গাজায় শিশুরা ক্ষুধায় মরছে, আমরা কী করছি
Published: 26th, May 2025 GMT
গত কয়েক মাসে আমি আমার ফোনে এমন কিছু ছবি ও ভিডিও দেখেছি, যা ভুলে যাওয়া কঠিন। সেখানে ছিল মৃত শিশু, আহত শিশু, অনাহারে কাতরানো নবজাতক। কেউ কেউ যন্ত্রণায় কাঁদছিল, কেউ ভয় ও আতঙ্কে চুপচাপ বসে ছিল। কারণ, তারা মা-বাবা বা ভাইবোনকে হারিয়েছিল। এক ছোট ছেলেকে দেখেছি, বিমান হামলার পর ভয়ে পুরো শরীর কাঁপছিল। এই দৃশ্যগুলো এতটাই ভয়াবহ যে আমার অন্তর ক্ষতবিক্ষত হয়ে ওঠে।
অনেক সময় এসব ছবি আমি স্কিপ করে দিই। কারণ, ভীত হই সামনে আরও কী দেখা যাবে। কিন্তু অনেক সময় মনে হয়, এগুলো দেখাই আমার দায়িত্ব। আমি যেন এসব অন্যায়ের সাক্ষী না হয়ে থাকতে পারি না।
আরও পড়ুনইসরায়েল এখনো বুঝতে পারছে না, তারা যুদ্ধে হেরে গেছে১৯ মে ২০২৫আমরা যারা নিরাপদে–আরামে আছি, অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গাজার শিশুদের দুঃখজনক অবস্থা দেখি। আর পাশেই চোখে পড়ে হাসিখুশি মানুষের ছবি, মজার মিম। তখন গাজার শিশুরা আরও বেশি বাস্তব হয়ে ওঠে। কারণ, তারা হতে পারত আমাদের সন্তানের মতোই, যদি জন্ম হতো অন্য কোনো জায়গায়।
অনেক মানুষ চেষ্টা করছেন কিছু করার—কেউ রাজনৈতিক নেতাদের চিঠি লেখেন, কেউ দান করেন, কেউ প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন, তবু গাজার শিশুদের ওপর যুদ্ধ থামছে না। আমরা অসহায় বোধ করি। প্রতিদিন নতুন খবর আসে, অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, ১৪ হাজার নবজাতক মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে। এটি কোনো সাধারণ খাদ্যসংকট নয়, বরং ইচ্ছাকৃত—যেমন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে শত্রুকে দুর্বল করতে। এটা যেন গণহত্যার একটা পদ্ধতি।
যখন আমরা এত ভয়াবহ ঘটনা দেখি, কিন্তু কিছুই করতে পারি না, তখন আমাদের মনে নৈতিক আঘাত বা মোরাল ইনজুরি তৈরি হয়। এটার মানে হলো, আমাদের মূল্যবোধ ও আদর্শের সঙ্গে বাস্তবতার সাংঘর্ষিক অবস্থায় আমরা মানসিক যন্ত্রণা অনুভব করি।
গাজার চিকিৎসক ও সাহায্যকর্মীরা সবচেয়ে বেশি এই মানসিক যন্ত্রণা অনুভব করছেন। তাঁরা চেষ্টা করছেন মানুষকে বাঁচাতে, কিন্তু প্রয়োজনীয় ওষুধ, খাবার ও যন্ত্রপাতির অভাবে ব্যর্থ হচ্ছেন।শব্দটি আমি প্রথম শুনেছিলাম কোভিডের সময়, যখন ডাক্তার-নার্সরা বলেছিলেন, তাঁরা রোগীদের বাঁচাতে পারছেন না প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না থাকার কারণে। তাঁদের মনে অপরাধবোধ আর দুঃখ জমে যায়।
