মিয়ানমারের রাখাইনে মানবিক করিডর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত বাতিল এবং চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার ঘোষণার প্রতিবাদে রাজধানীতে সমাবেশ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ সমাবেশ হয়। সমাবেশ থেকে এসব সিদ্ধান্ত বাতিল করে এক সপ্তাহের মধ্যে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানানো হয়েছে।

বামজোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবিরের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ, বাসদের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আবদুল আলীসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভা পরিচালনা করেন বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নজরুল ইসলাম।

সমাবেশে বাম জোটের নেতারা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার ভার বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেশের স্বার্থবিরোধী। দেশের টাকায় সবকিছু করে এখন বিদেশিদের হাতে টার্মিনালটি তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত রহস্যজনক ও চক্রান্তমূলক। বন্দরের শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রতিবাদ অগ্রাহ্য করে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার টার্মিনালটি আরব-আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডের কাছে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সে সিদ্ধান্ত বাতিল না করে আওয়ামী লীগ সরকারের পদাঙ্ক অনুসরণ করছে।

বাম জোটের নেতারা আরও বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর। দেশের আমদানি–রপ্তানির সিংহভাগ এর ওপর নির্ভরশীল। চট্টগ্রাম বন্দরের পাশে দেশের নৌঘাঁটি, বিমানঘাঁটিসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার অবস্থান। এমন একটি স্থানে বিদেশি কোম্পানিকে টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া ভবিষ্যতে দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

সমাবেশে কোনো আলোচনা ছাড়া আরাকানে কথিত মানবিক করিডর দেওয়ার তৎপরতার সমালোচনা করেন বাম জোটের নেতারা। তাঁরা বলেন, আরাকানে মানবিক করিডর দেওয়ার সিদ্ধান্ত একটি স্পর্শকাতর বিষয়। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ও মতামতের ভিত্তিতে ঐকমত্য ছাড়া এ ধরনের স্পর্শকাতর বিষয়ে সরকার একক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।

এ ছাড়া কাতারের বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে সমরাস্ত্রের যন্ত্রাংশ তৈরির খাতে বিনিয়োগ করতে সরকারের আহ্বানের নিন্দা জানান বক্তারা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর

বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!

কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।

এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)

সম্পর্কিত নিবন্ধ