স্ত্রীকে ‘বাঁচানো’ সম্ভব নয় বুঝতে পেরে আত্মহত্যা করলেন স্বামীও স্বামী
Published: 26th, May 2025 GMT
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে এক ছেলে ও এক মেয়েকে রেখে আত্মহত্যা করেছেন স্বামী-স্ত্রী। রোববার রাতে উপজেলার লালপুর ইউনিয়নের কুড়েরপাড়ে এ ঘটনা ঘটে।
স্বজনেরা জানিয়েছেন, শুরুতে জরিনা বেগম (২৩) কেরির ট্যাবলেট (চালের পোকা দমনের ওষুধ) সেবন করেন। তাঁকে বাঁচানো সম্ভব নয় বুঝতে পেরে স্বামী আল আমিনও একই ওষুধ সেবন করেন।
আল আমিন (২৮) কুড়েরপাড়ের নান্নু মিয়ার ছেলে। তাঁর স্ত্রী জরিনা একই ইউনিয়নের নোয়াপাড়ার ইদ্রিস মিয়ার মেয়ে। আল আমিন পেশায় ইজিবাইক চালক।
জরিনার ভাই আনোয়ার হোসেনের ভাষ্য, সংসারে অভাব-অনটনের কারণে অনেকদিন ধরে তাঁর বোন ও ভগ্নিপতি মানসিক চাপে ছিলেন। আল আমিন ঋণের টাকায় কেনা ইজিবাইক চালাতেন। কিছুদিন আগে সেটি বিক্রি করে দিলে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। এর জের ধরে রোববার রাতে প্রথমে জরিনা বেগম কেরির ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে স্বামী আল আমিনও একই ট্যাবলেট সেবন করেন। প্রতিবেশীদের সহায়তায় স্বজনেরা রাত ১০টার দিকে তাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে যান। জরুরি বিভাগে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন জরিনা। রাত ১টার দিকে ওই হাসপাতালেই মারা যান আল আমিনও।
লালপুর ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো.
পুলিশ লাশ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যা হাসপাতালের মর্গে রাখে। সোমবার বিকেলে সেখানে পাওয়া যায় প্রতিবেশী দেলোয়ার আহমেদ আকাশকে। তাঁর ভাষ্য, এ দম্পতির মধ্যে আগে কখনও মনোমালিন্যের কথা শোনেননি। আল আমিনের বাবা অন্য এলাকা থেকে জমি কিনে এখানে বসবাস শুরু করেন। তিনি শুনেছেন, আল আমিন টুকটাক মাদক সেবন করতেন, সঙ্গও তেমন ভালো ছিল না। তাঁর মা সামসুন্নাহারও আলাদা থাকেন। তিনি (মা) দেড় শতক জমি বিক্রির টাকায় ছেলেকে অটোরিকশা কিনে দিয়েছিলেন।
দেলোয়ার আহমেদের ভাষ্য, ব্যক্তিগত ঋণ পরিশোধের জন্য অটোরিকশাটি আল আমিন বিক্রি করে দেন। এ নিয়ে মা ও স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর মনোমালিন্য দেখা দেয়। বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে স্ত্রী জরিনা কীটনাশক সেবন করেন। বিষয়টি টের পেয়ে আল আমিন তাঁর কাছ থেকে ট্যাবলেট কেড়ে নেন।
প্রতিবেশীরা শুরুতে জরিনাকে হাসপাতালে নিয়ে যান জানিয়ে দেলোয়ার বলেন, স্ত্রীর মৃত্যুর বিষয়টি আঁচ করেই হয়তো আল আমিন ভয়ে স্ত্রীর কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া কীটনাশক সেবন করেন। পরে রাতেই হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। আল আমিনের ঋণের বিষয়টি মা-স্ত্রী টের পেলেও পরিমাণ কতো কেউই জানতেন না।
আশুগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন সোমবার বিকেলে বলেন, মরদেহ দুটি সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। ময়নাতদন্ত ও আইনগত ব্যবস্থার প্রক্রিয়া চলছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য় ট য বল ট ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।