এখন এই একই অনুভূতি আমাদের অনেকের মধ্যেই জেগে উঠছে—বিশেষ করে যখন দেখি গাজার শিশুরা ধ্বংসস্তূপের নিচে কাঁদছে, আর আমরা কিছুই করতে পারছি না। এটা শুধু মানবিক দুর্দশা নয়, সমাজের জন্যও এক বড় ধাক্কা। যদি আমরা এসব দেখে নীরব থাকি, তাহলে তা আমাদের ভেতরে ধ্বংস ডেকে আনে।
গাজার চিকিৎসক ও সাহায্যকর্মীরা সবচেয়ে বেশি এই মানসিক যন্ত্রণা অনুভব করছেন। তাঁরা চেষ্টা করছেন মানুষকে বাঁচাতে, কিন্তু প্রয়োজনীয় ওষুধ, খাবার ও যন্ত্রপাতির অভাবে ব্যর্থ হচ্ছেন।
কাঁদতে থাকা মাকে সাহায্য করতে না পারা, আহত শিশুকে সঠিক চিকিৎসা না দিতে পারা—এই ব্যর্থতা তাঁদের মনের গভীরে ক্ষত তৈরি করে। গাজার মা–বাবার জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর কষ্ট হলো নিজের সন্তানকে ক্ষুধায় কাঁদতে দেখে কিছু করতে না পারা।
এই অসহায়তা আমাদের মন ও মূল্যবোধে একটি ভারী বোঝা নিয়ে আসে, যেটা আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারি না। এত বড় অন্যায়ের সাক্ষী হয়ে কিছু করতে না পারার যন্ত্রণা আমাদের সমাজে কী প্রভাব ফেলবে? হয়তো এটি আমাদের অনুভূতির জায়গাকে ভেঙে দিচ্ছে।
আমার মা আমার জন্মের পর খবর দেখা বন্ধ করেছিলেন। কারণ, তিনি এসব সহ্য করতে পারতেন না। আমি এখন মা হওয়ার পর অনেক সময় ভাবি, আমার সন্তানকে এই ভয়ানক পৃথিবীর বাইরে রাখাই ভালো। কিন্তু ইন্টারনেটের যুগে খবর আমাদের চোখের সামনে; দূরে থাকা যায় না।
রাতের অন্ধকারে আমি আমার ছেলেকে ঘুম পাড়াই, ভরা পেটে আরামদায়ক পায়জামায়। চুপচাপ কেঁদে যাই সেই শিশুদের কথা ভেবে, যাদের কেউ আদর করে শুইয়েও দিচ্ছে না। আমার ছেলে দুধ খেতে ওঠে, আমি দুধ গ্লাসে ঢালি। চারপাশে পাখির ডাক—বোমার শব্দ নয়।
আমার ছেলের নিরাপত্তা আর গাজার শিশুর ভয়াবহ অবস্থা আমাকে অন্যায় ও অশ্লীল মনে হয়। এটি কি একধরনের মানসিক আঘাত নয়? যখন আপনি ছোট শিশুর সঙ্গে সময় কাটান, তাদের সরলতা দেখে, আর অন্য কোনো শিশুর ওপর নির্যাতন দেখলে মনে হয়, এটি মানবতার বিরুদ্ধে অপমান।
আমার ছেলের নিরাপত্তা আর গাজার শিশুর ভয়াবহ অবস্থা আমাকে অন্যায় ও অশ্লীল মনে হয়। এটি কি একধরনের মানসিক আঘাত নয়? যখন আপনি ছোট শিশুর সঙ্গে সময় কাটান, তাদের সরলতা দেখে আর অন্য কোনো শিশুর ওপর নির্যাতন দেখলে মনে হয়, এটি মানবতার বিরুদ্ধে অপমান।
শুধু মা-বাবাই নয়, যেকোনো ভালোবাসাপূর্ণ মানুষ এসব দেখে দুঃখ পায়। শিশুদের রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব, যা দেশের সীমানার বাইরে যায়।
কিন্তু এত বড় অন্যায় দেখে কিছুই করতে না পারার যন্ত্রণা আমাদের বিশ্বাসে ফাটল ধরায়। আমরা ভাবতে শুরু করি—এই দুনিয়ায় ন্যায়ের জায়গা আছে তো?
