আয়ারল্যান্ডে বাংলাদেশি চিকিৎসক ও নার্সদের ক্যারিয়ার পড়ার পরীক্ষা তিনটি
Published: 27th, May 2025 GMT
উত্তর-পশ্চিম ইউরোপে দ্বীপদেশ আয়ারল্যান্ড কেলটিক সংস্কৃতি, অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও উন্নত অর্থনীতির জন্য পরিচিত। সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য আয়ারল্যান্ড অর্থনৈতিকভাবে বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ দেশ। তথ্যপ্রযুক্তি, ফার্মাসিউটিক্যাল, আর্থিক পরিষেবা, কৃষি ও পর্যটন দেশটির প্রধান খাত। গুগল, অ্যাপল, ফেসবুকসহ অনেক আন্তর্জাতিক কোম্পানির ইউরোপীয় সদর দপ্তর এখানে। দেশটিতে দুগ্ধ ও গবাদিপশু খাতও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির কারণে ইউরোপের অন্যতম ধনী দেশ হিসেবে পরিচিত।
আয়ারল্যান্ডের স্বাস্থ্য খাত বর্তমানে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল, বিশেষ করে চিকিৎসক ও নার্সের সংকট মোকাবিলার জন্য। চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে ২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী, আয়ারল্যান্ডে কর্মরত মোট চিকিৎসকদের প্রায় ৪০ শতাংশ বিদেশি, যা দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর তাদের নির্ভরশীলতার প্রমাণ। একই বছরের হিসাবে, নার্সদের ক্ষেত্রে আয়ারল্যান্ডের নার্সিং কর্মীদের প্রায় ৫১ দশমিক ৮ শতাংশ ছিলেন বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।
আরও পড়ুনআয়ারল্যান্ডে বাংলাদেশি প্রকৌশলীদের ক্যারিয়ারের সম্ভাবনা, যেভাবে মিলবে সুযোগ১২ মার্চ ২০২৫বাংলাদেশি চিকিৎসকদের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মেডিকেল ডিগ্রির স্বীকৃতি। আইরিশ মেডিকেল কাউন্সিল ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইন ও মিসরের মেডিকেল ডিগ্রির স্বীকৃতি দেয়, কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পাওয়া কঠিন।
আয়ারল্যান্ডে স্থানীয় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকায় ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, মিসর, সুদান ও নাইজেরিয়ার মতো দেশ থেকে হাজারো স্বাস্থ্যকর্মী এখানে কাজ করছেন। কিন্তু এর বিপরীতে বাংলাদেশি চিকিৎসকের সংখ্যা অনেক কম, আর নার্সদের সংখ্যা প্রায় নেই বললেই চলে। যেসব বাংলাদেশি চিকিৎসক এই দেশে কাজ করছেন, তাঁদের বেশির ভাগ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আসছেন। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে, কেন ভারত-পাকিস্তান কিংবা ফিলিপাইনের মতো দেশগুলোর স্বাস্থ্যকর্মীরা সহজেই আয়ারল্যান্ডের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে পারছেন অথচ বাংলাদেশিরা পিছিয়ে রয়েছেন? এর পেছনে বেশ কিছু কাঠামোগত ও প্রশাসনিক কারণ রয়েছে, যা বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশি স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো চাকরির সংযোগ বা স্পনসরশিপ পাওয়া। আয়ারল্যান্ডের হাসপাতালে সরাসরি আবেদন করতে হলে স্পনসরশিপ প্রয়োজন, যা বাংলাদেশিদের জন্য পাওয়া বেশ কঠিন।বাংলাদেশি চিকিৎসকদের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মেডিকেল ডিগ্রির স্বীকৃতি। আইরিশ মেডিকেল কাউন্সিল (IMC) ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইন ও মিসরের মেডিকেল ডিগ্রি সহজেই স্বীকৃতি দেয়, কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি পাওয়া কঠিন। যার ফলে বাংলাদেশের চিকিৎসকদের অতিরিক্ত পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। একইভাবে নার্সদের ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা যায়। আয়ারল্যান্ডের নার্সিং বোর্ড (NMBI) ফিলিপাইন, ভারত ও নাইজেরিয়ার নার্সদের স্বীকৃতি দেয়, কারণ এসব দেশের সঙ্গে তাদের আনুষ্ঠানিক চুক্তি রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে সেই ধরনের কোনো চুক্তি না থাকার ফলে বাংলাদেশি নার্সরা আবেদন করলে তাঁরা নানা জটিলতার সম্মুখীন হন।
আরও পড়ুনইতালিতে উচ্চশিক্ষা: স্কলারশিপ, খণ্ডকালীন চাকরিসহ আছে ‘১৫০ ওরে’র সুযোগ০৫ অক্টোবর ২০২৪বাংলাদেশি চিকিৎসকদের আয়ারল্যান্ডে কাজ করতে হলে সাধারণত তিনটি প্রধান ধাপে পরীক্ষা বা মূল্যায়ন করতে হয়। যেমন—
১.
