Samakal:
2025-06-30@01:16:39 GMT

ক্রীতদাস কথা: এক বোধের নাটক

Published: 15th, May 2025 GMT

ক্রীতদাস কথা: এক বোধের নাটক

আলোকিত হয়ে উঠেছে মঞ্চ। মানুষ ছুটছে। তারা জানে না কোথায় তাদের গন্তব্য। তারা বিশ্বাস করে প্রশ্ন নয়, সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ছুটে চলাই তাদের একমাত্র কাজ। তাদের ভাবনায় এই সত্য প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠিত করেছে তারা, যারা তাদের বশে রেখে শাসন-শোষণ জিইয়ে রাখে। তারা প্রভু। তারা ভাবে দেশের মানুষ সবাই তাদের দাস। মঞ্চে ঘটনা ঘটে প্যান্টোমাইমে। ততক্ষণ পর্যন্ত দাস মানসিকতার মানুষগুলো ছুটতে থাকে যতক্ষণ হিমশীতল মৃত্যু তাদের স্পর্শ না করে। বেশির ভাগ মৃত্যু আসে অত্যাচার-নির্যাতনে। শুরু হয় এ সময়ের গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চনাটক ‘ক্রীতদাস কথা’। চীনের আধুনিক সাহিত্যের জনক লু স্যুন একশ বছর আগে লিখেছেন সমাজ বাস্তবতার নগ্ন নিরেট সত্য নিয়ে অসাধারণ এক ছোটগল্প ‘দ্য ওয়াইজ, দ্য ফুল অ্যান্ড দ্য স্লেভ’। বাংলায় তার নাট্যরূপ দিয়েছেন অমল রায়। নাম রেখেছেন ‘ক্রীতদাস কথা’। সম্প্রতি শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ‘ক্রীতদাস কথা’ মঞ্চস্থ করেছে। পাণ্ডুলিপি সম্পাদনা ও নির্দেশনা শাহীন রহমান।

নাটকে ডাইমেনশন আছে একাধিক। নাটকে উপস্থাপিত হয়েছে কীভাবে মানুষের ভাবনায় দাস মানসিকতা জিইয়ে রেখে শাসন-শোষণ অব্যাহত রাখা যায় সে কথা। দাসত্বকে যেখানে নিজ অর্জন বলে প্রতিষ্ঠা করা হয়। একশ বছর পরও যা আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থায় প্রাসঙ্গিক হয়ে আছে। রাষ্ট্রব্যবস্থায় রাজতন্ত্রের ভাবনায় পরিবারতন্ত্র জিইয়ে রাখে শোষণ। মঞ্চে আমরা শুনি দাস মালিকের উদ্ধত উচ্চারণ, ‘আমি অথবা আমার পিতা, তার পিতা, কিংবা তার পিতা, তারও পিতা– আমাদের অধিগত বিদ্যা একটাই। কার চাবুক বাতাসে কত তীক্ষ্ণ শিস তুলে আছড়ে পড়তে পারে দাসের পিঠে।’

তারপরই পারিবারিক ধারাবাহিক ক্ষমতার দাম্ভিকতায় দাস মালিক উদ্ধত চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে থাকে, ‘কোথায় স্পাটাকাস? ভিসুভিয়াসের খোঁড়লে খোঁড়লে স্পাটাকাসরা মরে গলে পচে গেছে। কিংবা রোমের পথে পথে স্পাটাকাসদের মৃতদেহ ক্রুশবিদ্ধ যিশুর মতো আতঙ্ক ছড়িয়েছে। আমি মালিক। ক্রেসাসের রক্ত আমার শরীরে। তোরা এক একটা স্পাটাকাস।’ এখানেই ‘ক্রীতদাস কথা’ এ সময়ের জন্য প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। আমরা দেখতে পাই সমসাময়িক দৃশ্যাবলি। শোষণ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে প্রয়োজন পড়ে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ এবং নিজ মতের আধিপত্য বিস্তার। যেখানে বলপ্রয়োগ করে, দ্বিমত পোষণকারীকে ভয় দেখিয়ে কিংবা প্রতিবাদীকে হত্যা করে রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা টিকিয়ে রাখাকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের রূপ দেওয়া হয়। পৃথিবীতে একক শাসন শুধু প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করে টিকে থাকেনি। টিকে থেকেছে তার অনুগত সাংস্কৃতিক আবহ তৈরি করে। যা করা হয় আদর্শিক আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে। যেখানে উন্নয়নের কথা বলা হয়। আর অনুগত বুদ্ধিজীবীরা তাদের আদর্শ বিকিয়ে দিয়ে দাসত্ব মেনে নেয়। দাস মালিকের এমন একজন অনুগত জ্ঞানী চরিত্র ‘ক্রীতদাস কথা’ নাটকেও দেখা যায়। 

‘ক্রীতদাস কথা’ নাটক মঞ্চে শেষ হয় না। প্রলম্বিত হয় দর্শক মননে। নাটকের সমাপ্তি কী হবে সেই সিদ্ধান্তের ভার থাকে দর্শকের ওপর। দাসত্বকে নিজ অর্জন বলে মেনে নিয়ে আমৃত্যু নির্যাতন সহ্য করে যাওয়া, নাকি ঐক্যবদ্ধ হয়ে অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো!