● রিয়ানন লুসি কসলেট দ্য গার্ডিয়ান-এর একজন কলাম লেখক
দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া ইংরেজির সংক্ষেপিত অনুবাদ
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম র ছ ল দ র মন আম দ র অন য য় অবস থ করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
পশুর হাটে চাঁদাবাজির অভিযোগে বিএনপি ও বৈষম্যবিরোধীর দুই নেতা গ্রেপ্তার
চাঁদাবাজির অভিযোগে কুড়িগ্রামের যাত্রাপুর পশুর হাটের ‘বৈধ’ ইজারাদার মাহাবুব রহমান ও তাঁর সহযোগী মো. আলমগীর গ্রেপ্তার হয়েছেন। গত মঙ্গলবার রসিদ ছাড়া চাঁদা তোলার সময় যৌথ বাহিনীর হাতে তারা আটক হন। গতকাল বুধবার সকালে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হলে পুলিশ গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়। সেখানে বৈধতার কাগজপত্র দেখালে শুনানি শেষে বিচারক জামিন মঞ্জুর করেন।
গ্রেপ্তার মাহাবুব রহমান কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও বেলগাছা ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান। মো. আলমগীর কুড়িগ্রাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক। গত মঙ্গলবার তাদের বিরুদ্ধে যাত্রাপুর গরুর হাটে রসিদ ছাড়া চাঁদা তোলার অভিযোগ ওঠে। পরে ফেনী জেলার মহিষ ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন আজাদ হাটে টহলরত যৌথ বাহিনীর কাছে অভিযোগ করলে তাদের আটক করা হয়। আলমগীর পুরো ঘটনাকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলে মন্তব্য করেছেন।
এজাহারে বলা হয়, ফেনীর ছাগলনাইয়ার মহিষ ব্যবসায়ী আনোয়ার মঙ্গলবার যাত্রাপুর হাট থেকে ১৭টি মহিষ কেনেন। পরে অভিযুক্তরা তাঁকে (আনোয়ার) গরু-মহিষ বিক্রির রসিদ শেডঘরে নিয়ে যান এবং প্রত্যেক মহিষের জন্য ৫০০ টাকা করে ৮ হাজার ৫০০ টাকা চাঁদা আদায় করেন। এ সময় আনোয়ার তাদের কাছে রসিদ চাইলে তারা তা দেখাতে পারেননি। আনোয়ার বিষয়টি যৌথ বাহিনীকে জানালে এ দু’জনকে আটক করা হয়।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুড়িগ্রাম জেলা কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল আজিজ নাহিদ বলেন, ‘মাহাবুব রহমান ওই হাটের ইজারাদার। তিনি চাঁদাবাজ নন। আমার সঙ্গে মাহাবুব রহমানের কথা হয়েছে। তারা কাগজ প্রদর্শনের সময় পাননি। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের আটক করে যৌথ বাহিনী। সকালে কাগজপত্র দেখালে তাদের জামিন হয়।’
কুড়িগ্রাম সদর থানার ওসি মো. হাবিবুল্লাহ জানান, মাহাবুব রহমান যাত্রাপুর হাটের বৈধ ইজারা মালিক। তবে ওই সময়ে তাঁর কাছে কাগজপত্র না থাকায় চাঁদাবাজির অভিযোগে আটক করা হয়। সকালে থানায় চাঁদাবাজির মামলা করেন ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন। ওই মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
অভিযুক্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মো. আলমগীর বলেন, দুপুরে যথাযথ কাগজ আদালতে দাখিল করে জামিনে মুক্ত হয়েছি। এটি সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্র ছিল।