ভারত–পাকিস্তান সংঘর্ষে জিতল কি চীন
সেকশন: য়া/বিশ্ব
ট্যাগ: ভারত, পাকিস্তান,
মেটা:
একসার্পট:
ছবি-০১: shahbaz-chin ping নামে ইন্টারন্যাশনালে
ক্যাপশন-০১:
ছবি-০২: j-10c fighter নামে ইন্টারন্যাশনালে
ক্যাপশন-০২:
ছবি-০৩: pahalgam নামে ইন্টারন্যাশনালে
ক্যাপশন-০৩:



চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এই মাসে চার দিনের সংঘর্ষ যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে শেষ হয়েছে এবং উভয় পক্ষই বিজয় দাবি করেছে। তবে দেখা যাচ্ছে, চীনের প্রতিরক্ষা শিল্পও এ সংঘর্ষে থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে বিজয়ী বা লাভবান হতে পারে।

সাম্প্রতিকতম এ সংঘর্ষের শুরু ৭ মে। ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাঁদের অধিকাংশই ছিলেন পর্যটক। এ ঘটনার জেরে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে তথাকথিত ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো’ লক্ষ্য করে হামলা চালায় ভারত।

পেহেলগামের ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের অনেকে তাঁদের স্ত্রী ও পরিবারের অন্য স্বজনদের সামনে নিহত হন। নয়াদিল্লি এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহভাজন গোষ্ঠীগুলোর পৃষ্ঠপোষকতার জন্য ইসলামাবাদকে দায়ী করে, যা পাকিস্তান অস্বীকার করে।

‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে ভারতের চালানো এ হামলার পরপরই উভয় পক্ষ পাল্টাপাল্টি সামরিক অভিযান শুরু করে। এসব অভিযানে ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও যুদ্ধবিমান ব্যবহৃত হয়। পাকিস্তান তার পাল্টা অভিযানের নাম দেয় ‘অপারেশন বুনইয়ান-উন-মারসুস’।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংঘর্ষে ভারত ফরাসি ও রুশনির্মিত যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে। অন্যদিকে, পাকিস্তান ব্যবহার করে চীনের সঙ্গে তাদের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত জে-১০ ও জে-১৭ যুদ্ধবিমান। ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের দাবি, তাদের যুদ্ধবিমান সীমান্ত অতিক্রম করেনি ও দূরত্ব বজায় রেখে একে অপরের ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে।

ইসলামাবাদ দাবি করে, তাদের যুদ্ধবিমান অন্তত ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে নতুন করে কেনা ফরাসি রাফালও রয়েছে। দিল্লি এ দাবির কোনো জবাব দেয়নি।

‘ক্ষতি যুদ্ধের অংশ’—ভারতীয় বিমানবাহিনীর (আইএএফ) এয়ার মার্শাল এ কে ভারতি ওই দাবি প্রসঙ্গে গত সপ্তাহে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন। তবে পাকিস্তান ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করেছে, নির্দিষ্ট এ দাবি নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।

সংঘর্ষে ভারত ফরাসি ও রুশনির্মিত যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে। অন্যদিকে, পাকিস্তান ব্যবহার করে চীনের সঙ্গে তাদের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত জে-১০ ও জে-১৭ যুদ্ধবিমান। ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের দাবি, তাদের যুদ্ধবিমান সীমান্ত অতিক্রম করেনি ও দূরত্ব বজায় রেখে একে অপরের উদ্দেশে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে।

‘আমরা আমাদের নির্ধারিত লক্ষ্যগুলো অর্জন করেছি এবং আমাদের সব পাইলট ঘরে ফিরে এসেছেন’, যোগ করেন এ কে ভারতি।

ভারত দাবি করে যে তারা পাকিস্তানভিত্তিক নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবা ও জইশ-ই-মুহাম্মদের সদর দপ্তর লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে অন্তত ১০০ ‘সন্ত্রাসী’ হত্যা করেছে।

এ আকাশযুদ্ধের প্রকৃত অবস্থা এখনো স্পষ্ট নয়। কিছু সংবাদমাধ্যম পাঞ্জাব ও ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার খবর দিয়েছে। তবে ভারত সরকার এসবের কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

আরও পড়ুনভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির মেয়াদ সম্পর্কে কী বলছেন দুই দেশের কর্মকর্তারা১৮ ঘণ্টা আগে

রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে মার্কিন কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, পাকিস্তান সম্ভবত চীনা-নির্মিত জে-১০ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ভারতীয় যুদ্ধবিমানের বিরুদ্ধে আকাশ থেকে আকাশে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এ সক্রিয় যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ব্যাপকভাবে চীনা অস্ত্র ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে পাকিস্তানের বিজয় দাবি করাকে কিছু বিশেষজ্ঞ বেইজিংয়ের প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য বড় অর্জন হিসেবে দেখছেন, যদিও অনেকে এ দাবির সঙ্গে একমত নন।

কিছু বিশেষজ্ঞ এটিকে চীনের অস্ত্রশিল্পের জন্য একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত’ বলে অভিহিত করেন। এ বক্তব্যের মাধ্যমে চলতি বছরের জানুয়ারিতে একটি চীনা এআই স্টার্টআপ তাদের সাশ্রয়ী প্রযুক্তি দিয়ে মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টদের চমকে দেওয়ার ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে।

এ আকাশযুদ্ধের ফলাফল এটিই দেখিয়েছে, চীনের এমন কিছু ব্যবস্থা রয়েছে, যেগুলো তুলনাহীন।ঝৌ বো, বেইজিংভিত্তিক বিশ্লেষক

