কোরবানির ঈদের জন্য পালন করা বড় আকারের গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কিশোরগঞ্জের খামারিরা। গত ঈদের আগে ‘ছাগল-কাণ্ড’ ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর নতুন করে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হচ্ছে তাদের। যারা এসব গরু কিনতেন, তাদের বেশির ভাগই আত্মগোপনে। সম্পদশালী অন্য ব্যক্তিরাও ঝুটঝামেলা এড়াতে দামি পশু কিনতে ইতস্তত বোধ করছেন। কয়েকদিনের অভিজ্ঞতা থেকে এমনই তথ্য জানিয়েছেন জেলার কয়েকজন খামারি। যদিও মধ্যম আকারের গরু নিয়ে স্বস্তিতে আছেন তারা।  
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, কিশোরগঞ্জের ৫৪২টি খামারে এবার কোরবানির পশু লালন করা হয়েছে ২ লাখ ১৩ হাজার ৬১৯টি। জেলায় চাহিদা আছে ১ লাখ ৮০ হাজার ৩৬১টি পশুর। উদ্বৃত্ত থাকবে ৩২ হাজার ৪৫৮টি পশু। 
কয়েকজন খামারির ভাষ্য, গত বছর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তৎকালীন সদস্য মতিউর রহমানের ‘ছাগল কাণ্ড’ আলোচনায় এসেছিল। ১৫ লাখ টাকায় কেনা তাঁর ছাগলের ছবি প্রচার করেন ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত। তা নিয়ে কেলেঙ্কারির ঘটনাটি ধনাঢ্য ব্যক্তিদের মধ্যে এক রকম আতঙ্ক তৈরি করেছে।
কিশোরগঞ্জ শহরতলির বয়লা এলাকার সানজিদ এগ্রো ফার্ম প্রতিবছরই বড় বড় গরু লালন করে। ২০১৭ সাল থেকে এই খামার শুরু হয় জানিয়ে মালিক সানজিদ হাসান বলেন, গত বছর তিনি ৩৫টি গরু লালন করেছিলেন। এর সবগুলোই বিক্রি হয়। নানা বিষয় বিবেচনা নিয়ে এবার কমিয়ে ২০টি গরু লালন করছেন। শাহিওয়াল, ফ্রিজিয়ানসহ বিভিন্ন জাতের গরুর দাম দেড় লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকার মধ্যে। 
এই খামারে চারটি বড় গরু আছে। এগুলোর মধ্যে ১৪শ কেজি ওজনের গরুটির নাম ‘বাদশা’। দাম হাঁকছেন ১৫ লাখ টাকা। ‘রাজা’ নামের ১৩শ কেজি ওজনের গরুটির দাম ১২ লাখ টাকা হাঁকছেন সানজিদ। এ ছাড়া ‘বাহাদুর’ নামে ৯০০ কেজি ওজনের গরুর জন্য সাড়ে ৭ লাখ টাকা এবং ‘সুলতান’ নামে ৭৫০ কেজি ওজনের গরুর দাম হাঁকছেন সাড়ে ৫ লাখ টাকা। বাড়ির অদূরে অবস্থিত শোলাকিয়ার গরুর হাটেই ৩ জুন এগুলো তুলবেন বলে জানালেন। 
সানজিদ হাসান বলেন, গত বছর ঈদের ১০ দিন আগে তিনটি গরু বিক্রি করেছিলেন। এবার এখনও কোনো গরু বিক্রি হয়নি। তিনি মনে করেন, তাঁর গরুগুলো আকারে বড় হওয়ায় লালন-পালনে সমস্যা হয়। তাই বেশি আগে কেউ নিতে চান না।
তবে মাঝারি গরুর খামারিরা কিছুটা স্বস্তিতে আছেন। জেলার করিমগঞ্জের নিয়ামতপুরে বড় খামার রয়েছে ব্যবসায়ী এরশাদ উদ্দিনের। গত বছর তিনি ১৫০টি গরু লালন করেছিলেন। এবার করেছেন ১০০টি। এগুলোর দাম এক লাখ থেকে চার লাখ টাকার মধ্যে। 
এরশাদ উদ্দিনের ভাষ্য, গতবার ঈদের ১০ দিন আগেই তিনি ১৫০টি গরু বিক্রি করেছিলেন। গতকাল সোমবার পর্যন্ত এবারের পালন করা ১০০টি গরুর মধ্যে ৮০টি বিক্রি করেছেন। দাম কিছুটা কম হওয়ায় আগেই বিক্রি হচ্ছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.

