ফুলতলা চা-বাগান পাঁচ মাস বন্ধ, কর্মহীন দেড় হাজার শ্রমিকের ঘরে খাবার নেই
Published: 20th, May 2025 GMT
ফুলতলা চা-বাগানে ঢুকতেই রোদেলা আকাশ মুহূর্তেই ঢেকে গেল কালো মেঘে। ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে কেউ কেউ আশ্রয় নেন বাগানের বন্ধ কার্যালয়ের বারান্দায়। সেখানেই দেখা মিলল শ্রমিক রাজকুমার রবিদাসের (৪০)।
পিত্তথলির রোগে আক্রান্ত হয়ে রাজকুমার রবিদাস এক মাস হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। চিকিৎসকের পরামর্শ, সেরে উঠতে অস্ত্রোপচার করাতেই হবে। এ জন্য দরকার ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু পাঁচ মাস ধরে কাজ না থাকায় টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি।
প্রায় পাঁচ মাস ধরে ফুলতলা বাগানটি বন্ধ। ফলে শ্রমিকেরা কর্মহীন; মজুরি ও রেশন পাচ্ছেন না। গত রোববার কথা হয় রাজকুমার রবিদাসের সঙ্গে। আক্ষেপ নিয়ে তিনি বললেন, ‘ভালোই চলছিল বাগানটা। হঠাৎ করি কোম্পানি (বাগান পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান) মজুরি-রেশন বন্ধ করি দিল। তবুও কয়েক মাস কাজ করি গেলাম। পেট খালি রাখি আর কত চলে। পরে নিজেরাই কাম বন্ধ করি দিলাম। কেউ বাগানটা খুলে দেয় না। চোখের সামনে বাগানটা নষ্ট হচ্ছে দেখে কষ্ট লাগে।’
১৮৯৬ সালে স্থাপিত ফুলতলা চা-বাগানের অবস্থান মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নে। পাঁচ মাসের বেশি সময় বাগান বন্ধ থাকায় প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে গেছেন। এ পরিস্থিতিতে বাগানের শ্রমিকদের কেউ কেউ আশপাশের বিভিন্ন বাগানে গিয়ে স্বল্প মজুরিতে চায়ের কুঁড়ি তোলেন। পেশা বদলে কেউ কেউ বাইরে দিনমজুরের কাজ করছেন।
রোববার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, বাগানের কারখানা ও প্রশাসনিক কার্যালয়ে তালা ঝুলছে। শ্রমিকদের আনাগোনা নেই। তবে এখনো ভাঙাচোরা একটি কোয়ার্টারে আছেন বাগানটির প্রধান করণিক আবদুল ওয়াদুদ। বাগানটির গুরুত্বপূর্ণ নথি, যন্ত্রপাতি খোয়া যাওয়ার আশঙ্কায় তিনিসহ আরও দু-তিনজন কর্মচারী এখনো বাগানে আছেন।
ফুলতলা চা-বাগানের প্রশাসনিক কার্যালয়ে ঝুলছে তালা.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।