিন্ন নারী সংগঠন, অধিকারকর্মী ও রাজনৈতিক দলের নারী প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, দেশের অর্ধেকের বেশি জনগোষ্ঠী নারী হওয়া সত্ত্বেও জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে রাজনীতির সব ক্ষেত্রেই তাদের প্রতিনিধিত্ব অত্যন্ত নগণ্য। তাই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আসা সরকারের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। এটি না হলে নারী নেতৃত্ব ও গণতান্ত্রিক সংস্কার কার্যকর হবে না। নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের আয়োজন করলে নারী নেতৃত্বে উৎসাহ সৃষ্টি হবে এবং দেশের রাজনীতিতে নারীর প্রভাব এবং অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।

মানববন্ধনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও নারী সংহতির সভাপ্রধান শ্যামলী শীল বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে নারীরা নেতৃত্ব দিয়েছে। আমাদের দাবি, যে নারীরা এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে, তাদের অন্তত একজনকে সরকারের প্রতিনিধিত্বে থাকতে হবে; কিন্তু তা হয়নি। এখনো রাজনৈতিক দলগুলো নারীদের নীতি প্রণয়ন বা নেতৃত্বে দেখতে চায় না। আমরা চাই সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচন হোক এবং সংখ্যা বৃদ্ধি করে ১০০ করা হোক। নারীরা এ দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী, তাদের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’

শ্যামলী শীল আরও বলেন, ‘আমাদের দাবি শুধু সংখ্যা নয়, আমরা চাই প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন, যেখানে নারীরা তাদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারবে।’

গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য তাসলিমা আখতার বলেন, ‘সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং সরাসরি নির্বাচনের দাবি বাংলাদেশের সমস্ত নারী আন্দোলন কর্মী এবং সচেতন নারীদের যৌথ দাবি। ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব পুরোনো ৫০ আসনে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত আমরা প্রত্যাখ্যান করি। ২০২৬ সালের নির্বাচনে ১০০ সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচন বাধ্যতামূলক করতে হবে। এতে নারীরা উৎসাহিত হবে এবং ভবিষ্যতে আরও বেশি অংশগ্রহণ করবে।’

নারী সংহতির সাধারণ সম্পাদক অপরাজিতা দেব বলেন, সব লিঙ্গ পরিচয়ের মানুষের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে সংসদে আলাদা আসন বরাদ্দ থাকতে হবে। ইতিমধ্যে সংরক্ষিত নারী আসন ধাপে ধাপে বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা এখনো নেই। আরপিওতে উল্লেখ নেই যে নির্বাচনে কত শতাংশ নারী প্রতিনিধি থাকবেন। এ ধরনের কার্যক্রমকে ‘লোক দেখানো তামাশা’ হিসেবে প্রত্যাখ্যান করছে নারী সংহতি। এ ছাড়া আদিবাসীদের যথাযথ স্বীকৃতি এবং প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে সংরক্ষিত আসন বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুস্মিতা রায় বলেন, ঐকমত্য কমিশন যখন দেশের ভবিষ্যৎ সংস্কার নিয়ে আলোচনা করছে, সেখানে নারীর কণ্ঠস্বর এবং নারী প্রতিনিধির উপস্থিতি নেই। নারী সংস্কার কমিশন ৪৩৩টি সুপারিশ রাষ্ট্রের কাছে উপস্থাপন করলেও তা উপেক্ষা করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন আন্দোলনে নারীর ভূমিকা অসামান্য; তাই সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ১০০ করার সঙ্গে সরাসরি নির্বাচন প্রবর্তন করা উচিত। এটি নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে এবং গণতান্ত্রিক পথকে শক্তিশালী করবে।

মানববন্ধন শেষে প্রতিবাদ মিছিল করা হয়। এতে ‘৭১–এর রক্তে কেনা, দেশটা শুধু পুরুষের না’, ‘২৪–এর রক্তে কেনা, দেশটা শুধু পুরুষের না’, ‘আর নয় সিলেকশন, এবার চাই ইলেকশন’সহ নানান স্লোগান দেওয়া হয়।

মানববন্ধন ও প্রতিবাদ মিছিলে সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক ও সাংস্কৃতিককর্মী বীথি ঘোষ, নৃবিজ্ঞানী ও গবেষক সায়েমা খাতুন, ইউপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অ্যাকটিভিস্ট মাহ্‌রুখ মহিউদ্দীন, আমজনতার দল-এর সহসভাপতি সাধনা মহল, শিল্পী-অধিকারকর্মী ওয়ারদা আশরাফ, নারী সংহতি কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক নাসরিন আকতারসহ রাজনৈতিক নেতা এবং বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণির ব্যক্তিরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