জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর সবাই মিলে রাষ্ট্র কাঠামো পুনর্গঠন বা সংস্কার করা হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। 

মঙ্গলবার (১৩ মে) জাতীয় সংসদ ভবনের এল. ডি হলে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি'র সঙ্গে আলোচনাকালে তিনি একথা বলেন। 

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “রাষ্ট্র কাঠামো পুনর্গঠন বা সংস্কারের লক্ষ্যে আলোচনা মূলত রাজনৈতিক দলগুলোর দীর্ঘদিনের সংগ্রামের ধারাবাহিকতা। চব্বিশের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এই আকাঙ্ক্ষা উন্মুক্ত হয়েছে৷”

“আমরা সকলে ইতিহাসের এমন একটা মাহেন্দ্রক্ষণে উপস্থিত হয়েছি যখন একটি গণতান্ত্রিক এবং জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র বিনির্মাণের মাধ্যমে সব নাগরিকের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং সেই অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করার রূপরেখা তৈরির চেষ্টা করছি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের লক্ষ্য হচ্ছে এমন একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা যা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের পথরেখা কেমন হবে তা নির্দেশ করবে।”

আলোচনায়   উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য ড.

বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

 সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম এবং সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সের নেতৃত্বে আলোচনায় দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপিকা এ এন রাশেদা, কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন এবং সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষসহ ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করেন। 

রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার যে ১১টি কমিশন গঠন করেছে, তার মধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করছে ঐকমত্য কমিশন।

গত ২৩ মার্চ সিপিবি ঐকমত্য কমিশনে সংস্কার বিষয়ক তাদের প্রস্তাবনা জমা দেয়। সেই প্রেক্ষিতে দলটির সঙ্গে আজ আলোচনায় বসে কমিশন৷ এরইমধ্যে সিপিবিসহ ৩২টি রাজনৈতিক দল কমিশনের সঙ্গে প্রথম পর্যায়ের আলোচনায় অংশ নিয়েছে।

ঢাকা/আসাদ/ইভা 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

বিপ্লব সফল করতে না পারায় তরুণদের দায় রয়েছে

বাংলাদেশে বিপ্লব সফল করতে না পারায় তরুণদের দায় রয়েছে বলে মনে করেন লেখক ও চিন্তক ফরহাদ মজহার। ‘কৃষকের মুক্তি ও বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব: ভাসানীর সাধনা’ শীর্ষক আলোচনায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে এ কথা বলেন ফরহাদ মজহার। সোমবার বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেটে ডেইলি স্টার সেন্টারের এ এস মাহমুদ সেমিনার হলে ‘ইতিহাস আড্ডা’ সিরিজের এ আলোচনার আয়োজন করে ডেইলি স্টার।

গত বছরের ৮ আগস্ট বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ নেওয়ার বিষয়টিকে ইঙ্গিত করে লেখক ও চিন্তক ফরহাদ মজহার বলেছেন, ‘৮ আগস্টে একটা কী হয়েছে? একটা রেজিম চেঞ্জ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে এবং এখন যা কিছু ঘটছে, সবই যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ঘটছে।’ এ ঘটনাকে বাঘ তাড়াতে গিয়ে কুমির আনার মতো ঘটনা উল্লেখ করে উপমহাদেশের ভূরাজনৈতিক চরিত্র বদলের দিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখার পরামর্শ দেন তিনি।

জুলাই সনদের প্রসঙ্গ তুলে ফরহাদ মজহার বলেন, ঐক্য ধ্বংস করার জন্য ঐকমত্য কমিশন হয়েছে। এ কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রণীত জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন আদেশ রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরে করার সমালোচনাও করেন তিনি। পাশাপাশি ঐকমত্য কমিশনে জনগণের প্রতিনিধিত্ব না হয়ে লুটেরা, মাফিয়া শ্রেণিদের ঐক্য হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

জুলাই সনদের সমালোচনা করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘পুরোনো সংবিধান রয়ে গেছে, সেই সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট (রাষ্ট্রপতি), তিনি আপনাদের ঐকমত্য কমিশনের দাবি স্বাক্ষর করেছেন। অতএব শেখ হাসিনা স্বাক্ষর করেছে।’

জনগণ সব ক্ষমতার অধিকারী এবং জালিম সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করা ন্যায়সংগত—এসব শিক্ষা মাওলানা ভাসানীর জীবন থেকে শিখতে হবে বলে পরামর্শ দেন এই ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, সরকার, করপোরেশন অন্যায় করলে তাদের বিরুদ্ধেও লড়তে হবে। পাশ্চাত্যকে গ্রহণ করতে গিয়ে নিজস্ব কৃষ্টি-সংস্কৃতি ফেলে না দেওয়ার দুর্দান্ত উদাহরণ মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। আগামী দিনেও তিনি প্রাসঙ্গিক থাকবেন।

