বাংলাদেশে এই মুহূর্তে চলছে গ্রীষ্মের খরতাপ, স্বাভাবিকভাবেই জনজীবনে চলছে হাসফাঁস অবস্থা।
আপাতত আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসেও নেই তীব্র গরম কমার কোনো খবর। এই গরমে রোগ-বালাই এড়িয়ে সুস্থ থাকা বেশ কষ্টসাধ্য একটি ব্যাপার।
অতি উচ্চ তাপমাত্রা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাপপ্রবাহ কারও কারও জন্য একটু বেশি ক্লান্তিকর এবং হিট ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও থাকে অনেকের।
যাদের শারীরিক ওজন বেশি, বয়স্ক কিংবা অপ্রাপ্তবয়স্ক, নিয়মিত কোনো রোগের ওষুধ সেবন করছেন কিংবা যারা কোনো দীর্ঘমেয়াদি অসুখে ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে এ ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
যাদের আগে থেকেই কোনো স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে যেমন হৃদরোগ বা বক্ষব্যাধি রয়েছে, এই গরম আবহাওয়ায় তাদের শরীরে উপসর্গ আরও খারাপ হতে পারে। তাদের সচেতন থাকা জরুরি।
কারণ গরম আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে আমাদের হৃৎপিন্ড ও শ্বাসযন্ত্রের কাজ বেড়ে যায়।
এই তীব্র গরমে নিজেকে সুস্থ রাখা জরুরি। গরমে সুস্থ থাকতে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে।
lসরাসরি রোদে যাওয়া থেকে বা অধিক পরিশ্রম থেকে বিরত থাকুন। বিশেষ করে বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত সরাসরি রোদে যাবেন না। এ সময়টায় দিনের সবচেয়ে বেশি গরম থাকে।
lআপনার শোয়ার ঘরটি ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করুন, যাতে আপনার ঘুমে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে। তীব্র রোদের সময়টুকুতে ঘরে যাতে সরাসরি তাপ প্রবেশ না করে, খেয়াল রাখুন। দিনের নির্দিষ্ট একটি সময়ে ঘরের পর্দা টেনে রাখুন। এছাড়া ঘরের মেঝে ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করতে পারেন।
lসর্বোচ্চ তাপমাত্রার সময়ে শরীরচর্চা বা অতিরিক্ত ক্লান্তিকর কোনো কাজ না করাই ভালো। পরিশ্রমের কাজ দুপুর ১২টার আগে সেরে ফেলুন।
lঠান্ডা-গরম করবেন না-রোদ থেকে সরাসরি অফিস বা বাড়ির এসি ঘরে প্রবেশ করবেন না। চেষ্টা করুন ছায়া, পাখার তলায় কিছুক্ষণ স্বাভাবিক তাপমাত্রায় আসার। এসি থেকে সরাসরি রোদেও যাবেন না ।
lসূর্যের আলো থেকে চোখ সুরক্ষার জন্য রোদচশমা ব্যবহার করুন। এ ছাড়া সূর্যের আলোয় সরাসরি যাওয়ার পরিবর্তে মাথায় ছাতা, টুপি, পায়ে জুতা-স্যান্ডেল ব্যবহার করুন।
lতৃষ্ণা না পেলেও প্রচুর পানি পান করুন। পানি ছাড়াও ডাব, জুস, লাচ্ছি, লেবুপানি, দই প্রভৃতি খেতে পারেন। এতে শরীর আর্দ্র থাকবে।
lউচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবারের পরিবর্তে অল্প অল্প খান।
lকোথাও যাওয়ার আগে সঙ্গে পানি অবশ্যই নেবেন।
lসুযোগ থাকলে একাধিকবার গোসল করতে পারেন। বিশেষ করে, ঘুমানোর আগে গোসল করে নিলে শরীরের তাপমাত্রা কম থাকবে।
lহালকা, ঢিলেঢালা ও হালকা রঙের সুতি কাপড় পরবেন।
lঘর যাতে ঠান্ডা থাকে এবং ঘরে যাতে বাতাস প্রবেশ করতে পারে, সে সুযোগ রাখবেন।
lকারও যদি শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, দুর্বলতা ও মাথা ঝিমঝিম করে তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
lগরমে প্রচুর সবজি খেতে পারেন। শসা, টমেটো, ক্যাপসিকাম, লাউ, শাক-পাতা আপনার খাদ্যতালিকায় রাখুন।
গরমের সময়ের একটি গুরুতর স্বাস্থ্যগত সমস্যার নাম হিটস্ট্রোক।
চিকিৎসাশাস্ত্র অনুযায়ী, প্রচণ্ড গরম আবহাওয়ায় শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলে তাকে হিটস্ট্রোক বলে। হিটস্ট্রোক এড়াতে যথাসম্ভব ঘরের ভেতরে বা ছায়াযুক্ত স্থানে থাকুন।
lএক্সারসাইজ করুন ভোরে বা সন্ধ্যার পর:
দিনের যে সময়টায় তাপমাত্রা কম থাকে তখনই ব্যায়াম করুন। ব্যায়াম করার সময়ে সঙ্গে সাধারণ তাপমাত্রার পানি অবশ্যই রাখুন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ইতিহাস কি চোখ রাঙাচ্ছে বাংলাদেশকে
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৭৯.৩ ওভারে ২৪৭। শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৭৮ ওভারে ২৯০/২।রেক্স ক্লেমেন্ত সরাসরিই বলে দিলেন, ‘বাংলাদেশ ভুল করেছে।’ প্রেসবক্সে মধ্যাহ্নভোজের টেবিলে বসে করা তাঁর মন্তব্য কান খাঁড়া করল। নির্দিষ্ট করে কোনটাকে ভুল বলছেন দীর্ঘদিন ধরে মাঠে থেকে ক্রিকেট কাভার করা স্থানীয় এই সাংবাদিক? ভুল তো অনেক!
