কেন পদত্যাগ করলেন ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি
Published: 28th, May 2025 GMT
দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন পদত্যাগ করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের কাছে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং পর্ষদ তা গ্রহণও করেছে। আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত তাঁর মেয়াদ ছিল, তখন তাঁর বয়স ৬৫ পূর্ণ হতো; কিন্তু তার আগে হঠাৎ করে কেন তিনি পদত্যাগ করলেন।
দীর্ঘ কর্মজীবনের শেষটা স্বাভাবিকভাবে হলো না দেশের শীর্ষ এই ব্যাংকারের। তিনি ব্যাংকটির এমডির পাশাপাশি দেশে ব্যাংকগুলোর এমডিদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ছিলেন। সে জন্য তিনি ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী বিষয়ে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন।
সেলিম আর এফ হোসেনের পদত্যাগের বিষয়ে সাবেক ও বর্তমান সময়ের পাঁচ এমডির সঙ্গে প্রথম আলোর কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা বলেন, সেলিম আর এফ হোসেন ব্র্যাক ব্যাংককে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। এ ছাড়া করপোরেট ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন সেবায় ব্র্যাক ব্যাংক শীর্ষে পৌঁছে গেছে। ফলে দেশের শীর্ষ মুনাফা অর্জনকারী ব্যাংক হিসেবে অধিষ্ঠিত হয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক। ব্র্যাক ব্যাংকে ওনার মতো একজন যোগ্য ও ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ব্যাংকারের কর্মজীবন স্বাভাবিকভাবে শেষ না হওয়াটা সত্যিই দুঃখজনক। কারণ, স্বাভাবিকভাবে কর্মজীবন শেষ হলে ব্যাংক খাতে তাঁর আরও অবদান রাখার সুযোগ হতো।
সেলিম আর এফ হোসেন ২০১৫ সালের নভেম্বরে এমডি হিসেবে ব্র্যাক ব্যাংকের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। এর আগের ছয় বছর তিনি আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি ফাইন্যান্সের এমডি ছিলেন। ব্র্যাক ব্যাংকে কয়েকবার মেয়াদ বৃদ্ধির পর আগামী বছরের মার্চ মাসে তাঁর চলে যাওয়ার কথা ছিল।
ব্র্যাক ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এক অনুষ্ঠানে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অবনতি ঘটে, যার প্রভাব পড়ে ব্র্যাক ব্যাংকের পরিচালনায়। ব্যাংকটির বিভিন্ন ফাইল আটকে রাখার পাশাপাশি পরিদর্শন কার্যক্রম জোরদার করতে শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ছাড়া এবিবির চেয়ারম্যান হওয়ার পরও ব্যাংক খাতের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁকে এড়িয়ে চলে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের একজন পরিচালকের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ হয়। আবার একজন পরিচালক ব্যাংকে নিয়মিত অফিস করেন, এ নিয়েও তিনি ক্ষুব্ধ ছিলেন। এর জের ধরেই গতকাল পদত্যাগ করেন সেলিম আর এফ হোসেন।
জানতে চাইলে সেলিম আর এফ হোসেন গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছি। পদত্যাগের কারণ সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত। আপাতত কোথাও যোগ দিচ্ছি না। ছুটি কাটাব।’
জানা গেছে, তিনি একমাত্র ছেলের বিশ্ববিদ্যালয় সমাপনী অনুষ্ঠান তথা সমাবর্তনে যোগ দিতে আজ বুধবার কানাডা যাবেন। এরপর কবে ফিরবেন, তা এখনো ঠিক করেননি বলে জানান।
ব্যাংকটির কর্মীদের উদ্দেশে গতকাল এক চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘সব ভালো জিনিসেরই শেষ আছে এবং ব্র্যাক ব্যাংকে আমার সময়ের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। আমি চেয়ারম্যান ও পরিচালনা পর্ষদের কাছে আমার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। স্বাভাবিকভাবেই কিছু সাংগঠনিক এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে। তবে আমি ধরে নিচ্ছি, এগুলো কোনো সমস্যা হবে না এবং আজই ব্যাংকে আমার শেষ দিন।’
সেলিম আর এফ হোসেন চিঠিতে আরও লেখেন, ‘আপনাদের সঙ্গে প্রায় ১০ বছর ধরে কাজ করা আমার জন্য দারুণ সুযোগ ছিল, যখন আমরা একসঙ্গে অসাধারণ প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকিং শিল্পের জন্য রোল মডেল তৈরি করেছি। আমি আত্মবিশ্বাসী, ব্র্যাক ব্যাংক আমাদের অর্থনীতি এবং সাধারণ সমাজের জন্য আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে বড় হবে, এবং আপনারা প্রত্যেকে আগামী বছরগুলোতে ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে উন্নতি করবেন।’
এদিকে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মেহেরিয়ার এম হাসানও কর্মীদের উদ্দেশে একটি চিঠি দিয়েছেন। তাতে তিনি ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারেক রেফাত উল্লাহ খানকে ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আর রাহিকুল মাখতুম: এক আশ্চর্য সিরাতগ্রন্থ
রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর জীবনী প্রথম পড়েছিলাম অনেক ছোটবেলায়—সিরাতে ইবনে হিশাম’। কিছু বুঝিনি, মনেও নেই। এটা বইয়ের দোষ না। যে বয়সে পড়েছি, সেটা চাচা চৌধুরী পড়ার বয়স, তাই। এরপর পড়েছিলাম ‘রাসুলুল্লাহ (সা)–এর বিপ্লবী জীবন’, ‘মানবতার বন্ধু’। ভালো লেগেছে, আলাদা আলাদা ঘটনাগুলো মনে আসত। আর সেসবের পেছনের দর্শন। এরপর পেলাম সেই বইটা।
‘আর রাহিকুল মাখতুম’। সিলমোহরকৃত অমৃত। আল্লামা সফিউর রহমান মোবারকপুরীর লেখা। আমি পড়েছি ‘আল কোরআন একাডেমি’র অনুবাদটি। ভূমিকাটা ভালো লাগল, একটা সিরাত প্রতিযোগিতার জন্য তাড়াহুড়ো করে লেখা বই। শুরু করলাম পড়া।
আরও পড়ুন‘ইসলামি শাসনে’ নিজামুল মুলকের ব্যবস্থাপত্র২২ জুন ২০২৫সফিউর রহমান মোবারকপুরী (১৯৪৩–২০০৬)