ফরহাদ মজহার বলেন, মাওলানা ভাসানীকে ঘিরে দেশে দুই ধরনের ব্যাখ্যা প্রচলিত। একদল তাঁকে কেবল ‘লাল ভাসানী’ হিসেবে দেখেন, যিনি বাম ও সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির পথিকৃৎ। আরেকদল তাঁকে ‘সবুজ ভাসানী’ একজন পীর ও ধর্মীয় নেতৃত্বের ধারক হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। তিনি আরও বলেন, ‘এই দ্বৈত বিভাজন আমাদের সমাজের বাইনারি রাজনীতিরই প্রতিফলন—ইসলাম বনাম ধর্মনিরপেক্ষতা।’

আলোচনায় কৃষিব্যবস্থা সংস্কারের পাশাপাশি ভূমি সংস্কারের ওপর জোর দেন লেখক ও চিন্তক ফিরোজ আহমেদ। তিনি বলেন, মাওলানা ভাসানী তাঁর রাজনীতির মধ্যে সব সময়ই ভূমিসংস্কারের প্রশ্নটা রেখেছিলেন। পাশাপাশি কৃষকের মুক্তি এবং সামাজিক, অর্থনৈতিক বিষয়ে মাওলানা ভাসানীর একটি কঠোর রাজনৈতিক অবস্থান ছিল।

বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম, স্বাধীনতার পর ভূরাজনৈতিক নীতির সমকালীন তাৎপর্য, কৃষকের ওপর রাষ্ট্রের শোষণ নীতির বিরুদ্ধে মাওলানা ভাসানীর দর্শনগুলো তুলে ধরে বর্তমানে তাঁর প্রাসঙ্গিকতায় গুরুত্ব দেন ফিরোজ আহমেদ।

মাওলানা ভাসানীর জীবনীর ওপর আলোকপাত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা বলেন, মাওলানা ভাসানী অসাম্প্রদায়িক একটি সমাজব্যবস্থার স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং এ লক্ষ্যেই তিনি নিপীড়িত মানুষের পক্ষে, তাঁদের অধিকার রক্ষার জন্য সংগ্রাম করে গেছেন।

মোশাহিদা সুলতানা বলেন, ‘মাওলানা ভাসানী তাঁর জীবনকালে যতটুকু প্রাসঙ্গিক ছিলেন, তার থেকে এখন আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়েছেন। ১০০ বছর আগে মাওলানা ভাসানী যা বলেছেন, কৃষকের অবস্থা আসলে সেখান থেকে খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। আমাদের কৃষিব্যবস্থা বদলেছে, কিন্তু কৃষকের প্রতি যে দৃষ্টিভঙ্গি, তা বদলায়নি। জুলাই অভ্যুত্থানের পরও এ অবস্থার পরিবর্তন না হওয়া এবং কৃষি কমিশন গঠন না করারও সমালোচনা করেন তিনি।

অসাম্প্রদায়িক চিন্তা এবং তৎকালীন সরকারের আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে মাওলানা ভাসানীর অবস্থান তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলেন, ‘তিনি (মাওলানা ভাসানী) কিন্তু ধর্মকে ব্যবহার করেননি কোনো এলিট গ্রুপের স্বার্থে। তিনি আসলে তাঁদের (কৃষক) মনের শক্তি জুগিয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, মাওলানা ভাসানী নিজে ধার্মিক ছিলেন; কিন্তু আবার একই দিক থেকে তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক। উদাহরণ হিসেবে আওয়ামী মুসলিম লীগের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দ বাদ দেওয়ার দিকটি তুলে ধরেন।

এ ছাড়া মাওলানা ভাসানীর জীবনকালের নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মানুষের ঐক্য বজায় রাখা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা এবং কৃষকের অধিকার রক্ষায় ভারত সরকারের আগ্রাসী নীতির দিকগুলোও উঠে আসে মোশাহিদা সুলতানার বক্তব্যে।
ডেইলি স্টার–এর সাংবাদিক ইমরান মাহফুজের সঞ্চালনায় আলোচনায় স্বাগত বক্তব্য দেন ডেইলি স্টার–এর সাংবাদিক শামসুদ্দোজা সাজিন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিপ্লব সফল করতে না পারায় তরুণদের দায় রয়েছে