মিউজিক্যাল ড্রামার আদলে কোরাস ফর্মে নাটকের কাঠামো গড়ে উঠেছে। সেট, প্রপস, কস্টিউম নাটকের সঙ্গে মানিয়ে গেছে। তবে নাটকে আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে। শাস্ত্রমতে অভিনয় সম্পন্ন হয় চার প্রকৃতির মিশেলে। আঙ্গিক, বাচিক, সাত্ত্বিক আর আহার্য। এই নাটকে সংলাপ ছাড়া থিয়েট্রিক্যাল মোমেন্ট তৈরি করা জরুরি। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন টক

এছাড়াও পড়ুন:

আত্মগোপনে থাকা আ.লীগ নেতা বেন্টু ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আত্মগোপনে থাকা আজিজুল আলম বেন্টু (৫৩), তার স্ত্রী গৃহবধূ নাসিমা আলম (৪৮) ও ছেলে রুহিত আমিনের (২৯) বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকেই আজিজুল আলম বেন্টু আত্মগোপনে রয়েছেন।

রোববার সকালে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন।

মামলার বাদী আমির হোসাইন জানান, আজিজুল আলম বেন্টু আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একচেটিয়া বালু ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন। অল্প টাকায় বালুমহাল ইজারা নেওয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। বালুমহাল থেকেই তিনি বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। বৈধ আয়ের উৎস না থাকলেও বিপুল সম্পদের মালিক তার স্ত্রী গৃহবধূ নাসিমা আলম (৪৮) ও ছেলে রুহিত আমিন (২৯)।

দুদক জানায়, তার পরিবারের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান শুরু হয় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই। আজিজুল আলম বেন্টু, তার স্ত্রী নাসিমা আলম ও ছেলে রুহিত আমিনের নামে দুদক ৩৬টি দলিলে ৯ দশমিক ৪০০৮১৮৯ একর জমির সন্ধান পেয়েছে। অনুসন্ধানে তাদের ১৮ কোটি ৪৩ লাখ ১৭ হাজার ৪৫৮ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়।

সম্পদ বিবরণীতে তথ্য গোপন করে দুদককে ৭ কোটি ৬৪ লাখ ২৬ হাজার ৯৪৫ টাকার সম্পদের বিবরণ দেওয়া হয়। ফলে আয়বর্হিভূত ১০ কোটি ৪৬ লাখ ৪৪ হাজার ৬৮১ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ দেখা যায়।

অনুসন্ধানকালে দুদক দেখেছে, বেন্টুর স্ত্রী নাসিমা আলম একজন গৃহিনী হলেও তার নামে আয়কর নথি খোলা হয়েছে। ২০২৩-২৪ করবর্ষে নাসিমা আলমের দাখিলকৃত আয়কর নথি অনুযায়ী, তার নামে মোট সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ৫৭ লাখ ৮৪ হাজার ৯৬৭ টাকার। অনুসন্ধানকালে নাসিমা আলমের আয়ের বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি। স্বামী বেন্টুর অর্জিত সম্পদ তার নিজের আয়কর ফাইলে দেখিয়ে আয়কর নথি খোলা হয়েছে। ছেলে রুহিত আমিনের পেশা ছাত্র হলেও তার নামেও আয়কর নথি খোলা হয়েছে। 

২০২৩-২৪ করবর্ষে দাখিলকৃত আয়কর নথি অনুযায়ী, তার নামে মোট সম্পদ ৭৮ লাখ ৫২ হাজার ৭৫৯ টাকার। তারও আয়ের বৈধ কোনো উৎস পাওয়া যায়নি। বাবা বেন্টুর অর্জিত সম্পদ তার আয়কর ফাইলে দেখিয়ে নিজ নামে আয়কর নথি খোলা হয়েছে। আয়কর নথিতে দেখা যায়, বেন্টু তার স্ত্রী এবং ছেলেকে গাড়ি কেনার জন্য ৬৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকাও দিয়েছেন।

দুদক বলছে, নাসিমা আলম তার স্বামী আজিজুল আলম বেন্টুর অর্জিত জ্ঞাত আয়ের উৎসের সহিত অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ বৈধ করার অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ নামে আয়কর নথি খুলে সম্পদ অর্জন দেখিয়েছেন। একইভাবে ছেলে রুহিত আমিনও তার বাবা আজিজুল আলম বেন্টুর অর্জিত অবৈধ সম্পদ বৈধ করার অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ নামে আয়কর নথি খুলে সম্পদ অর্জন দেখিয়েছেন। এসব অবৈধ সম্পদ নিজেদের নামে রেখে ও ভোগদখল করে তারাও অপরাধ করেছেন। তাই মামলায় বেন্টুর স্ত্রী-ছেলেকেও আসামি করা হয়েছে।

মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন বলেন, ‘মামলটি দায়ের করার পর রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতে নথি পাঠানো হয়েছে। তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