কুড়িগ্রামে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মেয়েকে হত্যা, বাবা-মাসহ গ্রেপ্তার ৩: পুলিশ
Published: 13th, May 2025 GMT
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় জমিজমাসংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে হত্যা করেছেন এক বাবা। এ ঘটনায় পুলিশ মেয়েটির বাবা, মা ও এক চাচিকে গ্রেপ্তার করেছে। হত্যার দায় স্বীকার করে তাঁরা আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল সোমবার রাতে কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পুলিশ জানায়, সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের কাগজিপাড়া এলাকার বাসিন্দা জাহিদুল ইসলামের সঙ্গে প্রতিবেশী মজিবর রহমানের ৩২ বিঘা জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। ওই বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গত শনিবার গভীর রাতে পূর্বপরিকল্পিতভাবে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও নিজ মেয়ে জান্নাতি খাতুনকে (১৫) রড ও দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন জাহিদুল। এ কাজে তাঁকে সহায়তা করেন স্ত্রী মোর্শেদা বেগম (৩৮) ও ভাইয়ের স্ত্রী শাহিনুর বেগম (৪৫)। হত্যার পর জান্নাতির মরদেহ ভুট্টাখেতে ফেলে আসেন তাঁরা এবং বাড়ির খড়ের গাদায় আগুন দেন ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে।
পরদিন নিহতের বড় চাচা খলিল হক (৫৫) কুড়িগ্রাম সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, প্রতিপক্ষ মজিবর রহমান ও তাঁর সহযোগীরা মেয়েটিকে তুলে নিয়ে হত্যা করেছেন।
এরপর তদন্ত শুরু করে কুড়িগ্রাম থানার একটি দল। তদন্তে উঠে আসে, মূলত জমিজমাসংক্রান্ত বিরোধে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজের মেয়েকেই হত্যা করেন জাহিদুল।
কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশের মিডিয়া কর্মকর্তা ও ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বজলার রহমান বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত জান্নাতির বাবা জাহিদুল ইসলাম (৪৫), মা মোর্শেদা বেগম ও চাচি শাহিনুর বেগমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কয়েক মাসের মধ্যেই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুরু করতে পারে ইরান: আইএইএ প্রধান
ইরান কয়েক মাসের মধ্যেই আবারও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুরু করতে পারে। তাতেই পারমাণবিক বোমা তৈরির সক্ষমতা অর্জন সম্ভব বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সির (আইএইএ) প্রধান রাফায়েল গ্রোসি।
গতকাল শনিবার সিবিএস নিউজ এ তথ্য জানিয়েছে।
রাফায়েল গ্রোসি জানান, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালালেও সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়নি এসব স্থাপনা। তিনি বলেন, খোলাখুলি বললে, কেউ বলতে পারে না যে সবকিছু নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এখনও কিছু রয়েছে।
যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি– ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।
গত ১৩ জুন ইরানের পরমাণু ও সামরিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। ইসরায়েলের দাবি— ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রও হামলায় যোগ দেয় এবং ইরানের ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহানের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে বোমা ফেলে। কিন্তু এই হামলায় প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি কতটা হয়েছে, তা এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়।
সিবিএস নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গ্রোসি বলেন, তেহরান কয়েক মাসের মধ্যেই সেন্ট্রিফিউজ ঘুরিয়ে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারে। তাদের এখনো শিল্প ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা রয়েছে। সুতরাং, যদি তারা চায়, তবে আবারও এটি শুরু করতে পারবে।
এর আগে পেন্টাগনের একটি গোয়েন্দা মূল্যায়নেও বলা হয়, মার্কিন হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে মাত্র কয়েক মাস পিছিয়ে দিতে পেরেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। একইসঙ্গে তিনি মিডিয়ার বিরুদ্ধে ইতিহাসের অন্যতম সফল সামরিক অভিযানে অবমূল্যায়নের অপচেষ্টা করার অভিযোগ তোলেন।
ট্রাম্প ইরানকে হুঁশিয়ার করে বলেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ আবারও শুরু হলে তিনি ইরানে আবারও বোমা হামলা করবেন। যদিও এই মুহূর্তে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে।
অন্যদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেন, পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা ‘গুরুতর’। তবে এ সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।
আইএইএ যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পক্ষ অবলম্বন করছে এমন অভিযোগ তোলে গত সপ্তাহে ইরানের পার্লামেন্ট সংস্থাটির সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিতের পদক্ষেপ নেয়।
প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের পরমাণু সংস্থা গত মাসে জানায়, ইরান ২০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধবিষয়ক চুক্তি ভঙ্গ করেছে। তবে ইরান দাবি করে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এবং বেসামরিক প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়।
২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি অনুযায়ী, ইরান ১৫ বছর পর্যন্ত ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশের বেশি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে না এবং ফোরদো স্থাপনায় কোনো সমৃদ্ধকরণ চলবে না। তবে ট্রাম্প ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করে নেন এবং পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। এরপর ইরান ওই আরোপিত সীমাবদ্ধতা লঙ্ঘন করতে থাকে। ২০২১ সালে ফোরদোতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ আবারও শুরু করে ইরান।
আইএইএর তথ্য অনুযায়ী, ইরান ইতোমধ্যে ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম এত পরিমাণে মজুত করেছে যা দিয়ে নয়টি পারমাণবিক বোমা তৈরি সম্ভব।