Samakal:
2025-06-30@01:14:15 GMT

আনন্দে পাঠদানই মূলমন্ত্র

Published: 15th, May 2025 GMT

আনন্দে পাঠদানই মূলমন্ত্র

জেলা নয়, উপজেলা শহর থেকেও ১১ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের একটি বিদ্যালয়। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ৩৫ শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু। ১১ বছরের ব্যবধানে সেই বিদ্যালয়ে এখন শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩২০। শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনুযায়ী আট শ্রেণিকক্ষের স্থানে রয়েছে পাঁচটি। এখনও অপূর্ণাঙ্গ অবকাঠামোসহ নানা সংকটে চলছে বিদ্যালয়টি। যেখানে সহকারী শিক্ষক থাকার কথা আট, সেখানে রয়েছেন পাঁচজন। এত সংকটের মধ্যেও দেশসেরা হয়েছে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার সুব্রত খাজাঞ্চী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। 

গত ১০ মে প্রাথমিক শিক্ষা পদক ২০২৪-এর অনুষ্ঠানে দেশের সেরা স্কুল হিসেবে এ বিদ্যালয়কে পুরস্কৃত করা হয়। সুব্রত খাজাঞ্চী বিদ্যালয়টিতে প্রবেশ করলে যে কারও মনে হতে পারে অন্যরকম বিদ্যালয়। মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করলে দৃষ্টি কাড়বে সুন্দর মাঠ ও হরেক রকম ফুল, ফল ও পাতাবাহার গাছের সৌন্দর্য। শিশুদের জন্য রয়েছে দোলনা, স্লিপার, অক্ষরগাছসহ নানা কিছু। আছে বিশ্রাম নেওয়ার শেড। রয়েছে ছাদবাগান ও সততা স্টোর। ভেতরের প্রতিটি কক্ষে রঙের মাধ্যমে শিক্ষামূলক ছবি আঁকা। 
এই ভবনের ওপরে ছাদবাগান। যেখানে রয়েছে আঙুর, কমলা, আম, লেবুসহ বিভিন্ন ফলের গাছ। এক পাশে মুক্তমঞ্চ, যেখানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, উপস্থিত বক্তৃতা ও বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন হয়ে থাকে। 

একতলা ভবনের পেছনে রয়েছে আরও দুটি টিনশেডের শ্রেণিকক্ষ ও সামনে মাঠ। মাঠের চারপাশে প্রাচীরে আঁকা রয়েছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ছবিযুক্ত বিভিন্ন শিক্ষামূলক বাণী। বিদ্যালয়ের প্রতিটি প্রাচীরেই রয়েছে এমন আর্ট। জাতীয় সংসদ, জাতীয় ফুল, ফল, পাখি, বই ও পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এবং জ্ঞান আহরণের অনেক কিছুই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বিদ্যালয়ের দেয়াল ও প্রাচীরগুলোতে।

গত সোমবার যখন বিদ্যালয়টিতে প্রবেশ করা হয়, তখন ঘড়ির কাঁটায় বেলা ১১টা। বিদ্যালয়ে তখন পরীক্ষা  চলছিল। দুপুর সাড়ে ১২টায় প্রথম শিফট ও দ্বিতীয় শিফটের শিক্ষার্থীদের পিটির জন্য ডাকা হয় মাঠে। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ শেষে জাতীয় সংগীত ও শপথবাক্য পাঠ করানো হয়। করানো হয় নৃত্য ও গান পরিবেশন। এর পর প্রধান শিক্ষক মাইকে ঘোষণা দেন যে, এই বিদ্যালয় দেশসেরা পুরস্কার পেয়েছে। ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে করতালির শব্দে মুখর হয়ে ওঠে পুরো মাঠ। 

বিদ্যালয়টির প্রথম শ্রেণিতে দেখা যায়, মেঝের মধ্যে গোল করে তিনজন শিক্ষিকা পড়াচ্ছেন শিশুদের। কখনও আদর করে, কখনও গল্পের ছলে। দ্বিতীয় শ্রেণিতে মজা করে জোড় ও বিজোড় শেখাচ্ছেন গণিত শিক্ষক। তারা জানান, এই বিদ্যালয়ের মূলমন্ত্রই হলো মজার ছলে শেখানো, যাতে স্কুলকে কেউ বোঝা না মনে করে। 

অভিভাবকরা বলেছেন, এই বিদ্যালয়ের প্রতি আগ্রহ এতটাই বেশি যে, সকাল হলেই সন্তানরা অপেক্ষায় থাকে বিদ্যালয়ে যাওয়ার। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী বায়েজিদ ইসলাম বলে, স্কুলে আসতে খুব ভালো লাগে। খেলাধুলা, গান, নাচ, বিতর্ক– অনেক কিছু শিখতে পারি। 

সহকারী শিক্ষক শাহীন আক্তার বলেন, আমাদের শিক্ষা শুধুই পড়ালেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এ ছাড়া উৎসাহ বাড়াতে আমরা পুরস্কৃত করি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জগদীশ রায় বলেন, প্রথমে চারটি টেবিল, ছয়টি চেয়ার, ৬০ জোড়া বেঞ্চ ছাড়া বিদ্যালয়ে কিছুই ছিল না। সাহায্যের জন্য সবার দ্বারে দ্বারে গিয়েছি। স্থানীয় লোকজন এগিয়ে না এলে আমরা শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারতাম না। তিনি বলেন, স্কুলে শিক্ষার্থী অনুযায়ী শিক্ষক কম, শ্রেণিকক্ষের সংকট। যদি এসব সংকট কাটিয়ে ওঠা যায়, তাহলে আমরা বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে পারব। 

চিরিরবন্দর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোছা.

