রাজধানীর বাড্ডায় জনসমক্ষে গুলশান থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুল আহসান সাধনের কিলিং মিশনে অংশ নেয় চারজন। তাঁর ওপর গুলি চালায় দু’জন শুটার। তাদের শনাক্ত করেছে পুলিশ। তবে কেন, কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড তা নিশ্চিত হওয়া না গেলেও স্থানীয়রা বলছেন, বাড্ডা সন্ত্রাসকবলিত এলাকা। চাঁদাবাজি ও আধিপত্য নিয়ে মাঝেমধ্যেই লাশ পড়ে সেখানে। এ ছাড়া ‘আন্ডারওয়ার্ল্ডের’ দুটি গ্রুপের বিরোধ রয়েছে। একদিকে ডালিম, রবিন ও মাহাবুব গ্রুপ এবং অন্যদিকে মেহেদী হাসান কলিংস গ্রুপ। মেহেদী যুক্তরাষ্ট্র থেকে এবং তাঁর প্রতিপক্ষ তিনজন মালয়েশিয়া থেকে বাড্ডা এলাকার অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করেন। 

একটি সূত্র জানিয়েছে, ডালিম, রবিন ও মাহবুব গ্রুপের সঙ্গে নিহত সাধনের ঘনিষ্ঠতা ছিল। মধ্যবাড্ডা এলাকায় বিএনপি নেতা যে ইন্টারনেট ব্যবসা করতেন, তার পেছনের শক্তি হিসেবে থাকতে পারে রবিন গ্রুপ। এই গ্রুপের সঙ্গে মেহেদী গ্রুপের বিরোধ দীর্ঘদিনের। হত্যাকাণ্ডের পেছনে আধিপত্য কিংবা রাজনৈতিক কোনো যোগসূত্র আছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অন্য কোনো কারণে এই হত্যাকাণ্ড কিনা সেটিও দেখা হচ্ছে।

অবশ্য পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মার্কেটে দোকান বরাদ্দ, বাড্ডা এলাকায় কেবল টিভি সংযোগ, ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবসা ও চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে স্থানীয় দুটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বের জেরেই এ হত্যাকাণ্ড। গুলি করেছে বাড্ডার সন্ত্রাসী গোষ্ঠী মেহেদী গ্রুপের অনুসারীরা। গত বৃহস্পতিবারও আরেকবার হত্যা মিশনে নামে তারা। ২১ মার্চ গুলশানে পুলিশ প্লাজার সামনে সুমন মিয়া ওরফে টেলি সুমন (৩৩) নামে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ওই হত্যার প্রতিশোধ নিতেই সাধনকে হত্যা করা হয়েছে কিনা– তদন্ত করছে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে এ ব্যাপারে কিছু ক্লু পাওয়া গেছে। কিলিং মিশনে সরাসরি চারজনের অংশ নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। তবে সাধনকে গুলি করেছে দু’জন। বাকি দু’জন অদূরে অবস্থান করছিল। এই চারজন ছাড়াও ঘটনাস্থল ও আশপাশে তাদের আর কোনো সহযোগী ছিল কিনা সেটিও দেখা হচ্ছে। 

পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া দু’জনের বাড্ডা এলাকার আওয়ামী লীগের সাবেক একজন এমপির সঙ্গে ছবি রয়েছে বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। তবে এ ব্যাপারে কোনো তথ্যপ্রমাণ সমকাল পায়নি। ওই দু’জনের সঙ্গে রাজনৈতিক কোনো যোগসূত্র আছে কিনা তা অনুসন্ধান চালাচ্ছে তদন্তসংশ্লিষ্টরা।

রোববার রাতে মধ্যবাড্ডার গুদারাঘাটের চার নম্বর সড়কে সাধনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। গতকাল সোমবার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে তাঁর লাশ ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে নেওয়া হয় মধ্যবাড্ডায়। 