‘এ আকাশযুদ্ধ ছিল চীনা অস্ত্রশিল্পের জন্য এক বিশাল বিজ্ঞাপন। এখন পর্যন্ত যুদ্ধ পরিস্থিতিতে নিজের প্ল্যাটফর্মগুলোর কার্যকারিতা পরীক্ষার কোনো সুযোগ চীনের হয়নি’, চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র কর্নেল ঝৌ বো বলেন বিবিসিকে।

কর্নেল ঝৌ বো বলেন, এ আকাশযুদ্ধের ফলাফল এটিই দেখিয়েছে, ‘চীনের এমন কিছু ব্যবস্থা রয়েছে, যেগুলো তুলনাহীন।’ ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে জে-১০ যুদ্ধবিমানের কার্যকারিতা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর গত সপ্তাহে এ বিমান নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান অ্যাভিক চেংদু এয়ারক্রাফট নামের প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়ে যায়।

তবে অন্য কয়েকজন বিশেষজ্ঞ মনে করেন, চীনা অস্ত্র ব্যবস্থার শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করার সময় এখনো আসেনি।

লন্ডনের কিংস কলেজের অধ্যাপক ওয়াল্টার ল্যাডউইগ বলেন, চীনা যুদ্ধবিমানগুলো প্রকৃতপক্ষে ভারতীয় বিমানবাহিনীর বিমানগুলো, বিশেষ করে রাফালকে কৌশলে হার মানিয়েছে কি না, তা এখনো নির্ধারণ করা যায়নি।

আরও পড়ুনকীভাবে ভারত–পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখা বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক সীমান্ত হয়ে উঠল১৯ মে ২০২৫ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিকতম সংঘর্ষে চীনের তৈরি ‘জে-১০সি যুদ্ধবিমান’ ব্যবহার করে পাকিস্তান.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন ব যবহ র কর ব যবস থ স ঘর ষ র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য আহরণ শুরু হচ্ছে শনিবার মধ্যরাতে

তিন মাস দুই দিন পর কাপ্তাই হ্রদে শুরু হচ্ছে মৎস্য আহরণ। শনিবার (২ আগস্ট) মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরতে পারবেন জেলেরা। 

কাপ্তাই হ্রদে পর্যাপ্ত পানি থাকায় কয়েক বছরের মধ্যে এবার নির্দিষ্ট সময়ে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে জেলা প্রশাসন। অন্যান্য বছর ২-৩ দফা সময় বাড়িয়ে প্রায় চার মাস পর মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হতো। কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের বংশবৃদ্ধি, প্রজনন এবং অবমুক্ত করা মাছের বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছর তিন মাস কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দেয় জেলা প্রশাসন।

এদিকে, মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর শুধু জেলে পাড়া নয়, কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে জেলার সবচেয়ে বড় মৎস্য অবতরণকেন্দ্র বিএফডিসি ঘাট। মাছ পরিবহন ও সংরক্ষণের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে ড্রাম, বরফ ভাঙার মেশিন। দীর্ঘ ৯২ দিনের কর্মহীন জীবনের অবসান ঘটাতে প্রহর গুনছেন জেলেরা। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সেরে রেখেছেন ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি)। 

বিএফডিসি সূত্র বলছে, কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন, অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য ১ মে থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে তিন মাস মাছ শিকার বন্ধ রাখা হয়। এ সময়ে হ্রদে প্রায় ৬০ মেট্রিক টন কার্প জাতীয় মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়। কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন প্রায় ২৬ হাজার জেলে। 

রাঙামাটির শহরের পুরান পাড়া জেলা পল্লীর বাসিন্দা নেপাল দাশ জানিয়েছেন, মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞাকালে যে সরকারি সহায়তা পাওয়া যায়, তাতে পরিবার নিয়ে চলা কঠিন। দীর্ঘ তিন মাস পর মাছ ধরতে নামতে পারব, এতে খুশি আমরা। 

নতুন পাড়ার জেলে অমর কান্তি দাশ বলেছেন, হ্রদে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মাছগুলো বড় হওয়ার সুযোগ পাবে। তবে, পানিতে ঢেউ থাকায় শুরুতে বেশি মাছ পাওয়া যাবে না। পানি কিছু কমে আসলে ও স্থির হলে ভালো মাছ পাব, আশা করি। হ্রদে নামার জন্য যা যা প্রস্তুতি, সবকিছু শেষ করেছি। জাল ও নৌকা মেরামত করা হয়েছে। এখন শুধু লেকে নামার অপেক্ষা। 

রাঙামাটি মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি উদয়ন বড়ুয়া বলেছেন, এবার নিষেধাজ্ঞার শুরু থেকে পর্যাপ্ত বৃষ্টির ফলে কাপ্তাই হ্রদে যথেষ্ট পানি থাকায় মাছ প্রথম থেকেই প্রজনন এবং বড় হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। আশা করছি, এবার পর্যাপ্ত মাছ পাওয়া যাবে। ব্যবসায়ীরা সব প্রস্ততি নিয়েছেন। রবিবার সকাল থেকে বিএফডিসি ঘাটে মাছ আসবে।

বিএফডিসির রাঙামাটি অঞ্চলের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. ফয়েজ আল করিম বলেছেন, নিষেধাজ্ঞাকালীন আমাদের উপকেন্দ্রগুলোর যেসব অবকাঠামো সংস্কারের প্রয়োজন ছিল, সেসব আমরা শেষ করেছি। অন্যান্য যেসব প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন, সেসবও শেষ হয়েছে। আশা করছি, গত বছরের মতো এবছরও ভালো মাছ পাওয়া যাবে।

ঢাকা/শংকর/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