২. প্রেস (PRES) পরীক্ষা: যদি ডিগ্রি স্বীকৃত না হয়, তাহলে PRES (Pre-Registration Examination System) পরীক্ষা দিতে হয়, যার মধ্যে লিখিত পরীক্ষা, ক্লিনিক্যাল স্কিলস পরীক্ষা ও সুপারভাইজড ইন্টার্নশিপ অন্তর্ভুক্ত থাকে।
৩. বিকল্প পথ: যদি কোনো ডাক্তার PLAB বা MRCP পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন, তাহলে তাঁরা PRES পরীক্ষা ছাড়াই IMC রেজিস্ট্রেশন পেতে পারেন। স্পেশালিস্ট হিসেবে কাজ করতে চাইলে CESR (Certificate of Eligibility for Specialist Registration) বা সমমানের যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। PRES পরীক্ষা পাস করলেও IMC রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার জন্য তাঁদের ভাষার দক্ষতার পরীক্ষা (IELTS বা OET) বাধ্যতামূলক।
আয়ারল্যান্ডে কাজ করার জন্য চিকিৎসক ও নার্সদের আইইএলটিএস বা ওইটি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা বাধ্যতামূলক। IELTS-এ অন্তত ৭.০ স্কোর ও OET-তে ‘বি’ গ্রেড প্রয়োজন। ভারতের মতো দেশগুলোর চিকিৎসকেরা ও নার্সরা ইংরেজিতে শিক্ষা গ্রহণের কারণে সহজেই এই পরীক্ষাগুলোয় উত্তীর্ণ হতে পারেন, কিন্তু বাংলাদেশের স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য এটি তুলনামূলক কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। যার ফলে এটি আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশি চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য। এ ছাড়া সরকারি পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক চুক্তির অভাবও আরেকটি বড় সমস্যা। ফিলিপাইন, ভারত, নাইজেরিয়া ও সুদানের সঙ্গে আয়ারল্যান্ডের স্বাস্থ্যকর্মী সরবরাহের আনুষ্ঠানিক চুক্তি থাকায় তাদের চিকিৎসক ও নার্সরা সহজেই অনুমোদন পান। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তেমন কোনো চুক্তি না থাকায় তাঁরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন।
প্রথম আলো ফাইল ছবিউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক ও ন র স স ব স থ যকর ম চ ক ৎসকদ র দ র জন য ফ ল প ইন কর ম দ র র জন য প ক জ কর পর ক ষ সহজ ই ইউর প
এছাড়াও পড়ুন:
হোমিও, ইউনানি, আয়ুর্বেদ চিকিৎসা স্বাস্থ্য খাত সংস্কার প্রতিবেদন সংশোধনের দাবি
স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ১ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ হোমিওপ্যাথি এবং শূন্য দশমিক ২ শতাংশ মানুষ আয়ুর্বেদিক ও ইউনানি চিকিৎসা নেন। তবে এ পরিসংখ্যান ঠিক নয় উল্লেখ করে প্রতিবেদন সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট খাতের চিকিৎসকরা। সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের একটি হোটেলে ‘স্বাস্থ্য খাত সংস্কার প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও প্রস্তাবনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে হোমিওপ্যাথিক, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা এ দাবি জানান।
বৈষম্যবিরোধী হোমিওপ্যাথিক, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক জাতীয় ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের রিপোর্টের কোথায় হোমিওপ্যাথি, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা ও চিকিৎসকদের সম্পর্কে কী ‘ভুল’ তথ্য ও পরিসংখ্যান রয়েছে, তা সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এর আগে বিভিন্ন জাতীয় জরিপ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২৮ শতাংশের বেশি মানুষ হোমিওপ্যাথি, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা নেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আয়োজক সংগঠনের প্রেসিডেন্ট মির্জা লুৎফর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার প্রতিবেদনে হোমিওপ্যাথিক, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকদের প্রতি চরম অবহেলা দেখানো হয়েছে, অবমাননা করা হয়েছে। আমরা এ প্রতিবেদনের সংশোধন চাই।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশে সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে নিবন্ধিত হোমিওপ্যাথি, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আছে ৬০৭টি। এসব প্রতিষ্ঠানের ওষুধের বাজার কমপক্ষে আড়াই হাজার কোটি টাকার। দেশে এই ধরনের চিকিৎসক আছেন প্রায় ৫০ হাজার। আয়োজকরা বলেন, বর্তমান সময়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘ট্র্যাডিশনাল মেডিসিন’ বা সনাতন চিকিৎসাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। চীন ও ভারতে এর বিশেষ কদর রয়েছে। বাংলাদেশেও এসব চিকিৎসা মূলত ট্র্যাডিশনাল মেডিসিনের আওতাভুক্ত। জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতেও একে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কাজী হাবিবুর রহমান বলেন, হোমিওপ্যাথিক, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা তো স্বীকৃত চিকিৎসক। তারা কোন পরিচয়ে চিকিৎসাসেবা দেবেন?