সাধনের স্ত্রীর বড় ভাই সাখাওয়াত হোসেন সরকার রাতে জানান, উত্তরা কামারপাড়া কবরস্থানে ভগ্নিপতির মরদেহ দাফন করা হয়েছে।

বাড্ডা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, নিহত সাধন বুক, পিঠে ও গলায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এতে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে সোমবার বাড্ডা থানায় হত্যা মামলা করেছেন তাঁর স্ত্রী দিলরুবা আক্তার। 

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপকমিশনার তারেক মাহমুদ সমকালকে বলেন, যে দু’জন গুলি চালিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। 

চেয়ারে বসার ৫-৬ মিনিট পরই গুলি
সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, রাস্তার একপাশে চারটি প্লাস্টিকের চেয়ারে সাধনসহ চারজন বসে আছেন। জনাকীর্ণ এলাকা, দোকানপাট খোলা এবং লোকজন চলাচল করছে। রোববার রাত ১০টা ৬ মিনিটে দুই যুবক লেকপাড়ের দিক থেকে হেঁটে আসেন। তাদের একজন সাধনকে লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকে। সাধন সঙ্গে সঙ্গে চেয়ার থেকে রাস্তায় পড়ে যান। যুবকের সঙ্গে থাকা অপর যুবকও সাধনকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। গুলি করার পর ধীরেসুস্থে একটি গলি দিয়ে পালিয়ে যায় তারা। কেউ তাদের বাধা দিতেও এগিয়ে আসেনি। এক যুবকের গায়ে সাদা গোল গলা গেঞ্জি এবং অপর যুবকের গায়ে শার্ট। তাদের বয়স ২২ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে হতে পারে। বিএনপি নেতার সঙ্গে বসে থাকা তিন বন্ধু তাঁকে উদ্ধার না করে ঘটনাস্থল থেকে চলে যান। কিছুক্ষণ পর লোকজন এসে তাঁকে উদ্ধার করে।

সোমবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, সাধনের সঙ্গে বসে থাকা তিনজন তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং ব্যবসায়িক অংশীদার। তারা হলেন– কামরুল ইসলাম, আবুল হোসেন ও জাকির হোসেন রূপক। 

প্রত্যক্ষদর্শী কামরুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় সমকালের। তিনি বলেন, সাধনসহ যে চারজন আমরা বসেছিলাম, সবাই বাল্যবন্ধু। কিছুদিন আগে এই চারজনসহ ১০ জন মিলে ডেভেলপার কোম্পানি খুলেছি। তবে এখনও কার্যক্রম শুরু হয়নি। প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। প্রায় প্রতি রাতেই আমরা চার নম্বর সড়কে বসে আড্ডা দিই। রোববার রাতে বসার আনুমানিক ৫-৬ মিনিট পরই দু’জন এসে হঠাৎ সাধনকে গুলি করে। গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যায় তারা।
ঘটনাস্থলের পাশের মুদি দোকানি মো.

হানিফ জানান, ঘটনার সময় তাঁর দোকানে ৩-৪ জন ক্রেতা ছিলেন। হঠাৎ পরপর শব্দ শুনতে পান তিনি। এ সময় অস্ত্র হাতে দু’জনকে তার দোকানের সামনে দিয়ে পালাতে দেখেন।  

ফোন করে বাসা থেকে ডাকা হয় সাধনকে
নিহতের স্ত্রী দিলরুবা আক্তার জানান, রোববার সকাল ১০টায় বাসা থেকে বের হন সাধন। দুপুরে বাসায় খেতে আসার কথা থাকলেও আসতে পারেননি। তবে সাধন তাঁকে ফোন করে বাসায় আসতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। বিকেলে তাদের এক আত্মীয় বাসায় আসেন এবং সাধনের সঙ্গে দেখা করার কথা বলেন। এ সময় দিলরুবা স্বামীকে ফোন করে বাসায় আসতে বলেন। 