মিনারা বেগম বলেন, আমার উপজেলায় একটি বিদ্যালয় দেশসেরা হয়েছে– এটি আমার খুবই ভালো লেগেছে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব দ য লয়ট উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

আত্মগোপনে থাকা আ.লীগ নেতা বেন্টু ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আত্মগোপনে থাকা আজিজুল আলম বেন্টু (৫৩), তার স্ত্রী গৃহবধূ নাসিমা আলম (৪৮) ও ছেলে রুহিত আমিনের (২৯) বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকেই আজিজুল আলম বেন্টু আত্মগোপনে রয়েছেন।

রোববার সকালে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন।

মামলার বাদী আমির হোসাইন জানান, আজিজুল আলম বেন্টু আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একচেটিয়া বালু ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন। অল্প টাকায় বালুমহাল ইজারা নেওয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। বালুমহাল থেকেই তিনি বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। বৈধ আয়ের উৎস না থাকলেও বিপুল সম্পদের মালিক তার স্ত্রী গৃহবধূ নাসিমা আলম (৪৮) ও ছেলে রুহিত আমিন (২৯)।

দুদক জানায়, তার পরিবারের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান শুরু হয় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই। আজিজুল আলম বেন্টু, তার স্ত্রী নাসিমা আলম ও ছেলে রুহিত আমিনের নামে দুদক ৩৬টি দলিলে ৯ দশমিক ৪০০৮১৮৯ একর জমির সন্ধান পেয়েছে। অনুসন্ধানে তাদের ১৮ কোটি ৪৩ লাখ ১৭ হাজার ৪৫৮ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়।

সম্পদ বিবরণীতে তথ্য গোপন করে দুদককে ৭ কোটি ৬৪ লাখ ২৬ হাজার ৯৪৫ টাকার সম্পদের বিবরণ দেওয়া হয়। ফলে আয়বর্হিভূত ১০ কোটি ৪৬ লাখ ৪৪ হাজার ৬৮১ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ দেখা যায়।

অনুসন্ধানকালে দুদক দেখেছে, বেন্টুর স্ত্রী নাসিমা আলম একজন গৃহিনী হলেও তার নামে আয়কর নথি খোলা হয়েছে। ২০২৩-২৪ করবর্ষে নাসিমা আলমের দাখিলকৃত আয়কর নথি অনুযায়ী, তার নামে মোট সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ৫৭ লাখ ৮৪ হাজার ৯৬৭ টাকার। অনুসন্ধানকালে নাসিমা আলমের আয়ের বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি। স্বামী বেন্টুর অর্জিত সম্পদ তার নিজের আয়কর ফাইলে দেখিয়ে আয়কর নথি খোলা হয়েছে। ছেলে রুহিত আমিনের পেশা ছাত্র হলেও তার নামেও আয়কর নথি খোলা হয়েছে। 

২০২৩-২৪ করবর্ষে দাখিলকৃত আয়কর নথি অনুযায়ী, তার নামে মোট সম্পদ ৭৮ লাখ ৫২ হাজার ৭৫৯ টাকার। তারও আয়ের বৈধ কোনো উৎস পাওয়া যায়নি। বাবা বেন্টুর অর্জিত সম্পদ তার আয়কর ফাইলে দেখিয়ে নিজ নামে আয়কর নথি খোলা হয়েছে। আয়কর নথিতে দেখা যায়, বেন্টু তার স্ত্রী এবং ছেলেকে গাড়ি কেনার জন্য ৬৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকাও দিয়েছেন।

দুদক বলছে, নাসিমা আলম তার স্বামী আজিজুল আলম বেন্টুর অর্জিত জ্ঞাত আয়ের উৎসের সহিত অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ বৈধ করার অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ নামে আয়কর নথি খুলে সম্পদ অর্জন দেখিয়েছেন। একইভাবে ছেলে রুহিত আমিনও তার বাবা আজিজুল আলম বেন্টুর অর্জিত অবৈধ সম্পদ বৈধ করার অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ নামে আয়কর নথি খুলে সম্পদ অর্জন দেখিয়েছেন। এসব অবৈধ সম্পদ নিজেদের নামে রেখে ও ভোগদখল করে তারাও অপরাধ করেছেন। তাই মামলায় বেন্টুর স্ত্রী-ছেলেকেও আসামি করা হয়েছে।

মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন বলেন, ‘মামলটি দায়ের করার পর রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতে নথি পাঠানো হয়েছে। তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