টসে জিতে ব্যাটিং নিয়ে টেস্টের প্রথম দিনে বাংলাদেশের একের পর এক উইকেট দিয়ে আসা ভুলভাল খেলেই তো! নাকি টসে জিতে ব্যাটিং নেওয়াটাই ভুল হয়েছে বাংলাদেশের? রেক্স শুধরে দিলেন, ‘না, এই উইকেটে আগে ব্যাটিং নেওয়া ঠিক আছে। ভুলটা হলো প্রথম দিনেই বাংলাদেশ নিজেদের ইনিংসটা প্রায় শেষ করে দিল। তাদের উচিত ছিল কালকের দিনটা পার করে দিয়ে আজ রানের জন্য যাওয়া। এখানে দ্বিতীয়, তৃতীয় দিনে ব্যাটিং করা সহজ। পরের দুই দিন আবার এত সহজ নাও হতে পারে।’
লাঞ্চের ওই সময়ে শ্রীলঙ্কার রান বিনা উইকেটে ৮৩। বাংলাদেশের বোলারদের তেমন কোনো প্রতিরোধের মুখে না পড়ে ২১ ওভারেই তা করে ফেলেন দুই ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা ও লাহিরু উদারা। এর আগে সকালে ৭.৩ ওভার খেলে শেষ দুই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। আগের দিনের ২২০ রানের সঙ্গে যোগ হয় ২৭। ৩৩ রান করে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়া তাইজুল ইসলামেরই তাতে অবদান ২৪ রান।
সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাবের (এসএসসি) উইকেট নিয়ে রেক্সের মন্তব্যকে সঠিক প্রমাণ করেই দিনের বাকি সময়টা খেলে গেছেন শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানরা। দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশের বোলারদের একমাত্র অর্জন হয়ে দাঁড়াচ্ছিল উদারাকে ৪০ রানের মাথায় তাইজুলের বোল্ড করা। শেষ বেলায় সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৭ রান দূরে থাকতে নাঈম হাসানের বলে দিনেশ চান্ডিমালের কট বিহাইন্ড হতাশা কিছুটা হলেও কমিয়েছে। দ্রুত রান তুলতে গিয়ে নাঈম হাসানকে রিভার্স সুইপ করে চান্ডিমাল ক্যাচ দেন উইকেট কিপার লিটন দাসের হাতে।
বাংলাদেশের বোলারদের কাজ অবশ্য এখনো অনেকটাই বাকি রেখে দিয়েছেন নিশাঙ্কা। গলে ১৮৭ রানের ইনিংস খেলে আসা এই ওপেনার কলম্বোতে ডাবল সেঞ্চুরির অতৃপ্তি দূর করতে এগোচ্ছেন। দিন শেষে অপরাজিত ২৩৮ বলে ১৮ বাউন্ডারিতে ১৪৬ রান নিয়ে। উদারার সঙ্গে ৮৮ রানের ওপেনিং জুটির পর দ্বিতীয় উইকেটে চান্ডিমালের সঙ্গে গড়েন ১৯৪ রানের জুটি, ৫ রান নিয়ে নিশাঙ্কার সঙ্গী নাইট ওয়াচম্যান প্রবাত জয়াসুরিয়া।
কলম্বো টেস্টের প্রথম দুই দিনে কিছুটা হলেও ফিরে আসছে ২০০৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার ঐতিহাসিক টেস্টের স্মৃতি। সেই ম্যাচে তৃতীয় উইকেটে মাহেলা জয়াবর্ধনে ও কুমার সাঙ্গাকারার ৬২৪ রানের জুটি টেস্ট ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় জুটির রেকর্ড। তাঁদের সৌজন্যেই সেবার টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেটে ৭৫৬ রান করে ইনিংস ঘোষণা করেছিল শ্রীলঙ্কা।
অতীতের প্রসঙ্গ যখন এসেই পড়ল, একটু বিস্তারিতই বলা যাক। তাতে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা চলতি কলম্বো টেস্টের ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও একটা ধারণা মিলতে পারে। এই টেস্টের সঙ্গে কিছু মিলও বোধ হয় পাওয়া যাবে সেই টেস্টের।