রাত পৌনে ১০টায় সাধন যখন বাসায় প্রবেশ করেন, তখন তাঁর স্ত্রী নামাজ আদায় করছিলেন। নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন স্বামীকে। তখন সাধনের ফোনের রিংটোন বেজে ওঠে। তখন ফোন রিসিভ করলে অপর প্রান্ত থেকে একজন বাসার অদূরে কানা মিলনের দোকানের কাছে যেতে বলে। এর পরই তিনি বাসা থেকে বের হয়ে যান। বাসা থেকে যাওয়ার ২০-২৫ মিনিট পর গুলির ঘটনা জানতে পারেন দিলরুবা।

২০১৮ সাল থেকে মধ্য বাড্ডা এলাকায় ইন্টারনেটের ব্যবসা করতেন সাধন। এ ছাড়া মাস দুয়েক আগে বন্ধুদের সঙ্গে ডেভেলপার ব্যবসা খোলেন। এর আগে ২০০৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত গুলশান-১ নম্বরে রেস্টুরেন্টের ব্যবসা করেছেন তিনি। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গুলশান সিটি করপোরেশন মার্কেটে একটি দোকানঘর বরাদ্দ পান তিনি। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হত য ক ণ ড র বব র চ রজন স ধনক তদন ত ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাবিতে সপ্তাহব্যাপী শিল্পকর্ম প্রদর্শনী শুরু

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভাস্কর্য বিভাগের উদ্যোগে চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে সপ্তাহব্যাপী ‘বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী’ শুরু হয়েছে।

রবিবার (২ নভেম্বর) চারুকলা অনুষদের ওসমান জামাল মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ঢাবি কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। 

আরো পড়ুন:

জাবি অধ্যাপককে হুমকি গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থি: ইউট্যাব

ঢাবি উপ-উপাচার্যের সঙ্গে ইইউ রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ

ভাস্কর্য বিভাগের চেয়ারম্যান নাসিমুল খবিরের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন, চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আজহারুল ইসলাম শেখ, শিল্পাচার্য তনয় প্রকৌশলী ময়নুল আবেদিন, ভাস্কর্য বিভাগের অধ্যাপক লালা রুখ সেলিম এবং শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর আহ্বায়ক ড. নাসিমা হক মিতু।

কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী পুরস্কারপ্রাপ্তদের আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “শিল্পের কোন সীমা নেই। এর একটি শাশ্বত ভাষা রয়েছে। এই শৈল্পিক ভাষা ও শিল্পকর্মের মাধ্যমে শিল্পীরা মানুষের মনে স্থান করে নেন।”

শিক্ষার্থীদের ১ বছরের শ্রেণির কাজ থেকে বাছাইকৃত শিল্পকর্ম নিয়ে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। প্রদর্শনীটি প্রয়াত ভাস্কর অধ্যাপক হামিদুজ্জামান খান স্মরণে উৎসর্গ করা হয়েছে। এতে ৪৩ জন শিল্পীর ৭১টি শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে। শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্মের জন্য ছয়জন শিল্পীকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। তাদের সনদ ও পুরস্কার প্রদান করেন। পরে তিনি সেরা শিল্পকর্মের জন্য ছয়জনকে সনদ ও পুরস্কার প্রদান করেন প্রধান অতিথি।

পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পীরা হলেন- প্রত্যয় সাহা (শিল্পী আনোয়ার জাহান স্মৃতি পুরস্কার), চিন্ময় ঘোষ (অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক স্মৃতি পুরস্কার), অলি মিয়া (ভাস্কর নভেরা আহমেদ স্মৃতি পুরস্কার), মৃধা মো. রাইয়ান আযীম (অধ্যাপক হামিদুজ্জামান খান স্মৃতি পুরস্কার), সুমিত রায় (মাধ্যম শ্রেষ্ঠ পুরস্কার) এবং সুপ্রিয় কুমার ঘোষ (নিরীক্ষামূলক শ্রেষ্ঠ পুরস্কার)।

আগামী ৮ নভেম্বর পর্যন্ত এ শিল্পকর্ম প্রদর্শনী চলবে । প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