সুভাষ চন্দ্র পণ্ডিত বলেন, জেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী ৬৩টি পশুর হাট রয়েছে। এসব হাটে তাদের ৪০টি মেডিকেল টিম কাজ করবে। কেউ যেন  ক্ষতিকর স্টেরয়েড বা কৃত্রিম মোটাতাজাকরণের ওষুধ ব্যবহার না করতে পারেন, সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গর কর ছ ল ন গত বছর

এছাড়াও পড়ুন:

বড় গরু নিয়ে দুশ্চিন্তা খামারির ছোট-মাঝারিতে স্বস্তি

কোরবানির ঈদের জন্য পালন করা বড় আকারের গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কিশোরগঞ্জের খামারিরা। গত ঈদের আগে ‘ছাগল-কাণ্ড’ ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর নতুন করে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হচ্ছে তাদের। যারা এসব গরু কিনতেন, তাদের বেশির ভাগই আত্মগোপনে। সম্পদশালী অন্য ব্যক্তিরাও ঝুটঝামেলা এড়াতে দামি পশু কিনতে ইতস্তত বোধ করছেন। কয়েকদিনের অভিজ্ঞতা থেকে এমনই তথ্য জানিয়েছেন জেলার কয়েকজন খামারি। যদিও মধ্যম আকারের গরু নিয়ে স্বস্তিতে আছেন তারা।  
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, কিশোরগঞ্জের ৫৪২টি খামারে এবার কোরবানির পশু লালন করা হয়েছে ২ লাখ ১৩ হাজার ৬১৯টি। জেলায় চাহিদা আছে ১ লাখ ৮০ হাজার ৩৬১টি পশুর। উদ্বৃত্ত থাকবে ৩২ হাজার ৪৫৮টি পশু। 
কয়েকজন খামারির ভাষ্য, গত বছর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তৎকালীন সদস্য মতিউর রহমানের ‘ছাগল কাণ্ড’ আলোচনায় এসেছিল। ১৫ লাখ টাকায় কেনা তাঁর ছাগলের ছবি প্রচার করেন ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত। তা নিয়ে কেলেঙ্কারির ঘটনাটি ধনাঢ্য ব্যক্তিদের মধ্যে এক রকম আতঙ্ক তৈরি করেছে।
কিশোরগঞ্জ শহরতলির বয়লা এলাকার সানজিদ এগ্রো ফার্ম প্রতিবছরই বড় বড় গরু লালন করে। ২০১৭ সাল থেকে এই খামার শুরু হয় জানিয়ে মালিক সানজিদ হাসান বলেন, গত বছর তিনি ৩৫টি গরু লালন করেছিলেন। এর সবগুলোই বিক্রি হয়। নানা বিষয় বিবেচনা নিয়ে এবার কমিয়ে ২০টি গরু লালন করছেন। শাহিওয়াল, ফ্রিজিয়ানসহ বিভিন্ন জাতের গরুর দাম দেড় লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকার মধ্যে। 
এই খামারে চারটি বড় গরু আছে। এগুলোর মধ্যে ১৪শ কেজি ওজনের গরুটির নাম ‘বাদশা’। দাম হাঁকছেন ১৫ লাখ টাকা। ‘রাজা’ নামের ১৩শ কেজি ওজনের গরুটির দাম ১২ লাখ টাকা হাঁকছেন সানজিদ। এ ছাড়া ‘বাহাদুর’ নামে ৯০০ কেজি ওজনের গরুর জন্য সাড়ে ৭ লাখ টাকা এবং ‘সুলতান’ নামে ৭৫০ কেজি ওজনের গরুর দাম হাঁকছেন সাড়ে ৫ লাখ টাকা। বাড়ির অদূরে অবস্থিত শোলাকিয়ার গরুর হাটেই ৩ জুন এগুলো তুলবেন বলে জানালেন। 
সানজিদ হাসান বলেন, গত বছর ঈদের ১০ দিন আগে তিনটি গরু বিক্রি করেছিলেন। এবার এখনও কোনো গরু বিক্রি হয়নি। তিনি মনে করেন, তাঁর গরুগুলো আকারে বড় হওয়ায় লালন-পালনে সমস্যা হয়। তাই বেশি আগে কেউ নিতে চান না।
তবে মাঝারি গরুর খামারিরা কিছুটা স্বস্তিতে আছেন। জেলার করিমগঞ্জের নিয়ামতপুরে বড় খামার রয়েছে ব্যবসায়ী এরশাদ উদ্দিনের। গত বছর তিনি ১৫০টি গরু লালন করেছিলেন। এবার করেছেন ১০০টি। এগুলোর দাম এক লাখ থেকে চার লাখ টাকার মধ্যে। 
এরশাদ উদ্দিনের ভাষ্য, গতবার ঈদের ১০ দিন আগেই তিনি ১৫০টি গরু বিক্রি করেছিলেন। গতকাল সোমবার পর্যন্ত এবারের পালন করা ১০০টি গরুর মধ্যে ৮০টি বিক্রি করেছেন। দাম কিছুটা কম হওয়ায় আগেই বিক্রি হচ্ছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুভাষ চন্দ্র পণ্ডিত বলেন, জেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী ৬৩টি পশুর হাট রয়েছে। এসব হাটে তাদের ৪০টি মেডিকেল টিম কাজ করবে। কেউ যেন  ক্ষতিকর স্টেরয়েড বা কৃত্রিম মোটাতাজাকরণের ওষুধ ব্যবহার না করতে পারেন, সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