সেবারও টসে জিতে ব্যাটিং নিয়েছিল অতিথি দল দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম দিনে ৫০.২ ওভারে ১৬৯ রানে অলআউট হয়ে তাদের অবস্থা হয়েছিল বাংলাদেশের চেয়েও খারাপ। পরে শ্রীলঙ্কাও ব্যাটিংয়ে নেমে হারায় ১৪ রানে ২ উইকেট। সিংহলিজের উইকেটে তখনো প্রথম দিনে ব্যাট করা সহজ ছিল না। বোলাররা, বিশেষ করে পেসাররা এই উইকেটে যা একটু সুবিধা পান প্রথম দিনেই। দ্বিতীয় দিনে উইকেট হয়ে যায় ব্যাটসম্যানদের।
শুরুর বিপর্যয়ের পর উইকেটে গিয়ে পরের দিনের অপেক্ষায় মাটি কামড়ে পড়ে থাকলেন সাঙ্গাকারা ও জয়াবর্ধনে। সেশন ধরে ধরে পার করে দেন দিনের বাকি সময়। আর কোনো উইকেট না হারিয়ে প্রথম দিন শেষে শ্রীলঙ্কার রান হয়েছিল ১২৮। সাঙ্গাকারা ও জয়াবর্ধনে আসল কাজটা করলেন পরদিন, অর্থাৎ টেস্টের দ্বিতীয় দিনে। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের ক্লান্তিকর সেই দিন শেষে শ্রীলঙ্কার রান ওই ২ উইকেটেই ৪৮৫। ততক্ষণে ডাবল সেঞ্চুরি হয়ে গিয়েছিল সাঙ্গাকারা ও জয়াবর্ধনে দুজনেরই।
তৃতীয় দিন চা বিরতির পর ইনিংস ঘোষণা করে শ্রীলঙ্কা। সাঙ্গাকারা-জয়াবর্ধনের রেকর্ড জুটির সৌজন্যে তার আগেই ১৮৫.১ ওভারে ৫ উইকেটে ৭৫৬ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকা ৪৩৪ করেও পারেনি ইনিংস হার এড়াতে।
বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা চলতি কলম্বো টেস্টের স্কোরকার্ডেও যেন কিছুটা সেই ছায়া। দ্বিতীয় দিন শেষে শ্রীলঙ্কা ২ উইকেটেই করে ফেলেছে ২৯০ রান, এগিয়ে গেছে ৪৩ রানে। কাল তৃতীয় দিনে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো বাংলাদেশের ওপরই বড় কিছুই চাপাতে চাইবে তারা।
অথচ টেস্টের প্রথম দিনে শ্রীলঙ্কার বোলারদের কঠিন বলগুলোকে ভালোভাবে সামলে দক্ষিণ আফ্রিকার তুলনায় ভালো শুরুই করেছিল বাংলাদেশ। বিশেষ করে সকালের কঠিন সময়টাতে খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়তে হয়নি। ব্যাটসম্যানরা বাজে আউট না হলে আজ দিন শেষে শ্রীলঙ্কা যে জায়গায়, তার চেয়ে খুব খারাপ থাকত না বাংলাদেশের অবস্থা।
টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েও এসএসসির ব্যাটিং উইকেটে ব্যাটিংয়ের জন্য পয়মন্ত সময়টাই বাংলাদেশকে কাটাতে হচ্ছে শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানদের বোলিং করে, তাদের বাউন্ডারি কুড়িয়ে এনে। এসএসসির অতীত, এখানকার উইকেটের চরিত্র—কোনোটাই অবশ্য অজানা নয়। তার মধ্যেও বাংলাদেশকে চেষ্টা করতে হতো কীভাবে ম্যাচটাকে নিজেদের হাতে রাখা যায়। ব্যাটসম্যানরা তাতে ব্যর্থ, বোলাররাও পারছেন না অসাধারণ কিছু করতে।
চোট কাটিয়ে দুই বছর পর দলে ফেরা পেসার ইবাদত হোসেন প্রথম তিন ওভারে দিয়েছেন ১৭, তাঁর প্রথম স্পেলও ওখানেই শেষ। সপ্তম ওভারে বোলিংয়ে এসে নাহিদ রানার প্রথম স্পেল থেমে যায় ২ ওভারে, রান দিয়েছেন ২০। নাহিদ অবশ্য পরে এসে কিছু বাউন্সার দিয়ে ভয় ধরাতে চেয়েছেন শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানদের মনে, যদিও সেই বাউন্সারের কয়েকটিকে ব্যাটসম্যানরা বাউন্ডারিও বানিয়েছেন।
সবচেয়ে বিস্ময়কর লেগেছে পেসারদের দিয়ে কাজ না হওয়ার পরও গল টেস্টে ৫ উইকেট নেওয়া অফ স্পিনার নাঈম হাসানকে প্রথম সেশনে বোলিংয়ে না আনাটা। ইনিংসের ২৬তম ওভারে নিজের প্রথম ওভার করেন নাঈম। শেষবেলায় চান্ডিমালের উইকেটটাও এসেছে তাঁর বলেই।