ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে বসানোর দাবিতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের সামনে থেকে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। ঘোষণা অনুসারে, আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে এই কর্মসূচি শুরু হবে।

এর আগে আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে ঢাকাবাসীর ব্যানারে হাজারো মানুষ গুলিস্তানে নগর ভবনে সামনে জড়ো হয়ে মানববন্ধনে দাঁড়ান। পরে লোকসমাগম বেশি হলে তাঁরা বিক্ষোভ শুরু করেন।

অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সচিব মশিউর রহমান কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ইশরাকের শপথ নিয়ে নানা টাল বাহানা করা হচ্ছে। আদালতের রায় ও নির্বাচন কমিশনের গেজেট প্রকাশের পরও অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন ব্যক্তির কারণে জনতার মেয়র ইশরাককে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। শপথের মাধ্যমে ইশরাককে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়ায় কাল বৃহস্পতিবার থেকে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা করা হলো।

বিএনপির বৈদেশিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ মার্চ রায় দেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল। আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ইশরাককে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

নগরভবনের সামনে আজকের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা বলেন, এখন পর্যন্ত ইশরাকের শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। তাঁরা ভোট দিয়ে ইশরাককে মেয়র নির্বাচিত করেছিলেন। কিন্তু কারচুপি করে তাঁকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে আদালতের রায়ে তিনি ন্যায়বিচার পেলেও তাঁর প্রতি এখন অবিচার করা হচ্ছে। তাই তাঁরা ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন।

পুরান ঢাকার নারিন্দা এলাকার বাসিন্দা সাইদুর রহমান বিক্ষোভ চলাকালে প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের রায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হচ্ছে।

আজকের কর্মসূচিতে পুরান ঢাকাসহ ঢাকা দক্ষিণ সিটির বিভিন্ন এলাকার বিপুলসংখ্যক মানুষ অংশ নেন। প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে পৃথক পৃথক মিছিল নিয়ে ইশরাকের সমর্থরা প্রথমে নগর ভবনের সামনের সড়কে এবং পরে নগর ভবন প্রাঙ্গণে অবস্থান নেন। বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের অনেককেও এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা গেছে।

আরও পড়ুনইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে নগরভবনের সামনে বিক্ষোভ২ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: নগর ভবন অবস থ ন ইশর ক

এছাড়াও পড়ুন:

এনবিআর চাকরিকে ‘অত্যাবশ্যকীয়’ সেবা ঘোষণার সিদ্ধান্ত, কাজে না ফিরলে কঠোর ব্যবস্থা

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সব শ্রেণির চাকরিকে ‘অত্যাবশ্যকীয়’ সেবা ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আজ রোববার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অতি জরুরি আমদানি-রপ্তানি ও বৈদেশিক বাণিজ্যের কার্যক্রম চলমান রাখার জাতীয় স্বার্থে সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আওতাধীন সব কাস্টমস হাউস, আইসিডি, বন্ড কমিশনারেট এবং শুল্ক স্টেশনসমূহের সব শ্রেণির চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গতকাল শনিবার থেকে দেশের সব কর, ভ্যাট ও কাস্টমস দপ্তর বন্ধ রেখে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ও ‘মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি’ পালন করছেন। আজও চলছে এই কর্মসূচি। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আন্দোলনকারীরা আজ সকাল থেকে আগারগাঁওয়ের প্রধান কার্যালয়ের বাইরে অবস্থান নেন। এতে দেশের আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রমে ‘স্থবিররা’ দেখা দেয়।

এদিকে আজ দুপুরে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, এদিন এনবিআরের আন্দোলনকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে কোনো বৈঠক হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘কর্মকর্তারা শাটডাউন কর্মসূচি পালন করতে চাইলে করুক।’

এর পরপরই সরকারের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হলো।

বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের বাজেট ব্যবস্থাপনায় উন্নয়নমুখী কার্যক্রম পরিচালনার সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হলো দুর্বল রাজস্ব সংগ্রহ ব্যবস্থা। রাষ্ট্রের প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের রাজস্ব সংগ্রহ অনেক কম। এর মূল কারণ হলো- আমাদের রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থাপনার নানা দুর্বলতা, অনিয়ম ও দুর্নীতি। এর পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার সব অংশীজনের পরামর্শ অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, রাজস্ব সংস্কারের কাজকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নজিরবিহীনভাবে গত ২ মাস ধরে আন্দোলন করছে। এর মাধ্যমে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি এবং রাজস্ব আদায় কার্যক্রম অন্যায় ও অনৈতিকভাবে ব্যাহত করছে। আন্দোলনের নামে তারা চরম দুর্ভোগ তৈরি করেছে, সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য। সংস্কারের বিরোধিতা ছাড়াও অর্থবছরের শেষ ২ মাসে তারা রাজস্ব আদায় কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে। 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই তথাকথিত আন্দোলন পরিকল্পিত ও দুরভিসন্ধিমূলক, যা জাতীয় স্বার্থ এবং নাগরিক অধিকারের চরম পরিপন্থি। সরকারের পক্ষ থেকে রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের দাবি বিবেচনায় নেওয়ার সুস্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া হয় এবং আলোচনায় আসার আহ্বান জানালেও তারা তা অগ্রাহ্য করে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার গ্রহণযোগ্য সমাধান না করে তারা আন্দোলনের নামে অনমনীয় অবস্থান নিয়ে ক্রমাগত দেশের অর্থনীতির ক্ষতি করে চলেছে। এ পরিস্থিতিতে, অতি জরুরি আমদানি-রপ্তানি ও বৈদেশিক বাণিজ্যের কার্যক্রম চলমান রাখার জাতীয় স্বার্থে সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আওতাধীন সব কাস্টমস হাউস, আইসিডি, বন্ড কমিশনারেট এবং শুল্ক স্টেশনসমূহের সব শ্রেণির চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, আমরা আশা করি, অনতিবিলম্বে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মস্থলে ফিরে যাবেন এবং আইনবিরোধী ও জাতীয় স্বার্থবিধ্বংসী কর্মকাণ্ড থেকে সরে আসবেন। অন্যথায় দেশের জনগণ ও অর্থনীতির সুরক্ষায় সরকার কঠোর হতে বাধ্য হবে।

গত ১২ মে এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্বনীতি ও ব্যবস্থাপনা বিভাগে বিভক্ত করে অধ্যাদেশ জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর পর থেকে এনবিআর বিলুপ্তি রোধসহ কয়েকটি দাবিতে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আন্দোলন করছেন। গত ২৫ মে অর্থ মন্ত্রণালয় ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে অধ্যাদেশটি সংশোধন করার আশ্বাস দিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়। এর পর ২২ জুন থেকে চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় পূর্বঘোষণা অনুযায়ী গতকাল সারাদেশে এনবিআরের কর, মূসক ও শুল্ক দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কমপ্লিট শাটডাউন এবং মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি পালন করেন। আজও চলছে এই কর্মসূচি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