মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও দাবি করেছেন, ভারত যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে আরোপিত ১০০ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারে আগ্রহী। তবে তিনি জানিয়েছেন, এরপরও তিনি এখনই বাণিজ্যচুক্তি করতে আগ্রহী নন।

গত শুক্রবার ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘ভারত এমন এক দেশ, যারা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নানা বিধিনিষেধ দিয়ে রেখেছে। তবে তারা এখন যুক্তরাষ্ট্রের শতভাগ শুল্ক প্রত্যাহারে প্রস্তুত।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি চুক্তি করতে তাড়াহুড়া করছি না। সবাই আমাদের সঙ্গে চুক্তি করতে চায়, কিন্তু আমি সবার সঙ্গে চুক্তি করব না।’ খবর ইকোনমিক টাইমস ও হিন্দুস্তান টাইমস।

এদিকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ট্রাম্পের মন্তব্যকে ‘অতিসরলীকরণ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা চলছে, বিষয়টি জটিল ও বহুস্তরিক, এখনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত এ নিয়ে কিছু বলা হবে সময়ের আগেই মন্তব্য করা।

বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘদিন ধরেই ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ভারসাম্য, বাজার সুবিধার শর্ত ও প্রযুক্তিগত শুল্ক নিয়ে আলোচনা চলছে। ট্রাম্প প্রশাসনের একতরফা শুল্ক বৃদ্ধির জবাবে ভারতও নানা পদক্ষেপ নিয়েছে।

তবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর স্পষ্ট করে বলেছেন, ভারত-মার্কিন বাণিজ্যচুক্তি ও আমদানি শুল্ক নির্ধারিত হবে আলোচনার মাধ্যমে। সেই বৈঠকে যোগ দিতে ইতিমধ্যে ওয়াশিংটনে গেছেন দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল।

কয়েক দিন আগেও ট্রাম্প বলেছিলেন, ভারত শতভাগ শুল্ক প্রত্যাহার করতে চায়। তখন ভারতের পক্ষ থেকে বিষয়টি অস্বীকার হয়। কিন্তু এরপর শুক্রবার তিনি আবার একই কথা বলেছেন।

পরপর দুবার ট্রাম্পের এ ধরনের কথায় অস্বস্তিতে পড়েছে মোদি সরকার। দেশটির বিরোধী রাজনীতিকেরা যথারীতি সরব। তাঁদের দাবি, প্রধানমন্ত্রীকে এ বিষয়ে মুখ খুলতে হবে। যদিও এর ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন এস জয়শঙ্কর।

ট্রাম্প বলেছেন, ‘ভারত বাণিজ্যচুক্তি চায়। বিশ্বের যেসব দেশে শুল্ক সবচেয়ে বেশি, তার মধ্যে ভারত অন্যতম। তাদের সঙ্গে বাণিজ্য করা প্রায় অসম্ভব।

ট্রাম্পের দাবি, সব দেশই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি করতে চায়। সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়াও সেই আগ্রহ প্রকাশ করেছে। যদিও তাঁর পক্ষে ব্যক্তিগতভাবে প্রায় ১৫০টি দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা সম্ভব নয়। কিন্তু ভারত নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করার পরেও ট্রাম্পের এই ‘আত্মবিশ্বাসের’ কারণ কী, তা নিয়ে ধন্দে আছেন ভারতের বিরোধী রাজনীতিকেরা।

চার বছর ধরে আমেরিকা ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য সহযোগী। ২০২৪ সালে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। ২০৩০ সালের মধ্যে বাণিজ্যের অঙ্ককে ৫০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করতে চাইছে দিল্লি। সে ক্ষেত্রে ভারতের রপ্তানিও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। ফলে ভারত চুক্তি নিয়ে আগ্রহী।

গত বৃহস্পতিবার অ্যাপলের বিনিয়োগ নিয়েও ভারতকে অস্বস্তিতে ফেলেছেন ট্রাম্প। বলেছেন, তিনি অ্যাপলের সিইও টিম কুকের সিদ্ধান্তে বিরক্ত। ভারতে অ্যাপলের কারখানা করা উচিত নয়। তিনি কুককে বলেছিলেন, ভারতে কারখানা করার দরকার নেই। তারা নিজেরা বুঝে নিক।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বল ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

হামলার আগে পাকিস্তানকে জানিয়েছিল দিল্লি, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্যে তোলপাড় ভারতে

‘অপারেশন সিঁদুর’ চালানোর আগে পাকিস্তানকে অবহিত করেছিল ভারত। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের এই ‘স্বীকারোক্তির’ পর ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। 

ভারতেরর প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, হামলার আগে পাকিস্তানকে সবকিছু জানিয়ে দিয়ে ভারতের নিরাপত্তা ও সেনাদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। 

শনিবার রাহুল গান্ধী এক্স-এ জয়শঙ্করের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। সেখানে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলতে শোনা যাচ্ছে, “অপারেশনের শুরুতে, আমরা পাকিস্তানকে একটি বার্তা পাঠিয়ে বলেছি, ‘আমরা সন্ত্রাসী অবকাঠামোতে হামলা চালাচ্ছি এবং আমরা পাক সেনাদের ওপর হামলা চালাব না। এতে পাক সেনাদের দূরে সরে যাওয়ার এবং এতে জড়িত না হওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু তারা আমাদের এই ভালো পরামর্শ না নেওয়াকে বেছে নেয়।”

সমালোচনার মুখে ভারতের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো (পিআইবি) দাবি করেছে, জয়শঙ্কর পাকিস্তানকে হামলার আগে হামলা সম্পর্কে জানানো হয়েছে, এমন কিছু বলেননি। তার কথা ভুলভাবে প্রচারিত হচ্ছে।

রাহুল গান্ধী এক্স- এ এক পোস্টে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, “কে এটা অনুমোদন করেছে? এর জন্য আমাদের বিমানবাহিনী কত বিমান হারিয়েছে?”

আম আদমি পার্টির (এএপি) রাজ্যসভার সদস্য সঞ্জয় সিং কথিত পূর্ব সতর্কতাকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা’ বলে অভিহিত করেছেন। 

তিনি বলেছেন, “পাকিস্তানকে আগে থেকে জানানো ভারত এবং আমাদের সেনাবাহিনীর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা। এটি নজিরবিহীন এবং ক্ষমার অযোগ্য।”

তিনি আরো বলেন, “এখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে উত্তর দিতে হবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কতটা সত্যি বলছেন। আর আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে দাবি করেছেন সেগুলোর সত্যতা কতটুকু। কেন পাকিস্তানকে আগে বলা হলো। এটি কি উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা ছিল? ভারতের মানুষের এ ব্যাপারে জানার অধিকার আছে। মোদি সরকারকে উত্তর দিতে হবে। তারা কি সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে বেঈমানি এবং আমাদের নিরাপত্তাকে অবমূল্যায়ন করেছে কি না। এরপর বিরোধী দল সাধারণ মানুষকে জানাবে এবং এর সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করবে।”

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হামলার আগে পাকিস্তানকে জানিয়েছিল দিল্লি, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্যে তোলপাড় ভারতে